ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এবার তিন মোবাইল কোম্পানির ২৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি!

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এবার তিন মোবাইল কোম্পানির ২৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি!

ঢাকা: বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি আজিয়াটা লিমিটেড স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ সরকারের পাওনা ২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) এ ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা উদ্‌ঘাটন করেছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে মোবাইল কোম্পানিগুলো ওই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

ফাঁকি দেওয়া অর্থ আদায়ে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) মোবাইল কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ।

চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ওই ৬ মাসে স্থান ও স্থাপনার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ গ্রামীণফোন ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বাংলালিংক ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ও রবি ৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

ভ্যাট ফাঁকির সম্পূর্ণ অর্থ ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে কোম্পানিগুলোকে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে বৃহৎ করদাতা ইউনিট স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার হিসাব চাইলে কোম্পানিগুলো ফাঁকি দেওয়া এ অর্থের কোনো হিসাব দেয়নি। যার কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়ে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে এলটিইউ।  


সূত্র আরও জানায়, মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৩৭ ধারার উপধারা (৩) অনুসারে অপরিশোধিত মূসকে সুদের হার ২ শতাংশ। প্রাথমিক দাবিনামা জারির পর থেকে এ সুদ প্রযোজ্য।

এর আগেও  স্থান ও স্থাপনা ভাড়া বাবদ ৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয় চার মোবাইল অপারেটর। এর মধ্যে এয়ারটেল ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩০৮ টাকা ১০ পয়সা, গ্রামীণফোন ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, বাংলালিংক ৩৪ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৫৬ টাকা ৬৫ পয়সা এবং রবি ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৭ টাকা দেয়নি।

ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের রাজস্ব উদ্বারে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট গত বছরের জুন মাসে মামলা করেছে। এ মামলার রায়ও এনবিআরের পক্ষে দিয়েছেন আপিলাত ট্রাইব্যুনাল। ফাঁকি দেওয়া ওই অর্থও পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিগুলোকে।

এছাড়া  সিম পরিবর্তনের নামে ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় মোব‍াইল কোম্পানিগুলো। দীর্ঘ ২ বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ২২ জুন এনবিআরের পক্ষে রায় দেন আদালত। বর্তমানে ফাঁকি দেওয়া সেই রাজস্বের পরিমাণ (সুদসহ) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ অর্থও পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিগুলোকে।

২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়েও সিম পরিবর্তনের নামে মোবাইল কোম্পানিগুলো সরকারের আরও ৮৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট এ ভ্যাট ফাঁকিও উদ্‌ঘাটন ও মামলা করেছে।
 
তবে স্থান ও স্থাপনার ওপরে ভ্যাট ফাঁকি বিষয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো বলছে, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট ফাঁকির যে অভিযোগটি তুলে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে, সেটি সঠিক নয়। কেননা, স্থান ও স্থাপনা বাবদ ভ্যাট মালিক দেবেন, কোনো কোম্পানি নয়। ফলে এটি কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।
 
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) সহকারী কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, সকল প্রতিষ্ঠান স্থান ও স্থাপনার ওপর ভ্যাট দিলেও মোবাইল কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না। যার কারণে এর আগে তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে। ৩০০ বর্গফুটের ওপরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনার ভাড়া বাবদ ভ্যাট কোম্পানিকেই দিতে হবে, মালিকপক্ষকে নয়। ফলে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট মোবাইল কোম্পানিগুলোকে পরিশোধ করতেই হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।