ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

সোনালি আঁশে হতাশ কৃষকরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
সোনালি আঁশে হতাশ কৃষকরা পাটক্ষেতে কাজ করছেন কৃষকরা। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): সোনালি আঁশের কাঙ্খিত দাম ও কাটার পর জাগ দেওয়ার(পচানো) জায়গা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। খাল-বিলের পানি না থাকায় পাট চাষের প্রতি দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। এবার যশোরের শার্শায় লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগও চাষ করেননি কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, সরকার পাট চাষিদের প্রতি এখনি দরদী না হলে সামনের দিনে সোনালি আঁশ পাট চাষ হুমকির মুখে পড়বে।  

কৃষি বিভাগ বলছেন, সংকট নিরসনে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা শার্শার সবুজ শ্যামল বিস্তীর্ণ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ইরি ধান ঘরে উঠানো শেষে  অধিকাংশ জমিতে গতবার পাট এখন সেখানে অন্য ফসলের চাষ করছেন কৃষকরা। কিছু জমিতে দেখা মিলেছে পাটের। খরচ কমাতে বেশির ভাগ চাষিরাই তাদের জমিতে দিনমজুরদের সঙ্গে পাটক্ষেতের পরিচর্যায় কাজ করছেন। কেউবা রোগ এড়াতে কীটনাশক স্প্রে করছেন।

বাংলানিউজের কথা হয় শার্শা উপজেলার পুটখালী গ্রামের পাটচাষি আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, গতবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বাজার দর  ভাল না পাওয়ায় তার পাঁচ হাজার টাকার মতো লোকশান হয়েছে। তাই এবার তিনি কমিয়ে দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। খরচ না উঠলে চাষিরা এ চাষ বন্ধ করে দেবেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পাটচাষি আমির হোসেন।

পাটচাষি কাশেম জানন, এবার পাট চাষ ভাল হলেও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়েছে। এছাড়া প্রচন্ড তাপদাহের কারণে জমিতে পানি সেচ দিতে বাড়তি খরচ হয়েছে। এতে খরচ আর পরিশ্রমের পর যদি ভাল বাজার মূল্য না পাই তাহলে পাট নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছি তা মিথ্যা হবে।  

পাটক্ষেতে কাজ করছেন কৃষকরা।  ছবি: বাংলানিউজ

কনেদাহ গ্রামের চাষি শওকত জানান, হাওড়-বাওড়ে পাট না পচালে ভাল রং আসে না। কিন্তু এ অঞ্চলের খাল, বিলও নদী-নালা প্রায় সব প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এছাড়া গ্রামের পুকুরগুলোতেও এখন মাছ চাষ বেড়েছে। আর প্রচন্ড তাপদাহে খাল, বিলও জলাশয় পানি শুণ্য হয়ে পড়েছে। মাত্র দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পাট কাটতে হবে। এখন কোথায় যে পাট জাগ দেবো এনিয়ে দুচিন্তা বাড়ছে। সরকার যদি খাল-বিল-জলাশয় আগের মতো উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে এ দুচিন্তা হতো না।  

পাটচাষি জহিরুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিবর্তে পাত্রের পানিতে পাট পচানোর আধুনিক প্রযুক্তি রিবনার পদ্ধতির কথা বলে আসছেন। কিন্তু এ মেশিনে কাঁচা পাটের ছাল ছাড়ানো ব্যয়বহুল। এক বিঘা জমির পাটের ছাল ছাড়াতে ৩৫ জন দিনমজুর লাগে। ছাল ছাড়ানোর আগে পাতা ফেলতে লাগে আরও ১০ জন। মজুর প্রতি ২৫০ টাকা হিসাবে ৪৫ জনের মজুরি দিতে হয় ১১ হাজার ২৫০ টাকা। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে পাট পচিয়ে আঁশ ছাড়াতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। সাশ্রয়ী না হলে কোনো প্রযুক্তিই গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানান তিনি।  

সোমবার (২১ মে) সকালে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘শার্শা উপজেলায় এ বছর ৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে মাত্র এক হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। পাট জাগ দেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় চাষিরা এ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ঝুঁকে পড়ছেন অন্য চাষে। রিবনার পদ্ধতি ব্যববহুল হওয়াতে চাষিরা তা ব্যবহারও করছে না। তবে জলাশয়ের সংকট হলে চাষিদেরকে জমিতে গর্ত করে সেখানে পানি আটকিয়ে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।  

জানা যায়, সোনালি আঁশ উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশ সারাবিশ্বের উৎপাদিত পাটের ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ পাট উৎপাদন করে থাকে। বিদেশে পাটের রফতানিও বাড়ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধিকতায় পাট চাষের উপকূল পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় এ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পাটচাষিরা আবারও উদ্বুদ্ধ হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮ 
এজেডএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।