ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশালে নির্মিত হচ্ছে নাটক-টেলিফিল্ম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
বরিশালে নির্মিত হচ্ছে নাটক-টেলিফিল্ম 'দ্যা লাইফ'র শর্টফিল্মের একাংশে সুস্মিতা সিনহা।

বরিশাল: ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ধান, নদী ও খালের বরিশাল। স্রোতস্বিনী নদী-খাল, সেই নদী-খালের ওপর ধান-চালেরসহ নানান পণ্যের ভাটমান হাট-বাজার এখনো বরিশালের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের শহুরে জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও ঐতিহ্যেও ভাটা পরেনি এখনো।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের বরিশালে সংস্কৃতিচর্চা, বিশেষ করে যাত্রা ও মঞ্চ নাটকের চর্চা চলে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে। বরিশালের মাটি ও মানুষের কথা বলা যাত্রা, জারি গান, মঞ্চ নাটক সে-কাল থেকে আজ অব্দি মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

ধারাবাহিকতায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বরিশালের নাটক হচ্ছে ক্যামেরাবন্দি। টেলিভিশনের পাশাপাশি ইন্টারনেটের যুগে তা ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্বে।

ঢাকায় নয় পারিবারিক, সামাজিক ও রোমাঞ্চকর জীবনকাহিনী নিয়ে বরিশালে তৈরি হচ্ছে একের পর এক নাটক ও টেলিফিল্ম। এর কয়েকটি ইতোমধ্যে দেশের জনপ্রিয় বেশকিছু টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। আবার কিছু হয়েছে ইউটিউব চ্যানেলেও। এসব নাটক শুধু বরিশালের সন্তানরাই নয় অভিনয়ের জন্য দক্ষিণের এই জনপদে ছুটে এসেছেন দেশবরেণ্য অনেক অভিনয়শিল্পী।

তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকটা শঙ্কায় রয়েছেন বরিশালের পরিচালক ও প্রযোজকরা। আবার জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এরমধ্যেও একের পর এক নাটক-শর্টফিল্ম, টেলিফল্ম তৈরি করে যাচ্ছেন অনেকে।

সম্প্রতি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় চিত্রায়িত হয়েছে শর্ট ফিল্ম 'ওল্ড ফাদার' ও ‌'দ্যা লাইফ'। অগ্রগামী প্রডাকশন হাউজ নির্মিত রেইন ফিল্মের 'ওল্ড ফাদার' নামক শর্ট ফিল্মটি আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে অফিসিয়াল মুক্তি পাবে। যেখানে দেখা যাবে বাবা তার জীবনের পুরোটা দিয়ে ছেলেকে মানুষ করেছেন আর বৃদ্ধ বয়সে অসহায় বাবার ওপর ছেলে ও পুত্রবধূর অসম্মান-অবহেলার দৃশ্য। 'ওল্ড ফাদার'র কয়েকদিন পরেই মুক্তি পাবে দ্যা লাইফ নামের শর্টফিল্মটি।

এদিকে বরিশাল-ভোলার সংযোগস্থল লাহারহাটে চিত্রায়িত হওয়া অপর একটি টেলিফিল্ম ‘দেহতরী’ও রয়েছে টেলিভিশন চ্যানেলে মুক্তির অপেক্ষায়। 'ওল্ড ফাদার'  ও 'দ্যা লাইফ' শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন দিপক কর্মকার, ওয়াসিম যুবরাজ, তাবাচ্ছুম মিথিলা, রক্তিম হাসান অমিত, রসুল রিফাত, আজিম হোসেনসহ একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী। শর্ট ফিল্ম 'ওল্ড ফাদার' একাংশ। এছাড়া দেহতরী টেলিফিল্ম-এ অভিনয় করেছেন দেশবরেণ্য অভিনেতা মামুনুর রশীদ, রওনক হাসান ও অভিনেত্রী শশীসহ বরিশালের গোলাম মোস্তফা, সুকান্ত মুখার্জী বাবু, মিন্টু কর, সাদিয়া, হুমায়ুন কবির, জুয়েল মাহামুদ, আজিম, বিশু ঘোষ বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী।

টেলিফিল্মটিতে আট মাস ইলিশ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের সামাজিকতা ও সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। এতে জেলের ভূমিকায় আছেন অভিনেতা রওনক হাসান আর মানতা সম্প্রদায়ের এক তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শশী।

তবে এর আগে বরিশালের পরিচালক ও প্রযোজক দ্বারা নির্মিত এবং বরিশালেই চিত্রায়িত নাটক ‌'অপেক্ষা এবং বাকী সব গল্প' প্রচারিত হয়েছে আরটিভিতে। যেখানে মূল অভিনয়ের ভূমিকায় ছিলেন ফারহান আহমেদ জোভান ও উর্মিলা শ্রাবন্তী কর।

'ওল্ড ফাদার'র পরিচালক সুব্রত সঞ্জীব এ পর্যন্ত ৩টি টেলিফিল্ম, দু'টি শর্টফিল্ম ও দু'টি নাটক নির্মাণ করেছেন বলে জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বরিশালের অনেকেই নাটক-টেলিফিল্ম তৈরি করছে, তবে বরিশালে ঢাকা থেকে শিল্পী এনে শুটিং করাটা আসলেই ব্যয়বহুল। তবে বরিশালে ভালো মানের অভিনয় শিল্পী রয়েছে। যারা ঢাকার শিল্পীদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করার চেষ্টা করছেন। আবার এখানে ঢাকার সমমানের ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। সাধারণ মানুষও কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা বরিশালে শুটিং'র জন্য অফুরন্ত জায়গা রয়েছে। প্রচুর ইতিহাস ও ভালো গল্প রয়েছে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সঠিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দর্শকদের আরো ভালো মানের নাটক আমরা বরিশাল থেকে উপহার দিতে পারব।

শখ থেকে অভিনয়ে যুক্ত হওয়া আমিনুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ঢাকার শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করাটা অনেকেই স্বপ্ন ও কষ্টের ভাবেন। কিন্তু আমাদের বরিশালের অনেক অভিনেতা রয়েছেন। তারা ঢাকার শিল্পীদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করেছেন। আর ঢাকার শিল্পীরাও কোনো সমস্যার কথা বলেননি।

তিনি বলেন, সবসময় আমরা দেখি বরিশালের ভাষা ও সংস্কৃতি ব্যবহার করে ঢাকার উত্তরা, নয়তো দিয়াবাড়ি, নয়তো ঢাকার আশপাশের গ্রামীণ কোনো লোকেশনে নাটক-টেলিফিল্ম তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তার অনুকূলে বরিশালে নাটক তৈরির উদ্যোগটা ভালো। এতে যেমন স্থানীয়ভাবে নতুন অভিনেতা তৈরি হচ্ছে। তেমনি পরিচালক ও প্রযোজকদের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তবে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়লে কাজের মান আরো ভালো হবে।

বরিশালের ২৭টি সংগঠনের জোট সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, নাটক, যাত্রাপালা, জারিগানের জন্য এ অঞ্চল সমাদৃত ছিল। অপসংস্কৃতির কারণে গোটা দেশে যাত্রাপালা পিছিয়ে পড়লেও বহু আগ থেকেই বরিশালের নাট্যাঙ্গন ছিল সুদূর প্রসারিত।

বরিশালের গুনাইবিবি, মনোষামঙ্গল, হয়লা, কবিগান, জারিগান নিয়ে স্ক্রিপ্ট যেমন তৈরি করা যায়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিজরিত বাংকার, বদ্যভূমি পাশাপাশি আটঘরের পেয়ারা বাগান, খাল-নদী নিয়েও স্ক্রিপ্ট তৈরি করা সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম নাটক নির্মাণে এগিয়ে আসছে, এটা ভালো দিক। তবে অপসংস্কৃতি বাদ দিয়ে দেশের মানুষ, নতুন প্রজন্মকে সচেতন করার মতো উদ্যোগ থাকাটা প্রয়োজন। প্রয়োজন বরিশালের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।