ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

দেশের সেরা চা বিটিআরআই ‘টি-গোল্ড’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
দেশের সেরা চা বিটিআরআই ‘টি-গোল্ড’  শ্রীমঙ্গলের একটি সুদৃশ্য চা বাগান। ইনসেটে বিটিআরআই টি গোল্ড/ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। রঙেও চমৎকার। একবার খেলে এই চা আবার খেতে মন চায়। এমন শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) প্রস্তুত করা ‘টি-গোল্ড’ চা পাতা।

সবুজ বর্ণের পাতাগুলো প্রক্রিয়াজাত হয়ে রূপান্তরিত হয় কালো দানায়। এর সংক্ষিপ্ত নাম ‘টি-গোল্ড’ বা ‘টি-জি’ হলেও অফিসিয়াল নামটি কিন্তু তা নয়।

‘DMP5 ক্লোন বিটি-২ স্পেশাল টি-গোল্ড’ হলো  এর অফিসিয়াল নাম। নামটি বড় হওয়ায় টি-গোল্ড নামেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।  

চায়ের তীর্থস্থান শ্রীমঙ্গল। প্রতি সপ্তাহে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন এখানে। শ্রীমঙ্গলে এসে অনেকেই উন্নতমানের চা কিনতে আগ্রহী হন। এ ধারণা থেকেই খোঁজ পড়ে উন্নতমানের চায়ের। ইতোমধ্যে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া বিশেষ চায়ের নাম টি-গোল্ড।

বিটিআরআই সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে বিটি-২ ক্লোন চা আবিষ্কার করেন তৎকালীন চা বিজ্ঞানী ড. হারাধন চক্রবর্তী। বিটি-২ ক্লোন আবিষ্কৃত হওয়ার প্রায় সাত বছর থেকে টি-গোল্ড চা অল্প পরিমাণে উৎপাদন হতে শুরু হয়। তখন এ চায়ে ক্রেতার চাহিদা এখনকার মতো পর্যপ্ত ছিল না বলে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হতো।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘ক্রপ-প্রোডাকশন’ বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফ্লেভার (ঘ্রাণ) এবং টেস্টে (স্বাদ) জন্য এ চায়ের চাহিদা ‘হটকেক’এর মতো । এটি বিটি-২ ভ্যারাইটির চা। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ চা টি-গোল্ড।  

বড় দানার গ্রেড জিবিওপি টি-গোল্ড, ছবি : বাংলানিউজতিনি আরও বলেন, এই চায়ের দানার গ্রেডের নাম ‘জিবিওপি’। ইংরেজিতে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘গোল্ডেন ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’। এর দানাগুলো অন্য চায়ের দানা থেকে তুলনামূলক বড় ও দেখতে সুন্দর। অল্প পাতায় গাঢ় ও অধিক স্থায়ীত্ব লিকার হয়। যারা অভিজাত শ্রেণীর লোক তারা এই গ্রেডটি ভীষণ পছন্দ করেন।

এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘টি-গোল্ড’ জিবিওপি গ্রেডের চা। জিবিওপি গ্রেডের বৈশিষ্ট্যিই হলো ডিপনেস, ভেরি স্ট্রং লিকার অ্যান্ড স্ট্রেংথ। ডিপনেস এখানে সজীবতা। এই সজীবতাটাই খুব বেশি এ চায়ে। যারা ফ্লেভার (ঘ্রাণ) পছন্দ করেন আবার স্ট্রং লিকারের (কড়া রং) চা-ও চান তাদের কাছে এ চা খুবই পছন্দের। আর ‘গোল্ড’ কথাটা এসেছে ‘গোল্ডেন ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’র গোল্ডেন থেকে। চায়ের অরিজিন যেহেতু চীন, তাই চায়ের এ অভ্যন্তরীণ শব্দগুলো কিন্তু এখনো চায়নিজ ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

‘টি-গোল্ড’ এর পাতা চয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, বিটি-২ ক্লোন চা গাছের একেবারে নরম দু’টি পাতা একটি কুঁড়িগুলো প্রথমে নির্বাচন করা হয়, তারপর এই চা-কে আরো উন্নতমানে রূপান্তরিত করতে চায়ের গ্রেডটি ‘জিবিওপি’ গ্রেডে রাখা হয়। এক কথায় বলা চলে এই চায়ে ফ্লেভার, লিকার, টেস্ট এবং ফ্রেশনেস- এ সবই অন্য চায়ের থাকে অনেক বেশি। এ কারণেই চা-প্রেমীরা এ চায়ে চুমুক দিলেই উপলব্ধি করতে পারেন এর শ্রেষ্ঠত্ব।  
টি-গোল্ডের প্যাকেট, ছবি : বাংলানিউজ
শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য চা বিক্রি প্রতিষ্ঠান গুপ্ত টি হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী পিযুষ কান্তি দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, কি করে একই চা গাছে বেশি লিকার (রং), বেশি ফ্লেভার (গন্ধ), বেশি টেস্ট (স্বাদ) পাওয়া সম্ভব– এ উদ্দেশ্য থেকেই বিটিআরআই এর চা বিজ্ঞানীরা বহু রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিটি-২ নামের একটি বিশেষ ক্লোন চা গাছ উদ্ভাবন করেন।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বিটিআরআই এর ‘বিটি-২০’ নামের বিশটি ক্লোন চা আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেই বিটি-২ এর গুণগতমান সবগুলো ক্লোন থেকেই আগে। আর এই বিটি-২ ক্লোন দিয়েই বিশেষভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকে ‘টি-গোল্ড’ চা। যা সব চায়ের থেকে অধিক উন্নত। এক নম্বর গ্রেডের পাতায় তৈরি এই সেরা চায়ের দাম কেজি প্রতি ছয়শত টাকা।  

গুপ্ত টি হাউস চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্র থেকে বিটিআরআই এর টি-গোল্ড চায়ের শতকরা ৯৫ শতাংশই কেনে বলে জানান পিযুষ কান্তি দাশগুপ্ত।

তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার চা সম্পর্কে পীযুষ কান্তি দাশগুপ্ত বলেন, চা পাতার গ্রেডের মধ্যে রয়েছে ‘ফ্লেভার ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’ (এফবিওপি); ‘গোল্ডেন ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’ (জিবিওপি); ‘ব্রোকেন অরেঞ্জ পিকো’ (বিওপি); ‘অরেঞ্জ পেনিং’ (ওপি); ‘পিকো ফ্লেভারি’ (পিএফ); ‘ফ্লেভার অরেঞ্জ পেনিং’ (এফওপি); ‘পেকো ডাস্ট’ (পিডি); ‘রাউন্ড ডাস্ট’ (আরডি); ‘ক্রাবিং ডাস্ট’ (সিডি) এবং ‘গুঁড়া’ (ডাস্ট)।

মানের দিক থেকে ফ্লেভার অরেঞ্জ ব্রোকেন পিকো (এফবিওপি) সবার উপরে। এই চা পাতাই বিভিন্ন নামে বাজারজাত হয়ে থাকে। আর সর্বনিম্ন চা গুঁড়া (ডাস্ট) বলে জানান তিনি। আর মান ভেদে দাম ২শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।