ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যয় বৃদ্ধি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যয় বৃদ্ধি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ফাইল ফটো

ঢাকা: বদলে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো। চাহিদা ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরকে। নতুন করে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, টানেলযুক্ত মাল্টি লেভেল কার পার্কিং, নতুন কার্গো কমপ্লেক্স, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ও রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং সুবিধা এতে যুক্ত হতে যাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে বছরে দুই কোটি যাত্রীসেবা দিতে সক্ষম হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যা বর্তমান সক্ষমতার চেয়ে ৮০ লাখ বেশি। বর্তমানে এই বিমানবন্দর বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।

যার মধ্যে ১১ হাজার ২১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা)। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানোর কথা। এখন এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২২ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করার উদ্যোগ ছিল। এখন প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে এর নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে তিন বছর। ব্যয় বাড়ানো হয়েছে সাত হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বিমানবন্দরের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ জন্য যাত্রী সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে। প্লেন পরিবহনের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণ ও আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই অবকাঠামোগত সুবিধার উন্নয়নে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যমান অবকাঠামোতে বছরে ৮০ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন। প্রতি বছরই এ সংখ্যা গড়ে পাঁচ লাখ হারে বাড়ছে। একইভাবে বছরে অভ্যন্তরীণ রুটে ছয় লাখের মতো যাত্রী ব্যবহার করছেন বিমানবন্দরটি।

মন্ত্রী বলেন, এই কাজে জাপান সরকারের সহায়তা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে প্রকল্প অর্থায়নের নিশ্চিয়তা পাওয়া গেছে।

একনেক সভা সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্রথমে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত হবে তিনতলা বিশিষ্ট প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল। হবে প্রায় ৬২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে টানেলযুক্ত মাল্টি লেভেল কার পার্কিং। চার লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে থাকবে পার্কিং অ্যাপ্রোন।

প্রকল্পের নকশাও পরিবর্তন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সুবিধা সংযুক্তিসহ মূল টার্মিনাল ভবন-৩ এবং কার্গো কমপ্লেক্সের কাজের পরিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। উন্নত ভবন ব্যবস্থাপনা সিস্টেমও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পৃথক পৃথক আমদানি-রপ্তানি ভবন নির্মাণ করা হবে। পৃথক ভিআইপি ভবন বাতিল করে একই ভবনের নিচে এটা নির্মিত হবে। ঠিকাদারের মাধ্যমে মূল ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। কাজের পরিধি পরিবর্তন এবং পরামর্শক সেবার মেয়াদ ৩৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ৪৮ মাস করা হয়েছে।

তৈরি পোশাকসহ নানা পণ্য পরিবহনে কার্গো ভলিউমের সংখ্যাও আন্তর্জাতিক রুটে বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিবছর বিমানবন্দরে কার্গো পরিবহন ফ্যাসিলিটি দুই লাখ টন। কিন্তু কার্গো পরিবহন করা হচ্ছে ২ দশমিক ৫৯ লাখ টন। এ হিসেবে প্রকল্পের আওতায় কার্গো পরিবহন সুবিধাও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় ৪১ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বানানো হবে নতুন কার্গো কমপ্লেক্স।

এছাড়া পাঁচ হাজার ৯০ বর্গমিটারজুড়ে ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ও এক হাজার ৮২০ বর্গমিটারজুড়ে থাকবে রেসকিউ অ্যান্ট ফায়ার ফাইটিং সুবিধা। প্রায় ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে থাকবে ট্যাক্সিওয়ে।

প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটারজুড়ে থাকবে আরও একটি ট্যাক্সিওয়ে। জরুরি মুহূর্তে বের হয়ে আসার দুটি পথ থাকবে। জলাধার ও পানি সরবরাহের জন্য নতুন ব্যবস্থাও থাকবে প্রকল্পের আওতায়।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আকাশপথে ভ্রমণ। ফলে বাড়ছে প্লেনের সংখ্যাও। বেসরকারি খাতেও নতুন নতুন গন্তব্যে পাখা মেলছে বাংলাদেশের প্লেন।

বর্তমানে দৈনিক সরকারি-বেসরকারি, সামরিক ও বেসামরিক মিলে প্রতিদিন গড়ে ২৩৫-২৪০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে বিমানবন্দরটি থেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সামনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আর সে বিবেচনা থেকেই নতুন এই প্রকল্পের আওতায় সব ধরনের অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad