ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনাপোল বন্দরে ২ শতাংশ শুল্কে ভারতীয় চাল খালাস শুরু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
বেনাপোল বন্দরে ২ শতাংশ শুল্কে ভারতীয় চাল খালাস শুরু বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় চাল খালাস শুরু

বেনাপোল (যশোর): বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতি মেট্টিক টন চালের ওপর আমদানি মূল্যের দুই শতাংশ শুল্ককর পরিশোধের মাধ্যমে খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে চালের মূল্য কমাতে শুল্ককর ১০ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দিনভর বেনাপোল বন্দর থেকে প্রায় ৪ হাজার মেট্টিক টন চাল খালাস হয়ে দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা হয়।

বর্তমানে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৬০ শতাংশই চাল।

কিন্তু বন্দরে স্থানসংকুলান না হওয়ায় ভারতীয় চালের ট্রাক সড়কের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এর ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

রেজাউল অ্যান্ড সন্স নামে যশোরের এক আমদানিকারক ভারত থেকে ৩৯ হাজার ইউএস ডলার মূল্যে ১শ’ মেট্টিক টন চাল আমদানি করে সরকারকে ৬৭ হাজার ৬শ’ টাকা শুল্ককর পরিশোধ করে পণ্য খালাস নিচ্ছে। যার রফতানিকারক ছিলেন ভারতের কলকাতার এসেন্ট ডিয়াল ট্রেড প্রাইভেট লিমেটেড।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রূপালী এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার বিকেলে প্রতি মেট্টিক টন ২ শতাংশ হারে শুল্ককর পরিশোধে ২শ’ মেট্টিক টন চাল বন্দর থেকে খালাস নিয়েছেন তিনি। এর আগে প্রতি মেট্রিক টন ২৮ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধে ভারতীয় চাল খালাস হতো। পরে সরকার শুল্ককর কমিয়ে তা ১০ শতাংশ করে। বর্তামানে দেশে বন্যার কারণে চালের মূল্য আরও কমাতে সরকার ১০ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশ শুল্ককর নির্ধারণ করেছে।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতি মেট্টিক টন চাল ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ৩৯০ মার্কিন ডলারে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৩১ হাজার ৯৮০ টাকা। প্রতি মেট্টিক টনে সরকারকে ২ শতাংশ হারে শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ৬৭৬ টাকা। আর প্রতি কেজিতে শুল্ককর পড়ছে সাড়ে ৬৭ পয়সা।

আমদানিকারকের এলসি খরচ, ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি চালে আরও খরচ হচ্ছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। এই হিসাবে বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতি কেজি চাল ছাড় করাতে ক্রয় মূল্যসহ খরচ পড়ছে সর্বোচ্চে ৩৪  টাকা।  

আমদানিকারকেরা এই চাল বেনাপোল বন্দর থেকে বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ৫০ থেকে ৭০ পয়সা দরে। অর্থাৎ কেজিতে আমদানিকারকেরা লাভ করছেন ২ টাকা ৭০ পয়সা। খোলা বাজারে এই চাল সাড়ে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হবে বলে জানা গেছে।

বেনাপোল বন্দরের তাজমহল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আব্দুস ছামাদ জানান, বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত আমদানিকৃত চাল নিয়ে ভারতীয় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে প্রতিদিনের জন্য বাংলাদেশি আমদানিকারকদের ওই ট্রাককে ৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। আমদানি পণ্য দেরিতে খালাস হওয়ায় সেখানেও আমদানিকারকদের লোকসান গুণতে হয়। এসব কারণে আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করে তাহলে চালের মূল্য আরও কমে আসবে বলেও জানান তাজমহল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী।

চাল বহনকারী ট্রাকচালক আকাশ জানান, তিনি বেনাপোল থেকে চাল নিয়ে চট্টগ্রামে যাবেন। এজন্য ৩২ হাজার টাকা তিনি ভাড়া পাবেন। ভারতীয় ট্রাকচালক রমেশ দাস জানান, আগে তিনি কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আসতেন। এখন চালের আমদানি বেশি ও ভাড়া ভালো পাওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে কেবল চাল বহন করছেন।

বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক নেতা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, বাংলাদেশে বন্যার কারণে হঠাৎ করে ভারতীয় চালের আমদানি বেড়েছে। বন্দরের শ্রমকিরা এসব চাল দ্রুত খালাসের জন্য বন্দরে ২৪ ঘণ্টা জেগে কাজ করছেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করীম জানান, আমদানি শুল্ক কমবে শোনার পর অনেক ব্যবসায়ী বন্দর থেকে চাল খালাস নিচ্ছিলেন না। এজন্য কিছুটা যানজট দেখা দিয়েছিল। চাল খালাস শুরু হয়েছে, এখন জট কমে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এজেডএইচ/এএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।