ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

এখনই সমাবর্তনে আগ্রহ নেই জবি প্রশাসনের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এখনই সমাবর্তনে আগ্রহ নেই জবি প্রশাসনের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত একাধিক ব্যাচের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হয়ে গেলে আনুষ্ঠানিক সমাবর্তনের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। বর্ণাঢ্য আয়োজনে আচার্য বা চ্যান্সেলরের হাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয় তাদের বছর চার-পাঁচেকের পরিশ্রমের ফসল ‘সনদ’।

কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬-৭টি ব্যাচ স্নাতকোত্তর শেষ করে ফেলার পরও এ বিষয়ে কোনো নড়াচড়া নেই প্রশাসনের। এমনকি আগামী ‘দু-এক’ বছরের মধ্যেও সমাবর্তন আয়োজনের কোনো ইচ্ছে নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

এ কারণে পাঠপর্ব চুকে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‍চাপা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। এমনকি সমাবর্তন দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন পর্যন্ত করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাসের মাধ্যমে তৎকালীন কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয় পুরান ঢাকায় অবস্থিত দেশের প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১২ বছর। স্নাতকোত্তর করে বেরিয়ে গেছে সব বিভাগের অন্তত পাঁচটি ব্যাচ, কোনো কোনো বিভাগের সপ্তম ব্যাচ পর্যন্ত শেষ করে ফেলেছে শিক্ষাজীবন।

এরপরও প্রথম সমাবর্তনের কোনো লক্ষ্মণ দেখতে পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এতদিন আয়োজনস্থলের অভাবসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে সমাবর্তনের প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এখন বলছে, ‘আপাতত উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য, এর বাইরে দু’এক বছরের মধ্যে সমাবর্তনের কোনো চিন্তা নেই’।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, পাঠপর্ব শেষে গায়ে কালো গাউন, মাথায় সমাবর্তন ক্যাপ পড়ে আচার্যের হাত থেকে সনদ গ্রহণ করা। কিন্তু পাঠপর্ব শেষ করার দিনগুলো ধূসর হয়ে যেতে থাকলেও এখন পর্যন্ত সমাবর্তনের কোনো উদ্যোগ বা ইচ্ছে তারা দেখছেন না।

জানা যায়, কলেজ থেকে জগন্নাথকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে যে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ঘাম ঝরিয়েছেন, কোনো ক্ষেত্রে রক্তও, সেই ২০০৩-০৪ ও ২০০৪-০৫ সেশনের প্রায় ১৯ হাজার ২৭১ শিক্ষার্থীকে কোনো প্রকার সমাবর্তন ছাড়াই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে সনদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরপর ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১২টি ব্যাচ। এরমধ্যে সব বিভাগ থেকেই  অন্তত পাঁচটি ব্যাচ স্নাতকোত্তর শেষ করে বেরিয়ে গেছে। কোনো কোনো বিভাগের ৭টি ব্যাচ পর্যন্ত শেষ করে ফেলেছে স্নাতকোত্তর।

সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৮ মার্চ প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, তখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৬৬৫ জন। এরপর কেটেছে আরও ৪টি শিক্ষাবর্ষ। এই সময়ে যে সংখ্যাটি ৪০ বা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে তার পক্ষে কথা বলে পরের বর্ষগুলোতে সেশনজটের তেমন কোনো অভিযোগ না পাওয়া।

সমাবর্তনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমে এভাবে বাড়তে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আয়োজনের মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার বিষয়টি সামনে আনছে। কিন্তু এটাকে ‘অজুহাত’ ধরে তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিভিন্ন সময় সমাবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পর্যন্ত পালিত হতে দেখা গেছে। দেখা যায় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করার উদ্যোগও।

সমাবর্তনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের সমাবর্তন আয়োজনের সদিচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠেই (গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠ) তা আয়োজন করা সম্ভব। তাছাড়া, কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জায়গা কিনেছে। সদিচ্ছা থাকলে এতদিনে সেখানে জায়গা ভরাট করে প্রস্তাবিত হলের কাজও শেষ করা যেত এবং হল সংলগ্ন মাঠে সমাবর্তন আয়োজনেরও উদ্যোগ নেওয়া যেত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী সাখাওয়াত স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ১২ বছর অতিক্রম করার পর এবং ৫-৬টি ব্যাচ চাকরি বাজারে ভালো অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন করতে পারছে না। এখানকার শিক্ষার্থী হিসেবে হল পাইনি, এখন সমাবর্তন না পাওয়ার দুঃখে নিজেকে আরও বেশি বঞ্চিত মনে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক হলে খুব দ্রুত সমাবর্তন সম্ভব উল্লেখ করে স্বপন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে স্থান না পেলে অন্য কোথাও সমাবর্তন আয়োজন করা যেতে পারে। একটা সমাবর্তন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়িয়ে দিতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগামী দু’এক বছরের মধ্যে আমাদের সমাবর্তন আয়োজনের কোনো চিন্তা বা ইচ্ছে নেই। তাছাড়া, সাবেকদের নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, আমরা বর্তমানদের নিয়ে থাকতে চাই। এখন বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়েই কাজ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
ডিআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।