ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

কোরবানির চামড়ার চাপ নিতে প্রস্তুত নয় সাভার!

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
কোরবানির চামড়ার চাপ নিতে প্রস্তুত নয় সাভার! সাভারের চামড়া শিল্পনগরী- ছবি: বাংলানিউজ (ফাইল ফটো)

ঢাকা: কোরবানির ঈদের চামড়ার চাপ নিতে একেবারেই প্রস্তুত নয় সাভারের চামড়া শিল্প নগরী।

ট্যানারি মালিকদের দাবি, এমনিতেই চালু ৩৫টি ট্যানারির দূষণে বিপন্ন চামড়া শিল্প নগরীর পরিবেশ। ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে ওয়েট ব্লু’র পানিতে একাকার চারপাশ।

সিইটিপি পুরো চালু না হওয়ায় দূষিত পানিই ছাড়তে হচ্ছে ধলেশ্বরীতে। ক্রোমিয়াম ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ হয়নি। সলিড ওয়েস্টের দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত নতুন চামড়া শিল্প নগরীর ৬৭টি ট্যানারি এবার কোরবানির ঈদের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এক মাসের মধ্যে আরো ৩৫টি ট্যানারি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের কাজ শুরু করবে। যদিও নতুন এই শিল্প নগরী পুরোদমে চালু করার কাজ শেষ করতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। এই অবস্থায় কোরবানির সব চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু হলে বিষিয়ে উঠতে পারে সাভারের পরিবেশ।

তারা বলছেন, হাজারীবাগ থেকে পরিবেশের দোহাই দিয়ে তড়িঘড়ি করে সাভারের হরিণধরায় ট্যানারি স্থানান্তর হলেও চামড়া শিল্প নগরীর পরিবেশই ঠিক করতে পারেনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিসিক। চামড়ার ওয়েট ব্লুর পানি সিইটিপিতে নেওয়ার জন্য চীনের ঠিকাদাররা যে প্লাস্টিক পাইপ বসিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত চালু হওয়া ৩৫টি ট্যানারির ওয়েট ব্লুর কেমিক্যাল যুক্ত পানি টানতে পারছে না। এক মাসের মধ্যে যখন সব মিলিয়ে ১০০ ট্যানারি কাজ শুরু করবে তখন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াতউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিসিক চামড়া শিল্প নগরী বাস্তবায়নই করেছে ভুল পরিকল্পনা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে। চারটি সিইটিপি চালু করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দুইটি সিইটিপি চালু হয়েছে। প্রকল্পে ক্রোমিয়াম ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকার কথা থাকলেও তা কেবল পরিকল্পনাতেই রয়ে গেছে। অথচ ট্যানারি শিল্পের ৬০ ভাগ পরিবেশ দূষণই হয় ক্রোমিয়াম থেকে। চামড়া শিল্পে ৩০ ভাগ দূষণ হয় সলিড ওয়েস্ট থেকে। অথচ বিসিকের পরিকল্পনায় সেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্টের কোন চিহ্নই নেই।

কাঁচা চামড়া ওয়েটব্লু করার পর ক্রাস্ট পর্যায়ে নিতে প্রয়োজন গ্যাস সংযোগ। চালু হওয়া সবগুলো ট্যানারিতে এখন পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন অনেক ট্যানারি মালিক। তবে তিতাস থেকে ঈদের আগেই পর্যায়ক্রমে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ট্যানারিগুলোকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি জানান, সরকার এ বছর চামড়াকে “প্রোডাক্ট অফ দ্যা ইয়ার” ঘোষণা করেছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে সরকার ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আগামী ১৬ নভেম্বর দেশে লেদার কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। হাজারীবাগের ১৫৫টি ট্যানারি শিল্প সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করা যায় আগামী ঈদ উল আজহার আগেই ১০০টি কারখানা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এ দিকে শিল্প সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ চামড়া শিল্প নগরীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর কাজ শেষ হতে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই বিশেষ শিল্প নগরীতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে খোলা স্থানে সলিড ওয়েস্ট রাখার জন্য ইয়ার্ড তৈরির কথা বলা হয়েছিলো। এজন্য নির্দিষ্ট জায়গাও বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্ত সে স্থানে সলিড ওয়েস্ট রাখায় ব্যাপক দূষণের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, এজন্য আমরা পরিকল্পনা কমিশনে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি এবং ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করেছি। দ্রুতই সব কাজ শেষ হবে।  

এরই মধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে ট্যানারির সলিড ওয়েস্ট দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ এই শিল্প নগরীর বিদ্যুত সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের দ্রুত সংযোগ চাওয়া কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। পানিরও কোন সমস্যা নেই।

এদিকে গত ১৭ আগস্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন সাভারে ট্যানারি শিল্প প্রস্তুত হলো না এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ‘সাভারের ট্যানারি পল্লী ধলেশ্বরী নদীর পানিকে দূষিত করছে’-বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির এমন এক আবেদনে আদালত, ঈদের ১৫ দিন আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে আদালত এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীন বাংলাদেশ অংশীদারি প্রকল্পের প্রধানসহ তিনজনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর অন্যতম কারণ ছিলো ট্যানারি বর্জে্যর দূষণ থেকে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করা। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের হাইকোর্টে দাখিল করা একটি প্রতিবেদন বলছে, সাভারে স্থানান্তরের পর ট্যানারির বর্জ্যে এখন দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী।

প্রায় ৪০০ কোটির টাকার এ প্রকল্পের শুরু থেকেই চীন-বাংলাদেশ অংশীদারি প্রকল্পের বিরুদ্ধে ঢিমেতালে কাজের অভিযোগ ছিলো।

এদিকে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন বলছে, বিসিকের ব্যর্থতার কারণে ধলেশ্বরী দূষিত হলে তার দায় ট্যানারি মালিকরা নেবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
আরএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।