ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

পরিত্যক্ত-জরাজীর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
পরিত্যক্ত-জরাজীর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস  হযরত লোহা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের

গাজীপুর: বিদ্যালয়ে দু’টি ভবনের মধ্যে একটি পরিত্যক্ত এবং অন্যটি জরাজীর্ণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ এ ভবনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় কখন যেনো ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এই অবস্থা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) লোহাকৈর এলাকার হযরত লোহা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জিসিসির সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়নের লোহাকৈর এলাকায় ১৯৮৩ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়েটি স্থাপন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জমি দান করে স্কুলের জন্য। ওই এলাকায় হযরত লোহা আলীর একটি মাজার রয়েছে। তাই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে ‘হযরত লোহা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন আগের নির্মাণ করা একটি ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। শ্রেণি কক্ষগুলি তালাবন্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। তার পাশে ২০০৬ সালের একটি ভবন তৈরি করা হয়। সেখানেও তিনটি কক্ষ করা হয়েছিল। সেই একতলা ভবনের একটিতে অফিস কক্ষ আর অন্য দু’টি কক্ষে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও জায়গার সংকুলান না হওয়ায় সিঁড়ির জন্য রাখা একটি ছোট জায়গাতে ব্রেঞ্চ ফেলে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।  
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ এ ভবনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে
স্কুল কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। প্রধান শিক্ষক তসলিমা জিনাত, সহকারী শিক্ষক কামরুন নাহার ও আসমা আক্তার। বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্য প্রায় ৩শ’। এতো সমস্যা থাকা সত্বেও গত পিএসসি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে।  

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুমন আলী (রোল-১) জানিয়েছে, স্কুলের কউন্সিলর নির্বাচনে তাকে লাইব্রেরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্কুলের কোনো লাইব্রেরিই নেই।  

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিপন হাসান জানায়, স্কুলটির পাশেই একটি মাজার রয়েছে। ওই মাজারে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক আসেন। তাদের অনেকেই গান-বাজনা করে। ফলে লেখাপড়ায় অনেক বেঘাত ঘটে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লোহাকৈর মাজারের পাশে উঁচু জায়গায় স্কুলটির অবস্থান। সামনে খেলার মাঠ। শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করছে। স্কুলের উত্তরপাশের পরিত্যক্ত ভবনটি রয়েছে। সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে। আর পূর্বপাশে ২০০৬ সালের নির্মাণ করা একটি ভবন রয়েছে। সেটির ছাদ ডেমেজ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা ও ঢালাই খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফ মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, এলাকার জন্য এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশেপাশের স্কুল রয়েছে কয়েক কিলোমিটার দূরে মৌচাক এলাকায়। তাই স্কুলটিতে নতুন ভবন করা খুবই জরুরি।

স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রিয়াজুল হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলটির জরাজীর্ণ ভবন মেরামত করার জন্য এবং নতুন একটি ভবন তৈরি করার জন্য লিখিত ভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে জানানো হয়েছে। স্কুলে আরও শিক্ষক প্রয়োজন। বর্তমানে তিনজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চলছে।  

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তসলিমা জিনাত বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ঠিকমতো নেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া একটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় সেটি তালাবন্ধভাবে রাখা হয়েছে। স্কুলে ব্রেঞ্চের সংখ্যা হওয়ায় পাশের একটি ভবনে কোনো ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ছাত্র-ছাত্রীও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
জরাজীর্ণ এ ভবনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে
গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুর সদর উপজেলার সব জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নতুন ভাবে মেরামত ও নতুন ভবন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।  

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টির খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮ 
আরএস/এআর/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।