ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালের দাম বাড়ছে মজুদদারিতেই!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
চালের দাম বাড়ছে মজুদদারিতেই! বড় মিলাররা ধান মজুদ করে রাখায় চালের মূল্য বাড়ছেই- অভিযোগ সব মহলের। ছবি: বাংলানিউজ

নওগাঁ: গত ছয়মাস ধরে উর্দ্ধমুখী সিদ্ধ চালের বাজারদর। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দামই  ৫০ টাকা, খুচরা বাজারে যা ৬০ টাকার কাছাকাছি।

তবে নওগাঁর পাইকারি আড়তগুলোতে মোটা জাতের চাল নেই বললেই চলে।

কোরবানির ঈদের আগে-পরে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই সব ধরনের চালের পাইকারি মূল্য বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা।

যা মাঝারি,  ক্ষুদ্র চাষি ও শ্রমজীবীসহ সাধারণ  মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এর আগে কখনোই এতো দামে চাল কিনতে হয়নি। সে সময়কার ৩২ টাকার চালও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

সরু চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা।

কোরবানির ঈদের আগে সরু জাতের জিড়া, পাইজাম, নাজিরসহ প্রকারভেদে বিভিন্ন জাতের সরু চাল পাইকারি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। সেই চালেরই বর্তমান বাজারদর ৬০ টাকার ঘরে।


চলমান এ অস্থির পরিস্থিতির জন্য বড় বড় মিলার ও আমদানিকারকদের দায়ি করছেন সচেতন মানুষ। তারা বলছেন, বড় মিলাররা ধানের মজুদ রেখেছেন পাহাড়সম। ইচ্ছেমতো দরে চাল ছাড়ছেন তারা।

নওগাঁ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন মুকুল অভিযোগ করেন, ‘চালের বাজার দরে অস্থিরতা চালকল মালিক ও আমদানিকারকদেরই সৃষ্টি করা। তারা বেশি মুনাফা লুটতে কৌশল অবলম্বন করছেন’।

‘বড় মিলারদের কাছে চালের বাজার জিম্মি হয়ে পড়ছে। মৌসুমের শুরুতেই হাট থেকে ধান কিনে পাহাড় সমান মজুদ গড়ে তুলেছেন তারা। হাতেগোণা গুটিকয়েক ওই মিলারদের গুদামে হাজার হাজার টন ধান আছে। ইচ্ছামতো বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করে চাল ছাড়ছেন’।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া ভারত থেকে চাল আমদানিকারকরা দেশে খাদ্য সংকটের গুজব ছড়িয়েছেন। একইসঙ্গে ভারতীয় চাল আসা বন্ধ হচ্ছে- এমন উড়ো খবরও ছড়িয়েছেন। এরপর  স্বর্ণা জাতের চাল আমদানি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন’।

চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে মাঠে নামতে হবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করতে হবে। পাশাপাশি মজুদদার ও মুনাফালোভীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন জয়নাল আবেদীন মুকুল।

নওগাঁর পুরনো চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশে চালের বড় আকাল পড়ে ৪/৫ বার। সববারই মূল্য নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেসব অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগাতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক দশকে চালের মূল্য ওঠা-নামা করেছে সহস্রাধিকবার। তবে আকাল পড়েছিলো ৪/৫ বার। ২০০৭ সালের নভেম্বরে ২০ টাকা থেকে মোটা চালের কেজিপ্রতি মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দর নেমেছিলো পরের বছর মে মাসে। এরপর ২০১০ সালে ২২ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা, ২০১৩ সালে ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ টাকা, ২০১৬ সালে ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়। আর চলতি বছরে গত ছয়মাস ধরে চলছে অস্থিরতা।

চালের বাজারের সেই অস্থির সময়গুলোতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপে স্বস্তি ফিরেছিলো।

নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন দাবি করেন, ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে বড় ধরনের খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। সরকারি গুদামেও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে বাজার, কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যও। ভারত চাল রফতানি বন্ধ করলে আরো সংকটের দিকে যেতে পারে।

‘অতীতে এ ধরনের সংকট মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে বেশি বেশি আমদানি করা হয়েছিলো। একইসঙ্গে স্বস্তি ফেরাতে সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হয়’।

তিনি জানান, সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন বৈঠকে ও গণমাধ্যমে এবারও সংকটের শুরু থেকেই এসব পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।

চালের ঘাটতি মোকাবেলার পাশাপাশি বাজারদর নিয়ন্ত্রণে অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেন নিরোদ বরণ সাহা চন্দন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।