ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

ফাঁস রোধে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে ছাপা হবে প্রশ্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
ফাঁস রোধে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে ছাপা হবে প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (ফাইল ফটো)

ঢাকা: পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন মডারেট করে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়ে সকালে পরীক্ষার ত্রিশ মিনিট থেকে একঘণ্টা আগে কেন্দ্রে ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

আগামী বছরের এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় এ পদ্ধতিতে পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে কাজ শুরু করা হবে।

এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের সফলতায় পরবর্তীতে সারাদেশে প্রয়োগ করা হবে অনলাইনে প্রশ্ন বিতরণ ও স্থানীয়ভাবে ছাপানোর পদ্ধতি।

প্রশ্নফাঁসরোধে প্রযুক্তির প্রয়োগ করে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণ পদ্ধতির দিকেই যেতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপক।

পাবলিক পরীক্ষার দেড়-দু’ঘণ্টা আগে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রশ্ন চলে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীদের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন নেওয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কেন্দ্র থেকে পরিদর্শক স্মার্টফোনে ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে দেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে চলতি এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নও এভাবে ফাঁস হচ্ছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

গত ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রায় দেড়ঘণ্টা আগে বাংলানিউজের কাছেও চলে আসে। বেলা একটায় পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা যায় সৃজনশীল অংশের (খ সেট) প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। এছাড়া বহুনির্বাচনী অংশের (ক সেট) ২৫টি প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের মিল পাওয়া যায়। প্রশ্নের কপি পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠায় বাংলানিউজ। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ প্রশ্নের কপি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠিয়েছিলো।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমানকেও বিষয়টি পরীক্ষার আগে অবহিত করেছিলো বাংলানিউজ। তবে এ নিয়ে আর মাথায় ঘামায়নি মন্ত্রণালয় বা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

এরআগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিন ২ এপ্রিল স্মার্টফোন নিয়ে ট্রেজারিতে প্রশ্ন আনতে যাওয়ায় রাজধানীর দু’টি কলেজের তিনজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র আনার সময় ব্যবহৃত গাড়ি যাতে কালো কাচের না হয়, সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নফাঁস রোধে স্থানীয়ভাবে ছাপানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রযুক্তিবিদ, বুয়েটের শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। চেষ্টা করেছি একটা পথ বের করার।

‘আমরা চিন্তা করছি, সেই ধরনের ইক্যুপমেন্ট জোগাড় করছি, এটা যে হয়ে যাবে তা নয়, আমরা চেষ্টা করছি। সব জায়গায় প্রশ্ন ছাপানো হবে তা নয়। আমরা পাইলটিং হিসেবে কিছু করবো। কী ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়, তার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী পদক্ষেপ। ’

অনলাইনে প্রশ্ন পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে ছাপানোর জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইলেকট্রিসিটির ব্যাপার আছে, মেশিনারিজের ব্যাপার আছে। সামান্য ত্রুটি হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যার জন্য আমরা চাইবো আগামী বছর সব কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপিয়ে ফেলতে পারি কি না। তাহলে, তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে প্রশ্ন দিয়ে দেবো। আমরা চিন্তা করছি, সাড়ে নয়টায় ছাপিয়ে বিলি করে দেবো।
 
‘বলতে পারেন অনেক বেশি উচ্চভিলাষি, কিন্তু না। আমরা খারাপ পথটাকে রোধ করার জন্য এসব চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছি। এখন যখন প্রশ্ন দেই তখন সকালে দিতে হয়। তখন তিনি (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) দু’ঘণ্টা আগেই স্মার্টফোনে ফটো তুলে পাঠিয়ে দেন। ’

বিষয়টি নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।

পরীক্ষার দিন সকালে স্থানীয়ভাবে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখন যারা প্রশ্ন মডারেট করেন তারা রুমে বদ্ধ থাকবেন। প্রশ্নের কোড পাঠিয়ে দেবো, অনলাইন থেকে প্রশ্ন নিয়ে কেন্দ্রে ছাপাবে এবং বিতরণ করবে।
 
‘সকালে প্রশ্ন ছাপানো মনে হয় না অসম্ভব। কারণ এখন অধিকাংশ স্কুল-কলেজে ইন্টারনেট-কম্পিউটার আছে। এটা করতে পারলে ফাঁস এড়ানো সম্ভব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এমআইএইচ/ওএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।