ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

জেমসের সুরলহরীতে মোহিত লাখো দর্শক 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
জেমসের সুরলহরীতে মোহিত লাখো দর্শক  মঞ্চ মাতালেন জেমস। ছবি: অনিক খান/বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: একে একে সাতটি গানে সুরের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে লালন ব্যান্ড নেমে যাবার পরই আলো-আঁধারির আকর্ষণীয় মঞ্চে অনেকটাই নিঃশব্দে আগমন ঘটলো নগর বাউলের। মুখে কোনো কথা নেই। 

নিজের ঠোঁটের কাছে হাত নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে ভালোবাসা শূন্যে ভাসিয়ে দিলেন কোঁকড়ানো চুলের এ রকস্টার। ভক্তদের কাছে এ ‘গুরু’ অতঃপর কাঁধে ঝুলিয়ে নিলেন গিটার।

 

কালো টি-শার্টের সঙ্গে পছন্দের জিন্স প্যান্ট আর মুখায়বে কাঠিন্য ভাব নিয়ে মাইকে উচ্চারণ করলেন ‘এলো এলো, আই লাভ ইউ। ’ 

গিটারের ‘টুংটাং’ শব্দে সুর তুলেই গাইতে শুরু করলেন ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিও না’। মায়াবী সুরের এমন মুর্ছনা যেন ছড়িয়ে পড়লো ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোনায়। উন্মাতাল হয়ে পড়লো স্টেডিয়ামের গোটা গ্যালারি।  

কণ্ঠের জাদুকরী স্পর্শে প্রায় লাখো দর্শকের মন মাতিয়ে উচ্ছ্বল তারুণ্যের হৃদয় হরণ করতে বিরতিহীনভাবে গাইতে থাকলেন ‘লেইস ফিতা লেইস, গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া, দুষ্ট ছেলের দল, ওহ! বিজলী চলে যেও না, সুলতানা বিবিয়ানা’।

যে গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে শৈশবেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, সেই জেমস গিটারের ছন্দে ভাসিয়ে গেয়ে চললেন, ‘কোথায় আছে কেমন আছে মা, আসবার কালে আসলাম একা, আমি তারায় তারায় রটিয়ে দিবো, মীরাবাঈ, পাগলা হাওয়ার তরে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো।

এতো বছর পরও আজো কী অদ্ভূত মাদকতা গানগুলোতে! হারায়নি এতটুকুন আবেদন। কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়ামের শ্রোতারা মগ্ন হয়েই যেন রকস্টারের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়েছেন, দুলাচ্ছেন মাথাও। এ এক অভাবনীয় দৃশ্য।

সুরের সাগরে হাবুডুবু দর্শকরা খেই হারিয়ে হঠাৎ ভেঙে ফেললেন ব্যারিকেড’র প্রাচীর ‘বাঁশ’। পুলিশের কোনো বাঁধাই যেন তারা মানছিলেন না।

উপস্থাপিকা তানিয়া হোসেন বারবার সতর্ক করছিলেন। নগর বাউলও অনুরোধের সুরেই বলছিলেন, ‘প্রাণখুলে আনন্দ করুন। তবে এ আনন্দ যেন পাশের মানুষের বেদনার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। ’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! 

ময়মনসিংহে কনসার্টে দর্শকদের একাংশ।  ছবি: অনিক খান/বাংলানিউজ

বাংলা গানে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া নগর বাউল যখন ভারতীয় উপমহাদেশে নিজের জাত চেনাতে ‘ভিগি ভিগি’ গান গেয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনই বিদায়ের করুণ সুর ছড়ালেন এ গানেই।  

বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সুরের নানা রঙ ছড়িয়ে মঞ্চে নিজের ইতি টানলেন তারুণ্যের এ ‘আইকন’।  

জীবনের সেরা এসব গানের মায়ায় মোহাবিষ্ট স্টেডিয়ামটির অন্ধকার গ্যালারিতে তখন শুধুই মোবাইলের আলো’র বিচ্ছুরণ। বিদায় লগ্নে নগর বাউল ভরাট কণ্ঠে শুনিয়ে গেলেন নিজের সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘তোমরা আমার জান, তোমরা আমার গান। আবারো দেখা হবে যদি থাকি এক পথে। ’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ কনসার্টটিতে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলেই প্রায় এক যুগ পর ময়মনসিংহে আসেন নগর বাউল ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট মাহফুজ আনাম, যাকে মানুষ জেমস বলেই জানে

এর আগে ২০০৬ সালে নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে দর্শকদের মাতিয়েছিলেন নগর বাউল। এরপর দীর্ঘ বিরতি। রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে মুগ্ধতার রেশ ছড়ানো এ কনসার্ট শুরু হয় বিকেলে।  

প্রথমে ময়মনসিংহের স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এরই ফাঁকে ফাঁকে চলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রামাণ্যচিত্র। সন্ধ্যার পরপরই স্টেডিয়ামটিতে যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।  

মাগরিবের নামাজের পরই মঞ্চে আসে লালন ব্যান্ড। ‘এ শহর এলোমেলো’ দিয়ে শুরু করে ‘সময় গেলে সাধন হবে না, আমি অপার হয়ে বসে আছি, আর কী হবে মানব জনম, এক চোখেতে হাছন, কেউ বলে ভগবান, পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’ গান শুনিয়ে দর্শকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়ান ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুমি ও তার সঙ্গীরা।  

মঞ্চে লালনের প্রস্থানের পর পরই উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী তানিয়া হোসেন দর্শকদের আগ্রহ ও উন্মাদনার মাত্রা বাড়িয়ে দিতেই বললেন, ভিআইপি গেট থেকে বর্ণিল আতশবাজি শুরু হবে। উপস্থাপিকার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সবার চোখ সে দিকটায়।  

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বর্ণিল আশতবাজির এ স্মৃতি যেন বহাল থাকবে চিরকাল। স্মৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে উচ্ছ্বসিত দর্শকরা মোবাইল ফোনে ভিডিও ও ছবি তুলে রাখার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেন।  

শেষতক চিরকুট ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়েই শেষ হলো উপভোগ্যকর এ কনসার্ট। নিজেদের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন ‘চিরকুটে’র সুমী।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।