ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

ইচ্ছেমতো অফিস করেন জাবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা!

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৭
ইচ্ছেমতো অফিস করেন জাবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: অফিসে আসার নির্ধারিত সময় মেনে চলছেন না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিথিলতা ও শাস্তির বিধান না থাকায় তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো অফিস করছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ অক্টোবরের সিন্ডিকেট সভায় অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার দু’দিন নির্ধারণ করা হয়। দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ এবং নামাজের বিরতি দেওয়া হয়।

নতুন ও পুরনো রেজিস্ট্রার ভবনে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।  

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সরেজমিনে ওই দুই রেজিস্ট্রার ভবন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মচারী এসেছেন। সকাল ৯টার পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসতে থাকেন। এ ধারা সকাল সাড়ে ৯টার পরেও চলতে থাকে।  

দুপুরে খাবারের সময় অফিসগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খাওয়া শেষ করে দুপুর ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যেও অফিসে আসেননি অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ এবং নামাজের বিরতির সময় ছিলো।  

আড়াইটার দিকেও অনেক কর্মচারীকে খাওয়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় গল্প করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার ভবনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (যার অধীনে রয়েছেন ৮/১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী) বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য আধা ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কোনো কোনো সময় দুই ঘণ্টা দেরি করে আসছেন। তাদের কিছু বলতে গেলেও সমস্যা। কারণ, ওপর থেকে ফোন আসে’।  

তিনি বলেন, ‘এখানকার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী হয় কোনো অধ্যাপক বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয়, না হয় প্রশাসনের কেউ না কেউ তার ঘনিষ্টজন। শাস্তির কোনো বিধান না থাকায় তারা তাদের ইচ্ছেমতো অফিস করেন’।

 ‘যেহেতু নামাজ ও খাবারের সময় দেওয়া হয় আধা ঘণ্টা, সেহেতু অফিসে খাবার এনে খাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাসা ক্যাম্পাসের পাশে হওয়ায় তারা বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে দুপুরের বিশ্রাম নিয়ে তার পর আসেন। তখন দেখা যায়, দেড় থেকে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। দেরি করে এলেই বা কি- কেউ তো কিছু বলেন না’- যোগ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেরি করে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের আত্মীয়। নতুন অ্যাডহক ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষকের স্ত্রী ও আত্মীয়ও নির্ধারিত সময় মেনে চলছেন না।  

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি অফিসগুলোতে পাঁচ মিনিট দেরি করলে বেতন কাটা যায়, চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। আর এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি করছেন, তাও বলার কিছু নেই। আর বলবেনই বা কে?’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টিতো ভয়ানক! এটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে অতি দ্রুত চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করবো’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৭
জিপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।