ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

ঢাবির সাত শিক্ষার্থী বহিষ্কারের নেপথ্যে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
ঢাবির সাত শিক্ষার্থী বহিষ্কারের নেপথ্যে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষককে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এরপর থেকেই এ ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা চলছে। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি উন্মোচনের চেষ্টা করেছে বাংলানিউজ।

বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিমকে নিয়ে অশোভন স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কৃতরা হলেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের খাইরুন নিসা, উম্মে হাবিবা তানজিলা, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মিনহাজুল আবেদিন, ফাতিমা, সামিরা মাহজাবিন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ-হীল-বাকী এবং অদিতি সরকার।  

এরমধ্যে খাইরুন নিসা ও মিনহাজুল আবেদীনকে ১ বছর ও বাকিদের ৬ মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে ঘটনার সূত্রপাত। পরীক্ষার হলে পরস্পর খাতা দেখে লেখার কারণে অধ্যাপক রেজাউল করিম কয়েকজন শিক্ষার্থীর খাতা নিয়ে নেন।

পরীক্ষার শেষ হওয়ার কিছু সময় বাকি থাকতে একই কারণে আবার খাতা নিয়ে নেন তিনি। কিন্তু রিপোর্ট করে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেননি।

পরে খাতা ফেরত চেয়ে অনুরোধ করলেও পরীক্ষার সময় মাত্র দশ মিনিটের মতো বাকি থাকার অজুহাতে শিক্ষার্থীদের খাতা ফেরত দেননি ওই শিক্ষক। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে না পেরে একছাত্রী খায়রুন নিসা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।  

সেখানে তিনি লেখেন, ‘অনেক কষ্টে আজকে নিজেকে থামাইসি। নাইলে আজ টাকলার টাক, সব বডি পার্টস গুঁড়া গুঁড়া থাকত। আপাতত পরীক্ষার হলে সবার সামনে প্রশ্ন ছিড়া (ছেঁড়া) কিছুটা কন্ট্রোল করসি নিজেকে। ওর টাকে ধাম কইরা মারতে পারলে আরো শান্তি পাইতাম। ’

কারো নাম উল্লেখ না করলেও খায়রুন নেসার সহপাঠী, জুনিয়ররা সেখানে কমেন্ট করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেখানে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম চলে আসে। খায়রুন নেসা কমেন্টের রিপ্লাই দেন এভাবে ‘ছি ছি ছি এভাবে গুণীলোকদের বদনাম করতে নেই। দেশে টাকলার কমতি নেই। ’

আরেকজন ‘কী হয়েছে’ প্রশ্ন করলে খায়রুন নেসা লেখেন, ‘বাজে প্রশ্ন + ৩৬ নম্বর আন্সার করা বাকি ছিল। খাতা টান মেরে নিয়া গেসে ফেরত দেয় নাই আর। বলে প্রশ্নকে চুম্মা মেরে/সালাম মেরে চলে যাইতে। ’ 

অদিতি নামের একজন লিখেন, ‘মাইরা ফেলতেন আমরা বাইচা যাইতাম। তখন খায়রুন নেসা লেখেন ‘টাক্লার ওপর হিউজ আক্রোশ হইসিল। মন চাইছিল ওরে পাড়াই। ’ 

তানজিলা হাসান লিখেন, ‘এই টাকলার জ্বালায় শান্তিতে একটা পরীক্ষাও দিতে পারি না। সামনে বসে বাকি টিচারদের সাথে ইচ্ছামত বকর বকর করে আর আমি সব ভুলে যাই। ’ 

আরেকজন লিখেন, ‘এই টাকলা হুদাই আজকে আমার খাত নিয়ে ফেলেছে, আমি দশ নম্বরের উত্তর করতে পারি নাই। মন চাইছিল আলগাইয়া একটা আছাড় মারি। ’

শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধুমাত্র মনের ক্ষোভ মেটাতেই এমনটি করেছেন। যেমনটি সাম্প্রতিক ইস্যু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেকে করে থাকেন। এসব কমেন্ট এমনিতেই বলা।  

তবে এই স্ট্যাটাস আর কমেন্টগুলোকে নিজের জন্য হুমকি মনে করে এ ঘটনায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন অধ্যাপক রেজাউল করিম। ডিসেম্বরের ৪ তারিখ বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরিন ওয়াদুদ উপাচার্যের কাছে চিঠি দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কার্যালয় থেকে এসব শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়। সেখানে তারা ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চান। কিন্তু ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে। গত ৩০ জুলাই বিভাগ এই বহিষ্কারের নোটিশ প্রকাশ করে।

এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তারা ভুল স্বীকার করে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইতে গেলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘটনা ২০১৭ সালের নভেম্বরের। কিন্তু শাস্তি হয়েছে এ বছরের জুলাইয়ে। শাস্তি একবছর ও ছয়মাস করে দেওয়া হলেও কার্যত তাদের দু্ই বছর ও এক বছর করে ভোগ করতে হবে। আর পরীক্ষার হলে রিপোর্ট করে বহিষ্কার করার নিয়ম থাকলেও অধ্যাপক রেজাউল সেটি করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্যারের কাছে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। বিভাগ আমাদের সতর্ক করতে পারতো, তাহলে আমরা সংশোধনের সুযোগ পেতাম ও সাবধান থাকতাম।

যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অশোভন আচরণে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। সিন্ডিকেট শাস্তি দিয়েছে।  

তবে কোনো শিক্ষার্থী ক্ষমা চাইতে আসেননি বলে তিনি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছে। এটি তদন্ত কমিটি দেখবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এসকেবি/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।