ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

আব্দুল জলিলের হিমাগারে পচে গেছে কয়েক হাজার বস্তা আলু, কৃষকদের মাথায় হাত

কিউ,এম,সাঈদ টিটো, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০
আব্দুল জলিলের হিমাগারে পচে গেছে কয়েক হাজার বস্তা আলু, কৃষকদের মাথায় হাত

নওগাঁ: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর এলাকার ফয়েজ উদ্দিন কোল্ড স্টোরেজের কয়েক হাজার বস্তা আলু বিদ্যুতের অভাবে পচে বিনষ্ট হয়েছে। এতে করে এলাকার সাধারণ আলু চাষীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে গেছেন।



এই হিমাগারটির মালিক নওগাঁ সদর আসনের এমপি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আব্দুল জলিল।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, বিদ্যুতের অভাবে সম্প্রতি হিমাগারের ৪ টি চেম্বারের মধ্যে ১ ও ৪ নং চেম্বার বিষাক্ত গ্যাসে ভরে ওঠে। ফলে চেম্বারগুলো ঠাণ্ডা থাকার পরিবর্তে প্রচণ্ড গরম হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় শনিবার দমকল ডেকে হিমাগারের দেওয়াল কেটে বিষাক্ত গ্যাস বের করার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।

এ সময় দেখা যায় কয়েক হাজার বস্তা আলু শিকর গজিয়ে বা পঁচে খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। আলুর মালিকরা খবর পেয়ে হিমাগারে ছুটে আসেন। কিন্তু তাদের অনেকেই এক বস্তা আলুও ভালো অবস্থায় না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান।

 এলাকার জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী এমপি এবং জাতীয় পর্যায়ের নেতা আব্দুল জলিলের মালিকানাধীন হিমাগারে এভাবে শত শত বস্তা আলু পচে নষ্ট হওয়ায় জনমনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের ইন্দাই গ্রামের আলু ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্ট তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তিনি এলাকার ৩৫ জন কৃষকের কাছ থেকে ৪৪ বস্তা আলু নিয়ে এখানে রেখেছিলেন। শনিবার এসে দেখেন ১ বস্তাও ভাল নেই।

শেরপুর গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন ৩ বস্তা, মফিজ উদ্দিন ৪ বস্তা ও আব্দুল জলিল ২ বস্তা আলু রেখেছিলেন। শনিবার আলু নিতে এসে ১ বস্তাও ভাল পাননি। তারা জানান, প্রতি বস্তা আলু ছাড়িয়ে নিতে ১৯০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ১ বস্তা পঁচা আলু বাছাই করলেও সে টাকা উঠবেনা। তাই আলু ফিরিয়ে না নিয়েই ফেরৎ যাচ্ছেন।

মান্দা উপজেলার সতিহাটের কমিশন এজেন্ট খলিল ৭ হাজার ৫শ’ বস্তা আলু রেখেছিলেন। এর মধ্যে ২ হাজার বস্তার বেশি পচে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকেলে ওই হিমাগারে দমকলের গাড়ীবহর দেখে উৎসুক জনতার ভীড় জমে যায়। নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে এ সময় ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা দোতালার একটি দেয়াল কেটে ১ নং চেম্বারে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস বের করে দেয়।

শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে ফয়েজ উদ্দিন কোল্ড স্টোরেজে গেলে ম্যানেজার আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন লোডশেডিংয়ের শিকার হয়ে আলুতে পচন ধরে। যে কয় ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে তাও নিরবিচ্ছিন্ন নয়। একটানা কমপক্ষে ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ না পেলে চেম্বারগুলো ঠাণ্ডা হয় না। ’

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একাধিকবার পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।

হিমাগার ম্যানেজার জানান, এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কিশোরগঞ্জের মজনু মিয়ার ২৫ হাজার বস্তা আলুও ছিল। তবে তিনি তার আলু আগেই নিয়ে গেছেন।

হিমাগারের অ্যাকাউন্টেন্ট আফছার আলী জানান, স্টোরের ৪ টি চেম্বারে এবার মোট ১ লাখ ৬ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের রাখা বেশীরভাগ আলুই তারা নিয়ে গেছেন। কিন্তু সাধারণ কৃষকদের আলু রয়ে গেছে। তার থেকে অর্ধেকের মত আলু নষ্ট হয়েছে।

তবে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
 
এদিকে স্থানীয় ফায়ার ব্রিগেডের স্টেশন মাস্টার নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজে অ্যামোনিয়া গ্যাস বেশি নির্গত হয়েছে। তার সঙ্গে আলু পঁচে সৃষ্ট কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশে চেম্বারের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়ে। ’

মহাদেবপুর পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) খন্দকার ফরহাদ আহমেদ লোড শেডিংয়ের কথা স্বীকার করে শনিবার রাতে জানান, মহাদেবপুরে প্রতিদিন ৯ মেগাওয়াট ও পোরশায় ৩ মেগাওয়াটসহ মোট ১২ মোগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু এখন পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক। বিশ্বকাপ থেকে রোজা পর্যন্ত পাওয়া গেছে প্রতিদিন মাত্র ২ থেকে ৩ মেগাওয়াট। কিন্তু শুধু ওই হিমাগারেই বিদ্যুৎ লাগে ৩ মেগাওয়াট।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।