ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

কেমন হলো ঈদের ছবি (২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৬
কেমন হলো ঈদের ছবি (২)

আগের প্রতিবেদন

বাদশা-দ্য ডন

টালিগঞ্জের জনপ্রিয় নায়ক জিৎ যেমন এবারের ঈদে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘বাদশা-দ্য ডন’-এ।

সত্যি বলতে, জিতের অভিনয় কিংবা নাচের ভক্ত আমি কখনও ছিলাম না। তবে এটি নির্দ্বিধায় বলবো, ছবিটিতে জিৎ ‘পয়সা উসুল’ অভিনয় করেছেন। বলাকার মতো প্রেক্ষাগৃহে এর আগে কখনও টিকেট কালোবাজারীদের হাতে যেতে দেখিনি। ‘বাদশা’র টিকিট ৫০০-৮০০ টাকায়ও বিক্রি করেছেন তারা। মুক্তির তৃতীয় দিন দর্শকের লম্বা লাইন নীলক্ষেত পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো। বারবার বন্ধুদের প্রশ্ন করছিলাম, জিতের এতো ভক্ত কেনো?

কেনো’র উত্তর পেলাম ছবি দেখতে গিয়ে। একজন সাধারণ দর্শক টিকিট কেটে যে ধরনের ছবি দেখতে চায়, ‘বাদশা’ ঠিক সেরকম ছবি। এ গল্পে অ্যাকশন, রোম্যান্স, কমেডি, সেন্টিমেন্ট- সবই আছে। যদিও এ ক্ষেত্রে পুরো কৃতিত্ব গোপিচান্দ মালিনিনি’র। তারই লেখা ও পরিচালনায় ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া তেলেগু ছবি ‘ডন সিনু’র রিমেকই হলো ‘বাদশা’। ‘শিকারি’র মতো এ ছবির শুরুতেও ধাক্কা খেয়েছি। রাজেশ কুমার এবং আব্দুল আজিজ নাকি এ ছবিরও পরিচালক! বিচিত্র এ অভিজ্ঞতা পার করে ছবি দেখতে বসি। ‘শিকারি’র মতো বাদশা’য়ও গানের পরিমাণ খুবই কম- মাত্র তিনটি। তবে তিনটি গান নিয়েই ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রশ্ন আর আক্ষেপ আছে।

বাংলা ছবিতে ‘পিয়া তোরে বিনা জিয়া যায়ে না’ এ ধরনের হিন্দি কথা কিংবা ‘তোকে আমি আজ, করবো নিয়ে রাজ/রানী করে রাখবো তোকে রাজি হয়ে যা না’- এ ধরনের ‘তুই তোকারি’ শুনতে ভালো লাগে না। তাছাড়া ‘ধ্যাত তেরি কি’ গানের ব্যবহারও যথাযথ সময়ে হয়নি বলেই মনে হয়েছে। এ গানটি ব্যবহারের সিকোয়েন্স আরও আগেই অনেকবার তৈরি হয়েছিলো, কিন্তু যে সময় এই জনপ্রিয় গানটি ব্যবহার হয়েছে, তখন দর্শক গান নয়, গল্পের শেষটা জানার জন্য ব্যস্ত। ঈদের ছবিতে ঈদের গানের সংযুক্তি ছবিতে বাড়তি বিনোদন যোগ করেছে সন্দেহ নেই, তবে ‘ঈদ ঈদ ঈদ এসেছে’ গানের চিত্রধারণ পুরোটাই ‘তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে’ এবং ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির সালমান খান অভিনীত গানের বাংলা সংস্করণ। এমনকি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির মতো করে জিতও কাছাকাছি রঙের কাবলি পড়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দেখতে দৃষ্টিকটু লেগেছে।

অনুপ্রেরণা থাকতেই পারে, যেমন ছবির নায়িকা নুসরাত ফারিয়াও অনুপ্রাণিত হয়েছেন ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ ছবির কারিনা কাপুর অভিনীত ‘পূজা’ চরিত্র থেকে। এটি ফারিয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেছেন। নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে এটুকুই বলবো, অভিনয় জীবনের তৃতীয় ছবিতেই তিনি বুঝিয়েছেন, ওপার বাংলার যে কোনো নায়িকার চেয়ে তিনি এগিয়ে আছেন। অন্তত নাচ এবং গ্ল্যামারের দিক দিয়ে পুরোপুরি ‘ফিল্মি’ হতে পেরেছেন ফারিয়া। একটাই সমস্যা, ছবিতে আরও একজন নায়িকা আছেন- শ্রদ্ধা দাস। তিনি উচ্চতায় ফারিয়ার চেয়ে লম্বা। ফারিয়া এবং শ্রদ্ধা দাস যখনই টু শটে হাজির হয়েছেন, বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে। এটি আমি মনে করি, নির্মাতার অবহেলা। তবে ফারিয়াকে সাধুবাদ জানাই, জিতের মতো সুপারস্টারের বিপরীতে কিংবা শ্রদ্ধা দাসের মতো আরেক সুন্দরী অভিনেত্রীর সঙ্গে সাবলীলভাবেই পর্দায় হাজির হওয়ার সাহস করেছেন তিনি।

এ ছবিতে আমাদের চিত্রনায়ক ফেরদৌসও আছেন; আপাতদৃষ্টিতে যাকে মনে হবে খলচরিত্র। শুরুতে এ চরিত্রে তাকে দেখে একটু ধাক্কা খেয়েছি। যদিও পরবর্তীতে সামলে নিয়েছি। কৃত্রিম গোঁফটি না থাকলেই বরং ফেরদৌসকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো। বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায় অবশ্য আরও কিছু প্রশ্ন আছে আমার। এ ছবিতে দেখলাম, বিমানবন্দরে বিনা বাধায় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করা যায়। অ্যাকশন দৃশ্যে জিতের পিঠে লাগানো দড়িও আমার চোখ এড়ায়নি। শুধু তাই নয়, তেলেগু ‘ডন সিনু’ ছবির দৃশ্য এনেও এ ছবিতে জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূল ছবিতে মহেশ মাঞ্জরেকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের দৃশ্যও প্রথম এন্ট্রি দৃশ্য কাট-কপি-পেস্ট হয়েছে।

‘বাদশা’ দেখে একটি কথাই বলবো, ছবিটি দেখে আমি বিনোদিত হলেও এ ছবিতে বাংলাদেশকে খুঁজে পাইনি। ফারিয়া, ফেরদৌস, রেবেকা, পূজা, সুষমা, শাহেদ আলী, আহমেদ শরীফ, নাদের চৌধুরী, সুব্রত অনেকেই আছেন ছবিতে। তবে ‘বাদশা’ দেখে আপনার মনে হবে, আপনি ভারতীয় কোনো ছবি দেখছেন। ‘কেলাবো উদম কেলাবো’ নিশ্চয়ই আমার দেশের ভাষা নয়। তাছাড়া মুক্তির আগে শুনেছিলাম, রবি তেজা ‘ডন সিনু’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের ভক্ত হলেও ‘বাদশা’য় নাকি অমিতাভ বচ্চন এবং প্রয়াত নায়ক মান্নার ভক্ত জিৎ। কিন্তু ছবি দেখতে এসে অমিতাভকেই পেলাম, আমাদের মান্নাকে আর খুঁজে পেলাম না।

* লেখক : চিত্রনাট্যকার

পরের প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।