ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

‘বন্যার পরে নাবি আমন ধানের জাত লাগাতে হবে’

বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭
‘বন্যার পরে নাবি আমন ধানের জাত লাগাতে হবে’

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): এবছর অতিবৃষ্টি, উজানের পানি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের অর্ধেক জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমির ফসল।

পানি কমলেও ধানের চারা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বন্যা পরবর্তী সময়ে বীজতলা তৈরী, চারা উৎপাদন এবং ধান গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপকরা।

বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা সাধারণত জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যেই হয়ে থাকে। আর আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এই সময়ে কৃষকদের কাছে আমন ধান লাগানো ছাড়া অন্য কোনো ফসল উৎপাদনের সুযোগ থাকে না। তাই বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষকদের নাবি আমন ধানের জাত লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, বন্যার সময় ফসলী জমি পানির নিচে থাকায় কৃষকরা বীজতলা তৈরী করতে পারেন না। তাই পর্যাপ্ত চারা না পাওয়ায় পানি নেমে যাওয়ার পরেও কৃষকরা জমিতে চারা রোপন করতে পারেন না। এই সমস্যা এড়াতে কৃষকরা কচুরিপানা ও পানিতে জন্মানো গাছপালা ধাপে ধাপে সাজিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরী করে সেখানে বীজ বপন করতে পারেন। এছাড়াও দাপগ পদ্ধতি ও কুশি আলাদাকরণ পদ্ধতির সাহায্যে কৃষকরা জমিতে চারা লাগাতে পারবেন।

পদ্ধতি দুটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বীজতলা তৈরী করার মত জায়গা না থাকলে দাপগ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির আঙ্গিনায় পলিথিন বিছিয়ে সরাসরি বীজ ঢেলে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো মাটির প্রয়োজন হয় না। তবে সাধারণ বীজতলার তুলনায় এ পদ্ধতিতে অধিক বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ১৫ দিনের মধ্যেই বীজের অঙ্কুরোদগম হবে এবং জমিতে লাগানো যাবে।

তিনি বলেন, কুশি আলাদাকরণ পদ্ধতিতে বন্যায় প্লাবিত হয়নি এমন জায়গায় চাষ করা ধানের কিছু কুশি নিয়ে এসে বন্যার পরে সরাসরি জমিতে লাগিয়ে দিয়েও ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। বীজ অঙ্কুরোদগমের পদ্ধতি অনুসরণ করে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই নাবি আমন ধানের জাত বিআর-২২ (কিরণ), বিআর-২৩ (দিশারী) ও ব্রিধান-৪৬ লাগানো গেলে আমন ধানের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, এসব জাতের ধান থেকে প্রতি হেক্টরে ৫-৬ টন ধান পাওয়া সম্ভব। তবে বন্যা পরবর্তী সময়ে ফসলের ভালো বৃদ্ধির জন্য চারা লাগানোর পরপরই প্রয়োজনীয় মাত্রার অর্ধেক ইউরিয়া সার জমিতে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ৩০ দিনপর দিতে হবে। অন্যান্য সার যেমন টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ইত্যাদি চারা লাগানোর পর পুরো ডোজই প্রয়োগ করতে হবে।

বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ কমানোর বিষয়ে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পূর্বেই জুনের দিকে জলাবদ্ধ সহ্যকারী ধানের জাত ব্রিধান-৫১ ও ব্রিধান-৫২ লাগালে বন্যার পানিতে ফসল নষ্ট হবার সম্ভাবনা কমে যাবে। বন্যায় ফসলের ক্ষতি হ্রাস করতে সরকারকে শস্য বীমা ও সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সাহায্য করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।