ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

কৌশলে সেশন ফি নিচ্ছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
কৌশলে সেশন ফি নিচ্ছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ইংরেজি মাধ্যম স্কুল (প্রতীকী)

ঢাকা: ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে যে কোনো ধরনের সেশন ফি নেওয়ার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নানা অজুহাতে ফি বসিয়ে সেশন ফি আদায় কর‍া হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৫ মে রায় দেন যে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে কোনো ধরনের সেশন ফি নেওয়া যাবে না। ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং সেই ম্যানেজিং কমিটি ভর্তি ফি ও টিউশন ফি নির্ধারণ করবে বলে রায়ে বলা হয়।

রায়ের আগে স্কুলগুলো এক সাথে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সেশন ফি নিতো বলে জানান অভিভাবকেরা। কিন্তু রায়ের পরে কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায় স্কুলগুলোকে।
 
স্কুলগুলো এখন লাইব্রেরি চার্জ, এসি ও জেনারেটর চার্জ, বিদ্যুৎ, স্কুল মেইনটেন্যান্স ইত্যাদি বাবদ ফি নিচ্ছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। এই তালিকায় গ্রিন ডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্কলাস্টিকাসহ একাধিক স্কুলের নাম রয়েছে।

গ্রিন ডেল গুলশানে তিনটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করে আসছে। হাইকোর্টের রায়ের পর এই স্কুল ৮ জুন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ফি রিভাইজ করে নোটিশ দেয়।

নোটিশে দেখা যায়, জুনিয়র সেকশনে নিয়মিত ফি’র পাশাপাশি সেশন ফি রিভাইজ করে নানান খাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে লাইব্রেরি চার্জ ২০০ টাকা, এসি ও জেনারেটর ব্যাকআপের জন্য ৮০০ টাকা এবং স্কুল মেইনটেন্যান্স ও উন্নয়ন বাবদ আরও এক হাজার টাকার বাড়তি খরচ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এভাবে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা ধরে বার্ষিক ২৪ হাজার টাকাই দিতে বাধ্য করা হচ্ছে অভিভাবকদের।

এ ব্যাপারে সোমবার (১৯ জুন) বেলা সোয়া ১২টার দিকে গ্রিন ডেল স্কুলের ১ নম্বর শাখায় টেলিফোন করা হলে নিজেকে অ্যাডমিন অফিসার পরিচয় দিয়ে কথা বলেন ফেরদৌস আলম।

বিভিন্ন খাতে বাড়তি ফি আগে নেওয়া হতো না, কিন্তু এখন নেওয়া হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগে ছিল না, এখন নিচ্ছি। কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে, যা আছে নোটিশে লেখা আছে বলে লাইন কেটে দেন তিনি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, এভাবে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সেশন ফি আদায় করা আদালতের আদেশে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।
 
ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে অতিরিক্ত ফি এবং বিভিন্ন অজুহাতে ফি নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
 
অভিভাবকদের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
 
শিক্ষাসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
 
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশ দেন।
 
২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ‘ফ্রিস্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাবেদ ফারুক।
 
রুলে এসব স্কুলে মাসিক বেতন, পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি এবং তদারক সেল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষাসচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

পরবর্তীতে এ রুলের শুনানি শেষে সেশন ফি নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

রায়ে ‘বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ-১৯৬২’ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন; শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও সব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ, জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন, দেশের সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতায় আত্মদানকারীদের জীবনী নিয়ে অনুষ্ঠান করতে বলা হয়।

আরও পড়ুন:
ইংরেজি মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশ

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।