ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

ভালো গল্পই পারে নাটকের সুদিন ফেরাতে: আকাশ রঞ্জন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
ভালো গল্পই পারে নাটকের সুদিন ফেরাতে: আকাশ রঞ্জন আকাশ রঞ্জন

সময়ের আলোচিত নাট্যকার আকাশ রঞ্জন। জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শৈশব কাটে তার। এরপর ঢাকার সরকারি বাংলা কলেজে লেখাপড়া করার সময় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলা কলেজ যুব থিয়েটার’। সেখান থেকেই তার মিডিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন বুনা শুরু। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১০০টি নাটক রচনা, প্রায় ২০টি নাটক পরিচালনা এবং বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেছেন। আলোচিত দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘নোয়াশাল’ এবং ‘রসের হাড়ি’ও রচনা করেছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের ব্যস্ততা এবং নাটকের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় তার সঙ্গে । 

বাংলানিউজ: ঈদ মোবারক।  
আকাশ রঞ্জন: ধন্যবাদ, ঈদ মোবারক।

 

বাংলানিউজ: ঈদে আপনার কাজ সম্পর্কে বলুন।  
আকাশ রঞ্জন: এই ঈদে আমার দুটি নাটক টেলিভিশনে গেছে। একটি ‘ভাবীর দোকনা-২’ এবং অপরটি ‘ব্যক্তিত্ব বাবুল’। টিপু আলম মিলনের গল্প এবং আমার রচনা ও পরিচালনায় ‘ভাবীর দোকান-২’তে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, নাজিরা মৌ, রাশেদ সীমান্ত, রিমি করিম’সহ অনেকে। নাটকটি ঈদের দিন রাত ৮টা ১০ মিনিটে বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচার হয়। আমার রচনা এবং সকাল আহমেদের পরিচালনায় নাটক ‘ব্যক্তিত্ব বাবুল’। এতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল মাহমুদ ও মম। এটি ঈদের প্রথম দিন আরটিভিতে প্রচার হয়।  

বাংলানিউজ: মিডিয়ার শুরুটা কীভাবে?
আকাশ রঞ্জন: বাংলা কলেজে পড়ার সময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী ভাইয়ের সহযোগীতায় ‘বাংলা কলেজ যুব থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করি। এরপর অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির ভাইয়ের সহযোগীতায় লেখালেখি এবং চিত্রনায়িকা কবরী আপার সহযোগীতায় পরিচালনা শুরু করি।   

বাংলানিউজ: আপনি একজন লেখক, পরিচালক এবং অভিনেতা। তো, তিনটির মধ্যে নিজেকে কোনটাতে বেশি নম্বর দিবেন? 
আকাশ রঞ্জন: অবশ্যই লেখক। আমার লেখা বেশিরভাগ নাটকই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি লেখাটাকে পেশা হিসেবে ভাবি। আর অভিনয় হচ্ছে আমার নেশা। তবে আমি কিন্তু পরিচালনা শুরু করেছি অনেক পরিচালকদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে। তারা গল্পটা নিয়ে এমনভাবে কাটাছেড়া করে যে আমার লেখা গল্পটা আর আমার থাকে না। কিছু কিছু গল্প হয়ে যায় অখাদ্য। অনেক সময় গল্পে আমি যে বার্তা দেই সেটাকে ফুটিয়ে তোলা হয় না।

আকাশ রঞ্জনবাংলানিউজ: তাহলে আপনার কথায় স্পষ্ট যে, পরিচালক এবং লেখকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে?
আকাশ রঞ্জন: চরমভাবে। আমি মনে করি লেখক এবং পরিচালকের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে কখনোই একটা নাটক দর্শকের কাছে উপভোগ্য হবে না। বর্তমানে  সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্কের বড় অভাব। এজন্য বাণিজ্যও দায়ী। শিল্পকর্মটা এখন ব্যবসায়ে রূপ নিয়েছে। অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে কারো মধ্যেই এখন শৈল্পিক মন-মানসিকতা নেই। অর্থকেই সবাই প্রাধান্য দিচ্ছেন।  

বাংলানিউজ: টেলিভিশন নাকি ইউটিউব, কোথায় বেশি দর্শক সাড়া পান?
আকাশ রঞ্জন: টেলিভিশন এবং ইউটিউব দু্ইটার রেসপন্সই আলাদাভাবে আসে। যে নাটকগুলো টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার পর ইউটিউবে আসে সেগুলোই বেশি ভিউ হয়। তাই নাটকে টেলিভিশনের গুরুত্ব অনেক।  

বাংলানিউজ: বাংলা নাটকের দর্শক কেমন?
আকাশ রঞ্জন: এক ঘণ্টার নাটকে আমরাই সেরা। প্রচুর দর্শক এই নাটকগুলো দেখে। টেলিভিশন বলেন আর ইউটিউব বলেন, আমরা এক ঘণ্টার নাটকেই বেশি সমাদৃত। কিন্তু ধারাবাহিকে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি।  

বাংলানিউজ: এর কারণ কী?
আকাশ রঞ্জন: কারণ ধারাবাহিক নাটকে গল্প বলার ধরন এবং অভিনয়ের ধরনের বড় অভাব। ধারাবাহিকে গল্প এবং অভিনয় সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে। তা না হলে দর্শক ধরে রাখা সম্ভব হবে না। যারা ধারাবাহিকে অভিনয় করবে সেইসব অভিনয় শিল্পীদের আলাদা করা উচিত। কারণ আমাদের অভিনয়শিল্পীদের একক নাটকের প্রতি দূর্বলতা থাকায় ধারাবাহিকে ঠিকমত সিডিউল দিতে চায় না। ফলে গল্পেরও পরিবর্তন করতে হয়।   

বাংলানিউজ: আপনি বর্তমান সময়ের আলোচিত তারকাদের নিয়ে কাজ করেন না কেন?
আকাশ রঞ্জন: আমি বিশ্বাস করি তারকা নয়, ভালো গল্পই পারে নাটকের সুদিন ফেরাতে। যারা তারকার উপর নির্ভর করে নাটক পরিচালনা করেন, তাদের পরিচালনা না করাই ভালো। আমার গল্পের প্রয়োজনে যাকে লাগবে, যে ভালো অভিনয় করে, গল্পটাকে সমৃদ্ধ করবে- আমি তাকেই নেবো। কিন্তু অনেকের লক্ষ হয়ে যায় অমুক সুপার স্টারকে লাগবেই, না হলে আমার গল্প থাকবে না। এই ভাবনাটা এক প্রকার পরিচালকের ব্যর্থতা।  
 
বাংলানিউজ: কিন্তু অনেক চ্যানেল তো শিল্পীদের নাম ঠিক করে দিচ্ছে, এখানে পরিচালকদেরই বা কী করার আছে?
আকাশ রঞ্জন: বিষয়টা ঠিক। এক্ষেত্রে আমার গল্পের জোরের কারণে আমি এই ধরনের সমস্যার মুখাপেক্ষী কম হয়েছি। যখন আমাকে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আমি চ্যানেলকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি গল্পটার জন্য তারকা নয়, ভালো অভিনয় শিল্পী দরকার। এজন্য চ্যানেলগুলোকেও ধন্যবাদ দিব। যদি তারা মেনে না নিতেন, তাহলে আমি অনেক আগেই মিডিয়া ছেড়ে চলে যেতাম।  

বাংলানিউজ: যারা নাটক লেখাটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারা কেমন আছেন বলে আপনার মনে হয়?
আকাশ রঞ্জন: আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ১০% রাইটার মোটামুটি ভালো আছেন। তারকানির্ভর নাটক হলে গল্পের গুরুত্ব থাকে না। তাই বাকিদের ভালো না থাকার এইটাও একটা বড় অন্তরায়।

বাংলানিউজ: তাহলে আপনি কাকে দায়ী করবেন?
আকাশ রঞ্জন: আমি বলবো সিস্টেমের। দেখেন, ভারতের যেসব নাটক সুপার হিট হয়েছে, সেসব নাটকের অভিনয়শিল্পীদের কিন্তু পরবর্তীতে ওভাবে আর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু আমাদের এখানে একটা নাটক বা বিজ্ঞাপন হিট হলেই ওই শিল্পীর গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চ্যানেলগুলোও তখন তাকেই চায়। আর এতে করে নাটকের বাজেটের বেশিরভাগই ওই তারকারা নেওয়ার সুযোগ পায়। এজন্য তারকা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের নাটকে গল্পের জয় হবে। তখন মানুষ আরো বেশি বেশি আমাদের নাটক দেখবে।  

বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।  
আকাশ রঞ্জন: আপনাকেও ধন্যবাদ। সেইসঙ্গে বাংলানিউজের সব পাঠকদেরও ধন্যবাদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এমআরএ/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।