ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

কোচিংয়ের প্রশ্নে স্কুলে পরীক্ষা! ‘যা পারেন করেন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
কোচিংয়ের প্রশ্নে স্কুলে পরীক্ষা! ‘যা পারেন করেন’ স্কুলের সঙ্গে কোচিংয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্রায় হুবহু মিল। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার গণিতের শিক্ষক শহীদুল্লাহ তরফদারের বিরুদ্ধে প্রাইভেট-কোচিংয়ের পরীক্ষার প্রশ্নে ক্লাসের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নিষিদ্ধ থাকলেও ওই শিক্ষক রমরমা কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য চাইতে গেলে ওই সহকারী শিক্ষক শহীদুল্লাহ তরফদার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, ‘যা পারেন করেন।

আমি কোচিং-প্রাইভেট চালিয়ে যাবো’।

অভিভাবকদের অভিযোগ, চতুর্থ শ্রেণির প্রাইভেট-কোচিংয়ের প্রশ্নের সঙ্গে ক্লাসের পরীক্ষার প্রশ্নের প্রায় হুবহু মিল পাওয়া গেছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের অন্যায়ের পথ দেখাচ্ছেন ওই শিক্ষক। তার কাছে প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীরা বেশি নম্বর পাবে, বঞ্চিত হবে অন্যরা।

অভিভাবকদের অভিযোগ, গত রোববার (০৯ জুলাই) ক্লাসের গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষক কোচিংয়ে নমুনা প্রশ্নে পরীক্ষা নেন।
 
ক্লাস পরীক্ষা ও কোচিংয়ের নমুনা প্রশ্নের মধ্যে দেখা গেছে, টিক চিহ্নের প্রশ্নের ২৫টির মধ্যে ৬টির হুবহু মিল। অন্যগুলোও শুধু সংখ্যা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মধ্যে ১১টির হুবহু মিল পাওয়া গেছে।  
 
অভিভাবকরা বলছেন, একজন শিক্ষক যিনি ক্লাস নেবেন আবার প্রশ্ন তৈরি করবেন, তিনি যদি কোচিংয়েও সেই প্রশ্ন দিয়েই পরীক্ষা নেন, তাহলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়াই হয়েছে। এতে যেসব শিক্ষার্থী তার কাছে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ে, তারা লাভবান হবে।
 
মতিঝিলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ক্যাম্পাসসহ মুগদায়ও শাখা রয়েছে।

বনশ্রী শাখায় চতুর্থ শ্রেণিতে ৬৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

প্রাইভেট-কোচিং নিষিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ তরফদারের কাছে প্রাইভেট বা কোচিংয়ে না গেলে নানাভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, ক্লাসে ভালোভাবে না পড়িয়ে কোচিং-প্রাইভেটে আসতে বলেন শিক্ষার্থীদের।
 
কোচিং নিষিদ্ধ থাকলেও সেই কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে ক্লাস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শহীদুল্লাহ তরফদার মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘কে বলেছে কোচিং নিষিদ্ধ! কোচিং না করালে শিখবে কোথায়?’

তিনি বলেন, ‘কোচিংয়ের প্রশ্নের সঙ্গে ক্লাসের পরীক্ষার প্রশ্ন মিলতেই পারে। আমি প্রাইভেট-কোচিং চালিয়ে যাবো, যা পারেন করেন। সাংবাদিক হয়েছেন তো কি হয়েছে? আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না!’

এক পর্যায়ে মোবাইল ফোন রেখে দেন শহীদুল্লাহ তরফদার।
 
২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশনা আবারও স্মরণ করে দিয়ে গত বছরের ০৪ মে নির্দেশনা পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

নির্দেশনাটি মাউশির সব অঞ্চলের উপ-পরিচালক, জেলা ও উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। মাউশির সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিষয়টি মনিটরিং করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো।

মূল শাখা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহানা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। ওই শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।    
 
এজন্য পরদিন ফোন করারও পরামর্শ দেন অধ্যক্ষ শাহানা আক্তার।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।