ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

কম্বাইন হারভেস্টারে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
কম্বাইন হারভেস্টারে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষক

ঢাকা: পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বিগত দিনগুলোতে চাষাবাদ করে তেমন কোনো উন্নতি করতে পারেননি। মৌসুমের সময় শ্রমিক সঙ্কটসহ নানাবিদ সমস্যার কারণে কৃষি কাজ থেকে বিরত থাকার উপক্রম হচ্ছিলো তার।  

গতবছর জানতে পারেন এসিআই কম্বাইন হারভেস্টার সম্পর্কে। মেশিনটি কেনার পরই শ্রমিক সমস্যা, মাড়াই সমস্যাসহ একে একে সব সমস্যা দূর হতে থাকে তার।

ওই মৌসুমে তার নিজের জমি ছাড়াও অন্যান্য  কৃষকের প্রায় ২০০ বিঘা জমির ধান কাটেন তিনি।  

প্রতি বিঘা ধান কাটতে তার খরচ হয়েছে ২০০ টাকা আর তার আয় হয়েছে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা। এতে খরচ বাদ দিয়ে গত মৌসুমেই তার লাভ করেছে প্রায় ৩ লাখ টাকা।
 
নেত্রকোনার উদ্যোমী কৃষক মোমেন। কিছু লেখাপড়া করলেও চাকরি না পেয়ে বাবার কৃষি জমির হাল ধরেন। বেকারত্ব ঘোচাতে বেচে নেন কৃষি কাজ। ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকটে ভূগেছেন। সময়মতো ধান কাটতে না পেরে ধান নষ্ট হয়ে গেছে।  

উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারেন কম্বাইন হারভেস্টার। সে বছরেই ঋণ নিয়ে কিনে নেন যন্ত্রটি। গত মৌসুমে তিনি নিজের জমি ছাড়াও আরও ১০০ বিঘা জমির ফসল কেটেছেন। যার মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়তি আয় করেছেন।

সিরাজগঞ্জ ও নেত্রকোনার এ দুই কৃষকের মতো সারা দেশের কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার। যন্ত্রটি জনপ্রিয় করতে কোম্পানিগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেমনি সরকারের উদ্যোগও কাজে লাগছে।  যন্ত্রটি সম্পর্কে সব ধরনের সেবা কৃষককে সার্বক্ষণিক প্রদান করছে এসিআই।

আবার যন্ত্রটি ক্রয়ে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি সহায়তা দিচ্ছে সরকার। চলতি বছর ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উত্পাদন বৃদ্ধি দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে মাত্র ১২৫টি মিনি কম্বাইন হারভেস্টারের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও চাহিদা রয়েছে এক হাজারের বেশি।
 
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিমউদ্দিন বলেন, দেশের কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট মিটিয়ে নিজেদের সচ্ছলতার মাধ্যম হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হারভেস্টারের দিকে ঝুঁকছেন মাঝারি ও বড় পর্যায়ের কৃষকরা।  

‘যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে ফসলের উত্পাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি শ্রমিক সংকট কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ প্রয়োজনীয়তার দিকটি মাথায় রেখে কৃষকদের মাঝে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি সহায়তাও বাড়ানো হচ্ছে। ’
 
কৃষক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনি কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো যায়। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে সময় বাঁচায় ৭০-৮২ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।  

প্রচলিত পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান বা গম কাটতে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। সেখানে মিনি কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারে লাগে মাত্র ৪০০ টাকা। এটি অল্প কাদার মধ্যেও ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে এ যন্ত্র দিয়ে কাটার পর খর থাকে আস্ত।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, বর্তমানে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের অভাব প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় কৃষিকে লাভজনক করার একমাত্র পথ কৃষির যান্ত্রিকীকরণ।  

এ অবস্থায় শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে কম্বাইন হারভেস্টার জনপ্রিয় করতে হবে বলে জানান তিনি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এসই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।