ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

সুবীর নন্দীর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
সুবীর নন্দীর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি সুরের রাজপুত্র সুবীর নন্দী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর জন্মদিন ৩০ নভেম্বর। ১৯৫৩ সালের এদিনেই তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সিলেট জেলার হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তার স্মৃতিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিল্পী ও সংগীতপ্রেমীরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন তাকে। 

চলতি বছরের ৭ মে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সুরের রাজপুত্র সুবীর নন্দী। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার চার দশকের সংগীত সাধনায় আড়াই হাজারের বেশি গান উপহার দিয়েছেন।

সুবীর নন্দীর ডাক নাম বাচ্চু। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের নন্দীপাড়া মহল্লায় তার জন্ম। পারিবারিকভাবেই তিনি সাংস্কৃতিক আবহে বড় হন। তার পিতা সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সংগীতপ্রেমী। তার মা পুতুল রানীও গান গাইতেন। ছোটবেলা থেকেই সুবীর ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সংগীতে হাতেখড়ি তার মায়ের কাছেই।  

বাবার চাকরিসূত্রে সুবীরের শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিজের একটি বিদ্যালয় ছিল, সেখানেই পড়াশুনা করেন। তবে পড়াশুনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। হবিগঞ্জ শহরে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানে থাকতেন। পড়েছেন হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। তারপর বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন।

১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে থাকতেই তিনি গান শুরু করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে তার গুরু ছিলেন বিদিতলাল দাশ। সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান 'যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়'-এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম।  

বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে তিনি গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ সিনেমায়। ১৯৭৮ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অশিক্ষিত’ সিনেমায় রাজ্জাকের ঠোঁটে তার গাওয়া ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।  

১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। এছাড়া তার ‘প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘ভালোবাসা কখনো মরে না’, ‘সুরের ভুবনে’, ‘গানের সুরে আমায় পাবে’ (২০১৫) প্রকাশিত হয় এবং ‘প্রণামাঞ্জলি’ নামে একটি ভক্তিমূলক গানের অ্যালবামও প্রকাশিত হয়।

শেষ দিকে দীর্ঘদিন ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী। ২০১৯ সালের ১৪ই এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ৩০ এপ্রিল তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৫ ও ৬ মে পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাকের পর তিনি ৭ মে ৬৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মূলত চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন সুবীর নন্দী। চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ সংগীত যোজনার স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন সময়ে তিনি মোট পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এই সিনেমাগুলো হলো- মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও মহুয়া সুন্দরী (২০১৫)।  

সংগীতে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে।

চলচ্চিত্রে সুবীর নন্দীর গাওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান হলো- ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’।  

সুবীর নন্দীর সেরা কিছু গান:

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad