ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাজেট

ঋণ খেলাপি মোকাবেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
ঋণ খেলাপি মোকাবেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব  সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ব্যাংকিং খাতের ১০০ শীর্ষ ঋণ খেলাপিকে আইনগতভাবে মোকাবেলা করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদশ অর্থনীতি সমিতি। একই সঙ্গে আর্থিকখাতের জন্য আলাদা ন্যায়পাল নিয়োগ করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। 

শনিবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে’ শীর্ষক প্রাক বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।  

এতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ও সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।

 

ড. আবুল বারকাত বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শীর্ষ খেলাপিদের কাছে আটকে আছে অধিকাংশ টাকা। এসব ঋণ আদায় করতে পারলে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্থবির হতে পারে।  

‘তাই শীর্ষ ১০০ ঋণ খেলাপির মোকাবেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও আর্থিক খাতের জন্য আলাদা ন্যায়পাল নিয়োগ করার দাবি করছি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি খেলাপি ঋণের জালে বন্দি হয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ’ 

আরও পড়ুন>>
** 
১২ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের জন্য আমরা যেসব বিষয় বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করার সুপারিশ অতীতে দিয়েছি সেগুলো খুব একটা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বিষয়গুলো আবারও তুলে ধরছি।  

‘এর মধ্যে এক কোটি টাকার কম পুঁজি সম্পন্ন উদ্যোক্তাদের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ প্রদানে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা। প্রতিটি ব্যাংকে উদ্যোক্তা সেল গঠন। ঋণ হতে হবে চাহিদ তাড়িত; সরবরাহ তাড়িত নয়। স্থানান্তর যোগ্য সম্পদের ভিত্তিতে গ্রুপ ব্যাংকিং সিস্টেমে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে ঋণ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উল্লেখযোগ্য। ’
                                                                          অর্থনীতি সমিতি বলছে, দেশে ধনী-গরিবের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বড় দুর্ভাবনার বিষয়। দরিদ্র মানুষের ৮২ শতাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামে ৬০ শতাংশ খানা ভূমিহীন, ৪০ শতাংশ খানায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ৬০ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে কার্যত বঞ্চিত। ১০ শতাংশ ধনী শ্রেণির মোট সম্পদের প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক। তারা আসলে রেন্ট সিকার।  


সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, আমাদের (অর্থনীতি সমিতি) এখান থেকে কেউ যদি অর্থমন্ত্রী হয়, তাহলে এ বাজেট পেশ করতেন। এটা উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট প্রস্তাব কেউ কেউ বলতে পারেন! যারা গত অর্থবছরের বাজেটকেও উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট বলেছেন। আমাদের দেশে বিরোধীদলের কাজই হলো বাজেট প্রস্তাবের পর, এটাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট ও গরিব মারার বাজেট বলা ইত্যাদি।

বাজেটে কালো টাকার ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মতে দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, কালো টাকা মোট জিডিপির ৪২ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ। এটাকে কমানোর জন্য সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে।  

‘এর সঙ্গে একটি কমিশনও গঠন করতে পারে। যারা সরকারি অর্থ যারা নড়াচড়া করেন, তারা এ অর্থ না খেয়ে থাকতে পারে না। ’ 

আয় বাড়াতে রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে লিখিত বক্তব্যে ড. আবুল বারকাত আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বাজেট তৈরি করা হয় সব মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং অর্থ বিভাগ তা চূড়ান্ত করে। এ ব্যবস্থায় সৃজনশীল চিন্তার সুযোগ কম। এক্ষেত্রে শুধু মেকানিক্যাল অর্থাৎ শতকরা হার বৃদ্ধি অথবা ব্যবহার করা হয়। এতে সমস্যার দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় না। বাজেট বাস্তবসম্মত হয় না।  

‘এ অবস্থা নিরসনে আমরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজস্ব কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করছি,’ বলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এসই/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।