ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

মন্ত্রী একা, তবে...

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৭
মন্ত্রী একা, তবে... কেন্দ্র পরিদর্শনে মন্ত্রী নাহিদ, সঙ্গে ডজনখানেক ফটোসাংবাদিক। ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ‘একটা ভাত টিপলে যেমন হাঁড়ির খবর পাওয়া যায়, সেই হিসেবে একটা আইডিয়া পাওয়া গেল। সেই হিসেবে এসেছি খবর নিয়ে যাই।’ এইচএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে কথাগুলো বলছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। 

শিক্ষামন্ত্রী এই ‘হাঁড়ির খবর’ নিতে পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি হলে ‘একা’ গেলেও আগে থেকেই আমন্ত্রণ পেয়ে তার সঙ্গে ছিল টেলিভিশন ও অন্যান্য মিডিয়ার এক ডজনেরও বেশি ক্যামেরা। মন্ত্রী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা রেকর্ড হয়েছে ক্যামেরায়, উঠেছে ছবিও।

এতে বিরক্তির ছাপ ছিল পরীক্ষার্থীদের চোখে-মুখে।
 
পাবলিক পরীক্ষার হলে কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্ত্রীর দলবলে প্রবেশের রেওয়াজের সমালাচনার পর কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে এখন। গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে যান পরিদর্শনে। সেদিন একটি হলে তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিব। পরিদর্শনের দৃশ্য ধারণে সঙ্গে ছিল ২০-২২ জন ফটো সাংবাদিক, যা নিয়ে সমালোচনা হয়ে আসছে।
 
তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্রের সামনে গাড়ি নিয়ে আসেন মন্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমে তিনি কথা বলেন অভিভাবকদের সঙ্গে। পরীক্ষা শুরুর পর কেন্দ্রে প্রবেশ করে চার নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় উঠে ১৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন।
 
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ছেড়ে একাই যান মন্ত্রী। বলেন, ‘আমি একাই যাবো’।  
কেন্দ্র পরিদর্শনের পর বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।  ছবি: আনোয়ার হোসেন রানাতিন তলার বারান্দা থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, মন্ত্রীর পরিদর্শনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করার জন্য এক ডজনের বেশি ফটোসাংবাদিক ভেতরে ঢুকে দৃশ্য ধারণ করেন, প্রায় মিনিট তিনেক থাকার পর তিনি বের হন। এরপরও কয়েকজন ক্যামেরাপারসন ছবি তুলতে থাকেন আরও কিছু সময়। সেখানে পরীক্ষা দিচ্ছিলো ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক শাখার ৪৪ জন শিক্ষার্থী।
 
মন্ত্রী, পরীক্ষার্থী, কলেজের অধ্যক্ষ, তিন জন পরিদর্শক, ডজনের বেশি ক্যামেরাপারসন- সব মিলে হ য ব রল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ওই হলে।  
 
হল থেকে বেরিয়ে নিচে এসে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই কোনো না কোনো হলে যাই, গার্ডিয়ানের কথা-বার্তা শুনি, তারা অনেক সাজেশন্স দেয়। অনেকে অনেক কথা বলে। দ্যাখেন আপনারা উপস্থিত ছিলেন, সমস্ত মেয়েরা বলছে তারা খুশি আছে। আমরা প্রশ্নে-পরিবেশে খুশি। বাইরে থেকে গার্ডিয়ানরা কথা-বার্তা ভাল বলুক মন্দ বলুক শিক্ষণীয় ব্যাপার। অনেকে ভাল ভাল পরামর্শ দেন। ’
 
‘আমরা একটা ক্লাসে যাই, আমরা যখন ছিলাম না তখন ক্ষমতাবান ব্যক্তি, এমপি-মন্ত্রী বা তার সহযোগীরা দল বেঁধে ঢুকতো। আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা প্রথম যাইতাম ৫-৭ জন করে। সচিব, বোর্ডের চেয়ারম্যান। আপনারাই বলছেন সবাই গেলে একটা ভিড় লাগে। শুধু একজন যাই। ”
 
হল পরিদর্শনের কারণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বলবেন কেন যাই? সারা দেশে এই প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে। প্রশ্নের মধ্যে একটা কোনো ধরণের বড় ভুল থাকতে পারে, যা চোখে ধরা পড়ে। আমরা জানতে পারলাম। বা কোনো সমস্যা হয়ে যাচ্ছে কিনা। ’
 
কেন্দ্র পরিদর্শনের পর বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।  ছবি: আনোয়ার হোসেন রানাতিনি বলেন, ‘একটা ভাত টিপলে যেমন হাঁড়ির খবর পাওয়া যায়, সেই হিসেবে একটা আইডিয়া পাওয়া গেল। যদিও আমরা খবর নিচ্ছি, তবুও সরাসরি নিলাম। সেই হিসেবে এসেছি খবর নিয়ে যাই। ’
 
‘আমরা দেখে এলাম পরীক্ষা দিচ্ছে, ছেলেমেয়েরা খুশি, ক্যামেরা-সাংবাদিক বন্ধুদের সামনেই তারা বলছে। তারা এ নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা আনন্দের সাথে পরীক্ষা দিচ্ছে। আর মা-বাবারা চিন্তায়...। ’
 
যে সময় পরীক্ষার্থীদের নষ্ট হয়েছে, তার জন্য সুবিধা পাবে বলেও জানান নাহিদ।
 
‘বলেছি, তিন মিনিট সময় অ্যাডভানটেজ দিয়েন, সবাই খুশি, মেনে নিয়েছে। ’
 
এদিকে, পরীক্ষার দিন রাজধানীতে একটি প্রতিষ্ঠানের সম্মেলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকলকে অনুরোধ করবো, এমন কিছু করবেন না যেন ছেলেমেয়েদের অসুবিধা হয়। আমরা সবার সহেযোগিতা চাই। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭
এমআইএইচ/এইচএ/

আরও পড়ুন
** প্রশ্ন আনা-নেওয়ার কাজে কালো গ্লাসের গাড়ির ব্যবহার নয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।