ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

সমরজিৎ

শাস্ত্রীয় সংগীতে গুরু নির্বাচন, নিয়মিত চর্চাই মূল

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩১ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
শাস্ত্রীয় সংগীতে গুরু নির্বাচন, নিয়মিত চর্চাই মূল সমরজিৎ রায়

চট্টগ্রাম: শাস্ত্রীয় সংগীতে সঠিক গুরু নির্বাচন ও নিয়মিত চর্চাই মূলমন্ত্র বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ভারত ও বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী সমরজিৎ রায়। শনিবার (২৭ মে) একান্ত আলাপচারিতায় ভারত ও বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী সমরজিৎ রায় বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

সমগ্র ভারতের গান্ধর্ভ মহাবিদ্যালয়ের সংগীত বিশারদ পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী শিল্পী সমরজিৎ বলেন, ‘সঙ্গীত পুরোপুরি গুরুমূখী বিদ্যা।  তাই সংগীতে যে শিক্ষার্থীরা রয়েছে, তাদের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন শুরুতেই সঠিক গুরু নির্বাচন করে এবং তাঁর কাছ থেকে একনিষ্ঠভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে একান্ত নিষ্ঠা ও ধৈর্য্যের সঙ্গে নিয়মিতভাবে সাধনা চালিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের এবং ভারতের প্রখ্যাত গুরুদের সহযোগিতায় এই দেশের মেধাবী সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ সঙ্গীত শিক্ষার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন সেটা সত্যি অনেক বেশি আনন্দের।  আমার বিশ্বাস বাংলাদেশে শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রসার আরো বিস্তৃত হবে। ’

দেশের সংগীতাঙ্গনকে এগিয়ে নিতে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সমরজি‍ৎ বলেন, ‘সারাদেশের মেধাবী, সংগীতে একনিষ্ঠভাবে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গিত করছে, সেইসব কিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে সঠিক পদ্বতিতে সঙ্গীত শিক্ষার কাজটি শুরু করতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে দেশে শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সেটি চট্টগ্রামেও হতে পারে। ’

‘চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় আমার বাড়ি। সংগীতাঙ্গনে আমার বেড়ে ওঠা ভারতে হলেও হাতেকড়ি এ চট্টগ্রামেই। আমার দায়িত্ববোধ আছে। শুদ্ধ সংগীতের ধারাকে অধিকতরভাবে তরান্বিত করতে আমি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সংগীতে চর্চার কোন বিকল্প নেই। ভারতেও আমার শিষ্য-প্রশিষ্য রয়েছে। তেমনি বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চাকে আরো বেগবান করতে শাস্ত্রীয় সংগীত স্কুল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সকলের সহযোগিতা আমাকে প্রাণিত করবে। ’

সমরজিৎ ভারত এবং বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের একটি জনপ্রিয় নাম।  কক্সবাজারের চকরিয়ায় তাঁর জন্ম।  ২০০০ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে দিল্লীতে সঙ্গীতের উপর পড়াশোনা করতে যান।  সেখানে গান্ধর্ভ মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নেন।  সঙ্গীত বিশারদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় সারা ভারতবর্ষে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি।

পড়াশোনা শেষ করে সমরজিৎ প্রায় ১১ বছর দিল্লীর গান্ধর্ভ মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।  এসময় পণ্ডিত ডিবি পলুস্কর অ্যাওয়ার্ড, হরি ওম ট্রাস্ট অ্যাওয়ার্ড, সঙ্গীতা বসন্ত বেন্দ্রে অ্যাওয়ার্ড, বাসুদেব চিন্তামন বাগমারে অ্যাওয়ার্ড, নলিনী প্রতাপ কানবিন্দে অ্যাওয়ার্ড, সুশীলা অ্যাওয়ার্ড, সুখবর্ষা রায় অ্যাওয়ার্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড পান।  সমরজিৎ চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সঙ্গীত গুরু নির্মলেন্দু চৌধুরী,ভারতের প্রখ্যাত গুরু পদ্মশ্রী পণ্ডিত মধুপ মুদ্গল এবং পদ্মশ্রী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন।

কিংবদন্তী শিল্পী মান্না দে, মৃণাল চক্রবর্তী, অনুপ জলোটা, পণ্ডিত যশরাজ, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, ওস্তাদ জাকির হোসেন, জগজিৎ সিং, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, অনুরাধা পাড়োয়াল, হরিহরণ,কুমার শানু, নির্মলা মিশ্র, অজয় দাস, বটকৃষ্ণ দে, শ্রাবন্তী মজুমদারের সাথে একান্ত সান্নিধ্য এবং গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।  দিল্লীতে গfন্ধর্ভ কয়ারের সদস্য হিসেবে বেলজিয়ামের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ইউরোপের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ডির্ক ব্রুসির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয় তাঁর।  

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এপিজে আব্দুল কালাম আজাদের আমন্ত্রণে ৩ বার রাষ্ট্রপতি ভবনে মধ্যাহ্নভোজন এবং সঙ্গীত আসরে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় সমরজিতের।  দিল্লীতে সমরজিতের অন্যতম শিষ্যদের নিয়ে গঠিত গ্রুফ ‘রাগিণী’ ভারতে সুনাম অর্জন করেছে।  ভারতের মৈথিলী ভাষার ছবি ‘মুখিয়া জী’তে সমরজিৎ প্রথম প্লে-ব্যাক করেন।

ভারত, বাংলাদেশ, জার্মানী, বেলজিয়ামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন টিভিতে সংগীত পরিবেশন করে ইতোমধ্যে শ্রোতা ও সংগীতপ্রেমীদের মন জয় করেছেন।  ২০১৬ সালে ভূষিত হয়েছেন লাক্স আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা।  

বাংলা ও হিন্দী মিলে ইতোমধ্যে ৭টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে সমরজিতের। এরমধ্যে এটিএন মিউজিকের ব্যানারে ভজন সম্রাট অনুপ জলোটার সাথে প্রথম বাংলা দ্বৈত অ্যালবাম ‘অচেনা একটা দিন’ (২০০৯),ভারতের মিস্টিকা মিউজিকের ব্যানারে প্রথম হিন্দী অ্যালবাম ‘তেরা তসব্বুর’ (২০১০)। যেটি ২০১১ সালে ভারতের জিমা অ্যাওয়ার্ডের জন্য ‘সেরা জনপ্রিয় অ্যালবাম’ হিসেবে মনোনয়ন পায়।  এছাড়াও ‘রবি রঞ্জনী’ (২০১১), ‘প্রতিধ্বনি’ (২০১৪), ‘ফিকর’ (২০১৫), ‘গোধূলিবেলা’ (২০১৬)।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭

এসবি/টিসি   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।