ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

কলকাতার দুর্গা পূজা

এবারের প্রধান থিম রবীন্দ্রনাথ

রক্তিম দাশ, কলকাতা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১০
এবারের প্রধান থিম রবীন্দ্রনাথ

শুরু হয়ে গেছে কলকাতার সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। আলোর বন্যায় ভাসছে শহর।



ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় ১৬১০ সালে ভারতের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির পূর্বপুরুষ বড়িশার সার্বণ চৌধুরীর জমিদারবাড়িতে প্রথম দুর্গা পূজা শুরু হয়। সেই পূজা আজও হয়ে চলেছে।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ীতে ১৭৮৪ সালে কবিগুরুর পূর্বপুরুষ নীলমণি ঠাকুর এই পূজা শুরু করেন। কিন্তু প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিলে ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের বছর এই পূজা বন্ধ হয়ে যায়।

কলকাতার জমিদারদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে প্রথম সার্বজনীন দুর্গা পূজা শুরু করে ১৯১০ সালে ধর্মত্বসানি সেবক সভা, কলকাতার ভবনীপুরে । একই বছরে রামধন মিত্র লেন ও শিকদার বাগানে শুরু হয় সার্বজনীন পূজা।

এরপরই কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে টালা থেকে টালিগঞ্জ সর্বত্র সার্বজনীন দুর্গা পূজা শুরু হয়।

১৯৯০ সালে কলকাতার পূজায় প্রবেশ করে বহুজাতিক সংস্থাগুলি। ওই বছর দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক পূজা কমিটির মণ্ডপ, প্রতিমা থেকে আলোকসজ্জা সবই স্পন্সর করে বহুজাতিক একটি সংস্থা। আর ওই বছর থেকেই কলকাতায় শুরু হয় কোনও একটি বিষয়কে থিম হিসেবে নিয়ে পূজামণ্ডপ তৈরি। একে একে কলকাতার পূজামণ্ডপগুলো হয়ে ওঠে থিমের পূজা। এসব থিমের মধ্যে আছে  মিশর, ইনকা সভ্যতা, টাইটানিক, হ্যারি পটার, টুইন টাওয়ার থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন মন্দির, রাজপ্রাসাদ আর বিশ্বের বিখ্যাত স্থাপনা।

ওই বছর থেকেই বাঁশ, দড়ি, রঙিন কাপড়ের মণ্ডপকে সরিয়ে মণ্ডপসজ্জায় চলে আসে ইট, পাথর, মাটির ভাঁড়, টিন, ককশিট, ব্লেড, থেকে গাঁজার কলকের ব্যবহার। এই সময় আরও একটি ঘটনা ঘটে। মণ্ডপসজ্জায় ডেকরেটর প্রতিষ্ঠানের জায়গায় কাজ শুরু করে আর্ট কলেজের একদল তরুণ। এতে শুধু মণ্ডপ নয়, প্রতিমার ক্ষেত্রেও বির্বতন দেখা দেয়। প্রতিমাশিল্পী কুমোর বা পালদের পেছনে ফেলে সামনে চলে আসেন আর্ট-কলেজের শিল্পী ভাস্কররা। এক অর্থে দুর্গা পূজা এই সময় থেকেই নতুন মাত্রার একটি শিল্পে রূপ নেয়। আর ওই বছর থেকেই শ্রেষ্ঠ মণ্ডপ, প্রতিমা ও পরিবেশের জন্য একটি বহুজাতিক রঙ সংস্থা নগদ অর্থমূল্যে ‘শারদ সম্মান’ নামে পুরস্কারও চালু করে।

পরের বছর থেকে আরও বেশ কটি বহুজাতিক সংস্থা, সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল পুরস্কার দেওয়া শুরু করে। শুরু হয় কলকাতার পূজা কমিটিগুলির পুরস্কার পাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা, যা আজও অব্যাহত আছে।

২০০০ সালে কলকাতার বোসপুকুরে চায়ের মাটির ভাঁড় দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন বন্দন রাহা। পূজা শেষ হওয়ার ১০ দিন পরও এই অভিনব মণ্ডপ দেখতে হাজারো মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এসে ভিড় করছিলেন। দাবি ওঠে মণ্ডপটি সংরক্ষণ করার। শেষে পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মণ্ডপ ভাঙ্গা হয়।

এবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ। তাই কলকাতার অধিকাংশ মণ্ডপেই কবিগুরুর ছোঁয়া। শান্তিনিকেতন থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি এমনকি সহজপাঠ কিছুই বাদ যাচ্ছে না এবারের থিমে।

থিমের পাশাপাশি রয়েছে পূজা উদ্বোধনের গ্ল্যামার। বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়াড়, বলিউড-টলিউডের চিত্রতারকা, পথশিশু, হিজড়া থেকে যৌনকর্মীরাও রয়েছেন পূজা উদ্বোধকের তালিকায়।

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়নন ১৩টি পূজা উদ্বোধন করেছেন। এরপরই আছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা ভারতের রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আর কলকাতার মেয়র শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এবার আবার কলকাতার বকুলবাগান পূজা কমিটি মমতার চিন্তায় প্রতিমা ও মণ্ডপ বানিয়ে চমক দিয়েছে। সুদূর ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে পূজা উদ্বোধনের জন্য উড়ে আসছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ভিভিয়ার রিচার্ডস।

পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল সিপিএম নেতারা যদিও এই পূজা উদ্বোধনের মাধ্যমে জনসংযোগ করেন না, তবে পূজোক কেন্দ্র করে কলকাতাসহ রাজ্যের সর্বত্র তারা মার্কসবাদী ও প্রগতিশীল বইয়ের স্টল করেন। ইদানীং তাদের দেখাদেখি অন্য দলগুলোও তাদের বইয়ের স্টল করছেন।

সব মিলিয়ে কলকাতার দুর্গা পূজা এখন একটি বড় শিল্প।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৩০, অক্টোবর ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad