ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর ‘বেদনার’ আরেক ঈদ

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর ‘বেদনার’ আরেক ঈদ

ঢাকা: ২০১০ সালে ধসের আট বছর পরও ‘স্থির’ হতে পারেনি দেশের পুঁজিবাজার। বরং প্রতিবছরই ধস চলছে বাজারে। এবারের ধস শুরু হয়েছে বছরের শুরুতে। যা এখনো চলছে। চলমান এই ধসে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি হারানোর বেদনায় ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীকে পার করতে হচ্ছে আরেকটি ঈদ।

শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর তথ্য মতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৯টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। একজন বিনিয়োগকারীর একটি বিও হিসাব ধরা হলে সেই হিসাবে প্রায় ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছেন বাজারে।

এই বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের সাড়ে ৬ মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে পুঁজি হারিয়েছেন ৮৪ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসই থেকে ৪২ হাজার ৯৯৩ কোটি, আর সিএসই থেকে ৪১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৮৭৯ পয়েন্ট। সিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ পয়েন্ট।

পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের একজন হলেন লঙ্কা-বাংলা সিকিউরিটিজের আবুল মনসুর খসরু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সালের ধসে আমার ১১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সাত বছরে আরো ৮ লাখ টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছি। গত বছরের ডিসেম্বরে লোকসান মোটামুটি কাভার করেছিলাম। এ বছর বাজার ভালো যাবে ভেবে নতুন করে আরো ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ফের ধরা খেলাম। টানা ছয় মাস (জানুয়ারি থেকে জুন) ধরে চলা দরপতনে আমার ৫ লাখ টাকা নেই, যোগ করেন তিনি।

তাহলে ঈদে, এমন শব্দ বলতেই তিনি বলেন, রমজানের ঈদ মানেই নতুন কাপড়সহ বিভিন্ন পোশাক কেনা। কিন্তু ঈদের আগের এই মাসে বাজেটকে কেন্দ্র করে বাজারে চলে আরো বেশি দরপতন। অন্যদিকে ভালো শেয়ারের দাম বাড়ার পরিবর্তে বেড়েছে খারাপ শেয়ারের। ফলে আমি একদম ধরা। কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে ঈদ পার করতে হচ্ছে আমাদের।  

গত মঙ্গলবার মতিঝিলে অবস্থিত শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের বিনিয়োগকারী আহমাদ উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। বেশ কিছুক্ষণ সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কথা কেউ ভাবে না। চিন্তা করেন কোনো দেশের পুঁজিবাজার কি টানা আট বছর ধরে খারাপ থাকতে পারে? পৃথিবীর কোনো দেশে কি সেই নজির আছে, দেখাতে পারবেন?

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিলো গত সাত বছর যেভাবেই যাক, এবার বাজার ভালো হবে। কারণ কয়েকদিন পর জাতীয় নির্বাচন। সরকার বিনিয়োগকারীর কথা চিন্তা না করে, ভোটের জন্য হলেও পুঁজিবাজারকে ভালো রাখবে। তাতে অন্তত এবারের ঈদটা ভালো কাটবে, স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে এ ঈদ কাটাতে পারবো। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা ৯ লাখ টাকার মূলধন থেকে উল্টো ২ লাখ টাকার পুঁজি নেই।

বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকাজের হাউজের মালিকদের অবস্থা আরো খারাপ। নাম না প্রকাশ শর্তে ডিএসইর একজন পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত বিনিয়োগের কথা বাদ দিলাম। তিনি বলেন, বাজারে শেয়ার ব্যবসা না থাকায় অন্যখাত থেকে টাকা এনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দিয়েছি। বেতন দিতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমার হাউজের ৫টি শাখা ছিলো। এর মধ্যে ৩টি বন্ধ করে দিয়ে ২টি চালু রেখেছি। এখানে প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাদের চালাতে হচ্ছে অন্য ব্যবসার টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিলো ৮ বছর ধরে ব্যবসা করতে পারিনি। এবার নির্বাচনী বছর সরকার পুঁজিবাজারকে ভালো রাখবে। আমরা একটু ব্যবসা করবো। আমাদের একটু স্বস্তি আসবে। কিন্তু হলো উল্টো। এখন আমাদের পুঁজি হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
এমএফআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।