ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

তারার ফুল

ওই নতুনের কেতন ওড়ে

স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর গল্প

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৪
স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর গল্প সিয়াম ও তানজিন তিশা/ছবি: নূর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বনে সরু পাহাড়ী নদীর পাথর বেয়ে চলছে এক তরুণী। অন্যদিকে সমুদ্র সৈকতের সামনে ফুটবল খেলছে কয়েকটি শিশু।

তাদের আনন্দ-ফূর্তিকে মুঠোফোনের ক্যামেরায় বন্দির সময় এক তরুণ বলছে, ‘লাইফটা এখন খুব সহজম যখন চাই চরম আপলোড’। ওদিকে তরুণীর কণ্ঠ, ‘চরম ডাউনলোড। ’ তরুণের প্রশ্ন, ‘আর আগে?’ উত্তর দিলো তরুণী, ‘আগে ইন্টারনেট মানেই ছিল দুনিয়ার প্যাঁচ (জিলাপীর মতো)!’

মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান রবির সিম্পল ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনচিত্রের এই তরুণ-তরুণী সিয়াম ও তানজিন তিশা। মেজবাউর রহমান সুমন নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্রটি সবার নজর কেড়েছে। এতে মডেল হওয়ার সুবাদে সিয়াম ও তানজিন তিশা দু’জনই এখন পরিচিত মুখ। বাংলাানিউজের বিনোদন বিভাগের আমন্ত্রণে আড্ডায় অংশ নিলেন তারা।

প্রথমেই হাসতে হাসতে তানজিন তিশা বলতে লাগলেন, ‘এ কাজের কথা মনে পড়লে গায়ে জ্বর চলে আসে। কাজটি করতে গিয়ে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ এর একটি দৃশ্যের চিত্রায়ণ হয়েছে সিলেটের ‘হাম হাম ওয়াটার ফল’ নামের একটি জায়গায়। এই দৃশ্যের জন্য আমাকে টানা তিন ঘণ্টা একটি পাহাড় বেয়ে ওই ঝরনার কাছে যেতে হয়েছে। হাঁটুসমান জল পেরিয়ে অনেক কষ্টে পৌঁছাতে হয়েছিল ওই ঝরনার কাছে।

এ বিজ্ঞাপনের আরেক মডেল সিয়াম জানালেন অন্য কথা। তার ভাষ্যে, ‘কাজটির জন্য আমারও কম কষ্ট হয়নি। দৃশ্যধারণের পরদিন আমার পরীক্ষা ছিল, তা থাকা স্বত্ত্বেও কাজটি করেছি। সারারাত যাত্রাপথে থেকে সকালে পৌঁছে কাজে নেমে পড়েছি। জাফলং ও ঢাকার তাঁতীবাজারে এর চিত্রায়ন হয়েছে। বিজ্ঞাপনের পুরো গল্প বলার ভাবনা বেশ ভালো লেগেছে আমার। এটি প্রচার শুরুর পর অনেকের কাছ থেকেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। ’

এবার আসি তানজিন তিশার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে। ঢাকায় বেড়ে ওঠা এই মেয়েটিকে ঘরে সবাই আদর করে বাবু বলে ডাকে। মজার বিষয় হলো পাঁচ বছর বয়সে নিজেই ‘তিশা...তিশা’ বলে বারবার নিজের নাম উচ্চারণ করলে পরে তার নাম রাখা হয় তিশা। ২০১১ সালে লাইফস্টাইল সাময়িকীর একটি ফটোশুটের মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পথচলা শুরু তার। এরপর অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান রবির বিজ্ঞাপনচিত্র (জামদানি ঘর), প্যারাস্যুট নারিকেল তেল, পোলার আইসক্রিমসহ বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাকে।

এ বিষয়ে তানজিন তিশা বলেন, ‘আমি মূলত প্রথমে নাচ শেখা শুরু করি। এরপর পরিচিত এক আপুর মাধ্যমে ফটোশুটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই। তারপর বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ আসতে থাকে আমার কাছে। অল্প কিছুদিন র‌্যাম্প মডেল হিসেবেও কাজ করেছি। ’

তানজিন তিশা খুবই অল্প সময়ে ‘লেজার ট্রিট’, ‘আড়ং’, ‘ক্যাটস আই’, ‘পারসোনা’, ‘পোলার আইসক্রিম’সহ বেশকিছু পণ্যের বিলবোর্ডে মডেল হয়েছেন। বর্তমানে টিভিতে তার অভিনীত ‘স্টপ নট চিপস’, ‘কোয়ালিটি আইসক্রিম’, ‘রাঁধুনী গুড়া মসলা’র বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি কণ্ঠশিল্পী ইমরানের একটি গানে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। শিগরিই ভিডিওটি সব চ্যানেল দেখতে পাবেন দর্শকরা।

আরটিভিতে ‘লাক্স শপার্স গাইড’, মাছরাঙা টিভিতে ‘রূপকথা’ ও বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে গাজী টিভিতে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে প্রচার শুরু হবে ‘ফুটবল ম্যানিয়া’ নামক একটি অনুষ্ঠান। এটি উপস্থাপনা করবেন তিনি।   কিন্তু এখনও করা হয়নি অভিনয়। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘উপস্থাপনা শখে করি। পড়াশোনার ব্যস্ততার কারণে অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি। তবে ঈদের জন্য বেশকিছু নাটকে কাজের কথা চলছে। আমি অবশ্যই অভিনয় করতে চাই। ’

তানজিন তিশা এখন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে পড়ছেন। প্রথমে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু বড় বোন সুইটি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাই আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান তিনি। আগামী কাজের পরিকল্পনা নিয়ে জানালেন, ‘এখন অভিনয়টা নিয়মিত করতে চাই। ’

এবার সিয়াম আহমেদের গল্প বলা যাক। তানজিন তিশা আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান, আর সিয়াম এখন ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে আইন বিষয়ে পড়ছেন।

২০১২ সালে আদনান আল-রাজীবের নির্দেশনায় মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান এয়ারটেলের ‘গুটিবাজ বন্ধু’ এবং ‘সিটিসেল জুম আল্ট্রা’ ছিল তার শুরুর দিকের কাজ। এসব কাজ পাওয়ার ঘটনা জানাতে ভুললেন না সিয়াম। বনানীতে এক কাজিনের ফটোসেশনে এসে পরিচয় হয় রাজীবের সঙ্গে। তার অনুপ্রেরণায় সিয়াম নিজের কিছু ছবি তোলেন সেদিন। পরদিন তার জন্য আসে বিশাল চমক। সিয়াম বললেন, ‘বেশকিছু পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় করে আমার ছবির (সিটিসেল জুম আল্ট্রা) কাজ। ’

এরপর ‘রুচি ঝুরিভাজা’, ‘নেসলে মাঞ্চ চকলেট’, ‘রবির রেল স্টেশন’, ‘সিম্ফোনি’, ‘প্রাণ চিপস’, ‘প্রাণ ম্যাংগো জুস’সহ বেশকিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হন। সিয়াম অভিনীত মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান রবি, নেসলে, প্রাণ ম্যাংগোর বিজ্ঞাপনচিত্রগুলো এখন প্রচার হচ্ছে।

এ বছরের ভালোবাসা দিবসে রেদওয়ান রনির ‘ভালোবাসা ১০১’ টেলিছবিতে আফনান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম। আসছে রোজার ঈদে বেশকিছু নাটকে অভিনয়ের কথা চলছে। তাই মৌসুমটা ভালোই যাচ্ছে তার। নিজের বর্তমান অবস্থানের জন্য নির্মাতা আদনান আল রাজীবকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না তিনি। সিয়ামের ভাষ্যে, ‘রাজীব ভাইয়ের উৎসাহে কাজ করার পর মনে হলো মানুষের মনে পৌঁছানোর সহজ মাধ্যম বিনোদন অঙ্গন। তবে আমি যা-ই করি, বুঝেশুনে এগোতে চাই। ’

সিয়ামের বাবা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পেশায় আইনজীবী। বাবার পথ ধরে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনার ইচ্ছে আছে ছেলের। বার-অ্যাট-ল নিয়ে পড়তে ২০১৫ সালে লন্ডনে যেতে চান সিয়াম। তবে ফিরেই আইন বিষয়ে অনুশীলনের পাশাপাশি বিনোদন অঙ্গনে ভালো কিছু কাজ করতে চান।

সিয়ামের ভাষ্য, ‘আমার যে ক’জন ভক্ত তৈরি হয়েছে তা খারাপ কাজ করে নষ্ট হতে দিতে চাই না। বন্ধুরা ও ফেসবুক বন্ধু ও ভক্তদের কাছ থেকে সবসময়ই কোনো কাজ করার আগে পরামর্শ চাই। আমি মনে করি, মা-বাবার পর তারাই আমার বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। ’

আইনজীবী হয়ে দেশের বিচারব্যবস্থায় অবদান রাখার সঙ্কল্প মনে লালন করছেন সিয়াম-তানজিন তিশা। পাশাপাশি বিনোদনের স্বপ্নিল দুনিয়ায় ভক্তদের স্বপ্নের তারকা হয়ে থাকার স্বপ্ন বুনছেন দু’জনই। শুভকামনা তাদের জন্য।

বাংলাদেশ সময় :  ১১১০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।