ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

মৃতদেরও এত আয়!

তোফাজ্জল লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১০
মৃতদেরও এত আয়!

জীবিত মানুষ আয় করতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে মৃত তারকারা আয় করছেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। কথাটার সত্যতা পাওয়া যেতো না, যদি না মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’ প্রয়াত ১০০ তারকাদের সৃষ্টিকর্ম থেকে আয়ের একটি তালিকা করত।

এ তালিকা থেকে আমরা বেছে নিয়েছি আয়ে সর্বোচ্চ ১০ জনকে। এ দশজনের মাঝে তিন জন সঙ্গীতশিল্পী, চারজন গীতিকার-সাহিত্যিক, একজন খেলার ক্লাব মালিক, একজন কার্টুনিস্ট এবং একজন বিজ্ঞানী।

মাইকেল জ্যাকসন
গত এক বছরের আয়ে এ তালিকায় সবচে এগিয়ে আছেন পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন। মাইকেলের অকাল এবং রহস্যজনক মৃত্যুতে ভক্তরা বিমর্ষ হয়ে পড়লেও প্রিয় শিল্পীর সৃষ্টিকর্ম ক্রয়ে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছেন না তারা। দু হাতে কিনছেন জ্যাকসনের গানের অ্যালবাম, ভিডিও ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস। ভক্তদের কল্যাণে তাই আরেকটি রেকর্ডের মালিক হয়ে গেলেন পপসম্রাট। প্রয়াত তারকাদের মধ্যে এ বছর সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড এখন তার। এক বছরে তার সৃষ্টিকর্ম থেকে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এই পরিমাণটা আয়ে এগিয়ে আছেন এমন প্রয়াত ১৩ জনের চেয়েও মোট আয়ের সমান। ফোর্বসের লেখক লেইসি রোজ লিখেছেন, ভক্তরা নতুন করে তার গানের অ্যালবাম, ভিডিও ও অন্যান্য জিনিস কিনছেন। সবচেয়ে বেশি আয় করেছে তার ওপর নির্মিত সনি প্রযোজিত ছবি ‘দিজ ইজ ইট’।

এলভিস প্রিসলি
এ সঙ্গীতশিল্পী এবং অভিনেতা রয়েছেন তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪২ বছরে মারা যান তিনি। মৃত্যুর এত বছর পরও গত এক বছরে তার সৃষ্টিকর্ম থেকে আয় হয়েছে ৬ কোটি মার্কিন ডলার। এখনো এই ‘রক অ্যান্ড রোল’ সম্রাটের সিডি এবং ভিসিডি বিক্রি হয় দেদারসে। তার মুভির প্রদর্শনীও হয় প্রতিনিয়ত।

জে আর আর টলকিন
টলকিন এখনো হলিউডের আলোচনার বিষয়বস্তু। ‘লর্ড অব দ্য রিং’ তার আট বছর আগের একটি চলচ্চিত্রের নাম। এটি এখনো আগের মতো সমান জনপ্রিয়। তার বই ‘দ্য হবিট’ অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের অপেক্ষায় আছে নিউজিল্যান্ডে। ফোর্বসের লেখক নেলসেনের মতে, টলকিনের বই ৫ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে গত বছর। সব মিলিয়ে তিনি আয় করেছেন ৫ কোটি ডলার। ১৯৭৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি আলসারে আক্রান্ত হয়ে ৮১ বছর বয়সে মারা যান।  

চার্লস শুলজ
কোনও কার্টুনিস্ট যে এত টাকা আয় করতে পারেন তা চার্লসের আয় না দেখলে বোঝা যেত না। তিনি ৭৭ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা গেছেন ২০০০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। অথচ গত এক বছরে তার আয় ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তার কমিকস যেমন বিক্রি হয় সারা বিশ্বে, তেমনি তার কার্টুন ব্যবহার হয় ৭৫টি দেশের ২২০০ পত্রিকায়।

জন লেনন
৩০ বছর আগে এ সঙ্গীতশিল্পী খুন হন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। ইএমআই তার ‘জিমি সাম ট্রুথ’ প্রচার করছিল আর বারবার শেষ হয়ে যাচ্ছিল এর ক্যাসেটগুলো। তখন এটি বারবার টপ টেনের মধ্যেই ছিল। তিনি এখনো তার ‘বিটলস রক ব্যান্ড’ থেকে সমান হারে আয় করছেন। সাথে বিক্রি হচ্ছে তার ভিডিও। তিনি গত বছর আয় করেছেন ১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। তাকে হত্যা করা হয় ১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর।

স্টিগ লারসন
‘দ্য গার্ল উইথ ড্রাগন টাটু’ প্রকাশের আগেই লেখক মারা যান ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর। তাই তিনি দেখে যেতে পারেননি তার বইয়ের জনপ্রিয়তা। তার চারটি বই অনূদিত হয়েছে ৪৪টি ভাষায়। সারা বিশ্বে তার বই বিক্রি হয়েছে ৪ কোটিরও বেশি। সনি তার বই ‘দ্য গার্ল উইথ ড্রাগন টাটু’কে আমেরিকান ফিল্ম নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করছে। তিনি আয় করছেন ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ৫০ বছর বয়সে তিনি হৃদরোগে মারা যান।


ড. সিউস (থিওডর জিসেল)
ইতিহাসে যার শিশুতোষ বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে তার নাম ড. সিউস। তার নির্মিত চরিত্র হর্টন এবং গ্রিনচের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফোর্বসের লেখক নেলসেন জানান, গত বছর ড. সিউসের বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি। তিনি ১৯৯১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ৮৭ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেলেও গত বছর আয় করেছেন ১ কোটি ১০ লাখ ডলার।

আলবার্ট আইনস্টাইন
বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী বলে পরিচিত আলবার্ট আইনস্টাইন বার্ধ্যক্যের কারণে ৭৬ বছর বয়সে মারা যান ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল। মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি আয় করেছেন ১ কোটি ডলার। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং ফেইস ভেল্যুর কারণে তিনি এ অর্থ উপার্জন করছেন।

জর্জ স্টেইনব্রিনার
এর আগে কোনও খেলার কাবের মালিকের এত উপার্জন কেউ দেখেনি। এ তালিকায় যে এমন কেউ আসতে পারেন তাও ভাবেননি কেউ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্টেইনব্রিনার আছেন এ তালিকায়। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক ইয়াংকিস বস’ কাবের জয় এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনের তিনি। তিনি কাবের জন্য একটি স্টেডিয়াম কিনে কাবের তত্ত্বাবধান করেন। এ থেকেই তিনি গত বছর আয় করেছেন ৮০ লাখ ডলার। এ বছরের ১৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮০ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

রিচার্ড রডারস
২০০৯ সালে নেদারল্যান্ডসের ‘ইমাজিন মিউজিক গ্রুপ’ এই গীতিকারের মেধাস্বত্ব কিনে নেয় ২০ কোটি ডলারে। এ সম্পত্তি ছাড়াও তিনি আরেকটি কারণে আছেন মৃত ধনীদের তালিকায়। লোরেনজ হার্টের সাথে করা অনেক আগের কাজই তাকে এখানে রেখেছে। তার ‘মাই ফানি ভ্যালেনটাইন’ এবং ‘দ্য লেডি ইজ এ ট্রাম্প’ এখনো জনপ্রিয়। গত বছরে সব মিলিয়ে আয় করেন ৭০ লাখ ডলার। তিনি ১৯৭৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৭৭ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২০৫, অক্টোবর ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।