ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেছালো পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ, ব্যয়ও বাড়ছে ৪২৬৯ কোটি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
পেছালো পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ, ব্যয়ও বাড়ছে ৪২৬৯ কোটি পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ/প্রতীকী ছবি

ঢাকা:  ‘পদ্মাসেতু রেলসংযোগ’ প্রকল্পের মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। শুধু ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজ চলমান আছে। এর ফলে বাড়ছে সময় আর ব্যয়। আর সে ব্যয় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।

রাজধানী থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথটি যশোরে গিয়ে মিলিত হবে। এটা নির্মাণে আরও ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

একই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের সময় আরও দুই বছর বাড়াচ্ছে।
 
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এমন প্রস্তাব নিয়ে যাচাই-বাছাই শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সবশেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
 
প্রকল্পটি দেখভাল করছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের (রেল পরিবহন উইং) সিনিয়র সহকারী প্রধান জয়নাল মোল্লা।  

প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেলমন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব আমাদের হাতে এসেছে। প্রকল্পে সময় ও ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখতে বুধবার (২৫ এপ্রিল)  পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপরেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
 
২০১৬ সালের মঙ্গলবার (৩ মে) পদ্মাসেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন রেলওয়ে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় একনেক সভায়।  তবে এখন ফলে প্রকল্পের ব্যয় আরো ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মানে কয়েক দফায় বেড়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৩৯ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়।  
জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু এখন সময় আরো দুই বছর বেড়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত গড়াবে।  

প্রস্তাবিত ব্যয়বৃদ্ধির এই প্রকল্পটিতে সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়া চীন সরকার জি-টু-জি পদ্ধতিতে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। তবে প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন বেড়েছে, কমেছে চীনা ঋণ সহায়তা।
 
মূল প্রকল্পে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিলো ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ফলে এখন দ্বিগুণ হচ্ছে সরকারি অর্থায়ন।  

অন্যদিকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে চীন সরকারের অর্থায়ন কমছে।
 
নানা কারণে প্রকল্প সংশোধন ও সময় বাড়ছে বলে জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়নি। ৮৬ একর অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৬৬ লাখ ব্যয় বাড়ছে। এছাড়াও  বেতন ও ভাতা খাতে ১২ কোটি ৯৮ লাখ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের অন্যান্য  ইনপুটের ব্যয় ১৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং একইসঙ্গে রেলপথ নির্মাণ খাতে ৯৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে। এই কাজগুলো বাড়তি বাস্তবায়ন করতে হবে বলেই  ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত লাগবে। একই সঙ্গে আরও দুই বছর বাড়তি সময় লাগবে।
 
চীনের সঙ্গে এখনও ঋণচুক্তি হয়নি। তবে দুই বছর আগে কমার্শিয়াল চুক্তি হয়েছে। চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি হলেই শুরু হবে মূল কাজ। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন খাত শুরু হয়েছে। এতেই বাড়লো সময় ও ব্যয়।
 
এই দুই খাতে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২ হাজার ১৯৬ দশমিক ২৯ কোটি বা ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ১০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
 
বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম-মহাপরিচালক (প্রকৌশল)  মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়নি। এখন ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজ চলমান। চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তির পরেই শুরু হবে মূল কাজ। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন খাতে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ’
 
প্রকল্পের আওতায় লুপ সাইডিংস এবং ডাবল লাইনসহ মোট ট্র্যাক হবে ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার। পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য মোট দৈর্ঘ্যকে চারটি সেকশনে ভাগ  করা হয়েছে। প্রথম সেকশন ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া, দ্বিতীয় সেকশন গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া, তৃতীয় সেকশন মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং চতুর্থ সেকশন ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর পর্যন্ত।
 
পদ্মাসেতু হবে ডাবল ডেক বিশিষ্ট এই সেতুর উপরের ডেকে চারলেন সড়কপথ এবং নিচের ডেকে ব্রডগেজ সিঙ্গেল রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে যশোর, খুলনা, বেনাপোল ও মংলা পযর্ন্ত সরাসরি পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা থেকে যশোর পযর্ন্ত নতুন রেলওয়ে করিডোর নির্মাণ করা হবে। নতুন রেলপথটি মতিঝিল, সবুজবাগ, সূত্রাপুর, ডেমরা, কেরানীগঞ্জ, ফতুল্লা, সিরাজদীখান, শ্রীনগরের লৌহজং ও জাজিরায় গিয়ে মিলবে।
 
এরপর শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা, গোপালগঞ্জের মোকসুদপুর ও কাশিয়ানিতে একটি নতুন রুট নির্মাণ করা হবে। নড়াইল সদর, লোহাগড়া হয়ে সর্বশেষ যশোর সদর ও বাগপাড়ায় রেলপথটি সমাপ্তি টানবে।
 
প্রকল্পের আওতায় ২৪ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, দুই কিলোমিটার র্যাম্পস, ৬৬টি ছোট ছোট সেতু, ২৪৪টি কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং ও ৪০টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।
 
১৪টি নতুন ও ৬টি বিদ্যমান সেকশনের উন্নয়ন করাসহ ১ হাজার ৬৬৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে এবং ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী বগি কেনা হবে। ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। আর সুপারভিশন কনসাল্টেন্সি সার্ভিসে হবে আধুনিকায়ন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad