ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মধ্যপাড়া খনিতে মিলবে সিরামিক তৈরির কাঁচামাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭
মধ্যপাড়া খনিতে মিলবে সিরামিক তৈরির কাঁচামাল টাইলসের ছবি/সংগৃহীত

ঢাকা: দিনাজপুরের মধ্যপাড়ায় কঠিন পাথরের খনিতে গ্রানাইট শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে। এজন্য ১ দশমিক ৪৪ বর্গ কিলোমিটারের খনি সাড়ে ৬ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। আরও আশার খবর হলো খনি ভেতর থেকে যে ডাস্ট তৈরি হবে, তা সিরামিক তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে ওই ডাস্ট সিরামিক তৈরির কাঁচামালের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে যে কয়েকটি খাতের আওতা বাড়ছে তার মধ্যে অন্যতম সিরামিক অন্যতম।

এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ৭০০ লাখ স্কয়ার মিটার টাইলস। বর্তমানে চাহিদার ৭৬ শতাংশের বেশি পূরণ হচ্ছে দেশে উৎপাদিত টাইলস থেকে। তবে কাঁচামাল আমদানির ৯৫ শতাংশই আমদানি করা হয়।
 
চলমান ১০টি মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান করতে বছরে দেশে পাথরের চাহিদা হবে এক কোটি মেট্রিক টন। পাথরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সিরামিক তৈরির কাঁচামালের সংস্থান মধ্যপাড়া নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া এলাকায় ভূগর্ভস্থ কঠিন শিলার পাশাপাশি গ্রানাইট শিলার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ শিলা উত্তোলনে জন্য দিনাজপুরের মধ্যপাড়ার পাথর খনি আরও সম্প্রসারণ করা হবে। খনি থেকে ডাস্ট সংগ্রহ করা হবে। এই ডাস্ট পরবর্তীতে সিরামিক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। একই সঙ্গে গ্রানাইট শিলাও এখানে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা সিরামিক পণ্য উৎপাদনে সহায়ক হবে।
 
সিরামিকের কাঁচামাল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, মধ্যপাড়ায় আমরা একটা জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে করেছি। এতে দেখেছি গ্রানাইট শিলা পাওয়া যাবে। যেটা সিরামিক পণ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো। সিরামিক পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। মধ্যপাড়ায় সিরামিক পণ্য তৈরির কাঁচামাল পেলে আমাদের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল। দেশের অনেক টাকা সাশ্রয়ও হবে।  
 
বর্তমানে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সাদা ক্লে ও সিলেটে কিছু পাথর পাওয়া যায়। এগুলো স্বল্প পরিসের সিরামিক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। তবে দেশের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। মধ্যপাড়ায় সিরামিক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্ট্যাডি করে সেই সন্ধান পাওয়া গেছে। মধ্যপাড়ার পাথর স্ল্যাব আকারের ব্যবহার করা। ফলে বিদ্যমান পাথরের খনির নতুন করে সংস্কার করবে সরকার। ‘গ্রানাইট স্ল্যাব প্রিপারেশন অ্যান্ড এনহ্যান্সমেন্ট অব স্টোন প্রোডাকশন বাই এক্সপানেশন অব মধ্যপাড়া মাইন’ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।

এর পরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বছরে কি পরিমাণে সিরামিক তৈরির পাথর উত্তোলন করা যায়। অক্টোবর ২০১৭ থেকে এপ্রিল ২০১৯ মেয়াদে মধ্যপাড়া পাথর খনির ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা হবে। এ প্রকল্পে ৪৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবে পেট্রোবাংলা।
  
প্রকল্পের জিওলজিক্যাল সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী ভূ-অভ্যন্তরে উত্তোলনযোগ্য মজুদ পাথরের প্রতি ব্লক দশমিক ৯ মিটার হবে। মধ্যপাড়া এলাকার মূল্যবান মসৃণ গ্রানাইট কঠিন শিলা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ শিলা গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজে এবং সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে বিদেশ থেকে এ ধরনের স্ল্যাব -টাইলস বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।  

প্রকল্পের আওতায় ৫০ দেশি এবং ৪৩ জন বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার ২-ডি সাইসমিক সার্ভে করা হবে।
 
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, মধ্যপাড়া ভূ-অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাথরের মজুদের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চাহিদা বিবেচনায় খনি এলাকা সম্প্রসারণ করা হবে। বিভিন্ন সাইজের পাথরও উত্তোলন করা হবে মধ্যপাড়া খনি থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় গ্রানাইট পাথর উত্তোলনের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাতে করে পাথর থেকে টাইলস বা স্লাব তৈরির বিষয়টি বিবেচিত হয়।

সিরামিক উৎপাদনের কাঁচামাল পাওয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন আশার আলো হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) সূত্র জানায়, প্রতি বছর ৯৫ শতাংশ সিরামিকের কাঁচামাল আসে বাইরে থেকে। বিশেষ করে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে। আর ৫ শতাংশ কাঁচামাল সিলেট অঞ্চল থেকে আসে।

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) জামিল এ আলীম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে বর্তমানে পাথরের চাহিদা বেড়েই চলেছে। অথচ শুধুমাত্র মধ্যপাড়ায় পাথর উত্তোলন করা হয়। এখানে উৎপাদন ক্ষমতাও কমে গেছে। মধ্যপাড়া খনির গ্রানাইট পাথর স্ল্যাব আকারে উত্তোলন করবো। এটা সিরামিক পণ্য উৎপাদনে সহায়ক হবে। কঠিন ও গ্রানাইট পাথর উত্তোলন বৃদ্ধির জন্য খনি সম্প্রসারণে কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৭
এমআইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad