ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বগুড়ায় চালের দাম আরও বাড়ার শঙ্কা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
বগুড়ায় চালের দাম আরও বাড়ার শঙ্কা বগুড়ার পাইকারি বাজার/ ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: কাঁচা মরিচের ঝাল সামান্য কমলেও পেঁয়াজ ও চালের দাম বেড়েই চলেছে। তবে গেল ১৫ দিনে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা তরিতরকারি, তেল, মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেড়ে বর্তমানে স্থির অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশ কিছু পণ্যের দাম আবারও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য উঠে আসে। কিন্তু ক্রেতা সাধারণ সবকিছুর বাড়তি দামে ক্ষু্দ্ধ।

 

শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকাল ৭টা। শহরের রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারের প্রবেশ পথের প্রধান সড়কের সামনে সারিবদ্ধভাবে ভোর থেকেই পণ্য বোঝাই একাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিলো। বেশির ভাগ ট্রাকে ছিলো পেঁয়াজ ও রসুন। একটু ফাঁকেই মহাজনরা ছোট চেয়ার টেবিল পেড়ে বসেছিলেন। শ্রমিকরা সেই পণ্য ট্রাক থেকে আনলোড করছিলেন। আর ভ্যানে ভরে সেগুলো স্ব স্ব ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।

আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীরা মহাজনের ঘর থেকে নানা ধরনের পণ্য কিনছিলেন। সেক্ষেত্রে দামদর করার কোনো সুযোগ নেই। পর্তায় হলে নেবেন না হলে ঘরের থেকে সরে যান অন্যকে পণ্য কেনার সুযোগ দেন বলে মহাজনের কর্মচারী খুচরা ব্যবসায়ীদের সোজাসাপ্টা জবাব দিয়ে দিচ্ছিলেন। এভাবেই চলতে থাকে এ দু’বাজারের বেচাকেনার কর্মযজ্ঞতা।  
 
রাজ ভান্ডারের মালিক রাধা বাবু, মেসার্স এমআর ট্রেডার্সের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় ভারতের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। দেশে আগাম বৃষ্টিপাত ও বন্যায় পেঁয়াজের অবস্থা একই। ফলে এ সময়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আসে। কিন্তু এবার আসছে না। যতটুকু আসছে তার দাম বেশি। রসুনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ঈদের কারণে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যোগ করেন ওই দুই ব্যবসায়ী। তাদের দাবি, বেশি দামে পণ্য কিনলেও লাভ আগের মতোই সীমিত করছেন। মাঝখানে বেশি পুঁজি খাটাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, পাইকারি প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৮-৫০ টাকা, এলসি পেঁয়াজ ৩৫-৩৮ টাকা, আঁদা ৪৫-৫০ টাকা, দেশি রসুন ৬৫-৭০ টাকা, এলসি রসুন ৪৫-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই বাজারে খুচরা প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা, এলসি পেঁয়াজ ৪০-৪২ টাকা, আঁদা ৫৫-৬০ টাকা, দেশি রসুন ৭৫-৮০ টাকা, এলসি রসুন ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।  

দেশি কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা থেকে কমে ৮০-৯০ টাকা ও এলসি মরিচ ৮০-৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো মরিচের কেজি ১০০-১০৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০-১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার পাইকারি বাজার/ ছবি: বাংলানিউজচাল ব্যবসায়ী মানিক, জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিনউজকে জানান, প্রতিকেজি বিআর-২৮ ধানের চাল ৪৮ টাকা, মিনিকেট চাল ৫০-৫২ টাকা, পাইজাম ৫২-৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৫-৮০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

মফিজ উদ্দিন, আবু হানিফসহ একাধিক চাল ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান,  চাহিদামতো ধান পাচ্ছেন না চাতাল ব্যবসায়ীরা। যাও পাচ্ছেন তা বেশি দামে কিনছেন। সবমিলে মোকামগুলোয় চাল পাওয়া গেলেও দাম বেশি। ব্যবসা টেকাতে বেশি দামেই চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে সীমিত লাভে চাল বিক্রি করছেন-এমনটা দাবি এসব ব্যবসায়ীদের।

কাঁচা তরিতরকারি ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, নবী উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিকেজি পটল ৩৩-৩৫ টাকা, পেঁপে ১৫-১৮ টাকা, তরি ৩০-৩২ টাকা, কাকরোল ৩২-৩৫ টাকা, করলা ৪৫-৫০ টাকা, বেগুন ৩৮-৪০ টাকা, হলেন্ডার আলু ১৮-২০ টাকা, পাকড়ি আলু ২২-২৫ টাকা, মিষ্টি লাউ ১৫-২০ টাকা, পুঁইশাক ১৪-১৫ টাকা, গাঁজর ৩৮-৪০ টাকা, টমেটো ১০০-১১০ টাকা, শসা ৩২-৩৫ টাকা, কচু ১৮-২০ টাকা, মুলা ৩২-৩৫ টাকা, লাল শাক ২৫-৩০ টাকা, পাট শাক ১৮-২০ টাকা দরে খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ১০০-১২০ টাকা লিটার হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।  

মাছ ব্যবসায়ী বেল্লাল, মালেক, প্রদীপ চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, প্রতিকেজি গোলসা ৪৫০-৫০০ টাকা, রুই ৩৫০-৩৮০ টাকা, কাতল ৩২০-৩৫০ টাকা, মৃগেল ২০০-২২০ টাকা, কই ২০০-২২০ টাকা, মাগুর ৫০০-৫৫০ টাকা, শিং ৫০০-৫৫০ টাকা, চেংড়ি ৪৫০-৫০০ টাকা, ইলিশ (ওজনের ওপর) ৪০০-৯০০ টাকা দরে বেচাবিক্রি হচ্ছে।
 
মাংস ব্যবসায়ী রবি, আব্দুল হাই, মুকুল বাংলানিউজকে জানান, প্রতিকেজি খাসির মাংস ৬৫০-৭০০ টাকা গরুর মাংস ৪৮০-৫০০ টাকা, বয়লার মুরগির মাংস ১২৫-১৩০ টাকা, পাকিস্তানি ১৮০-১৯০ টাকা, দেশি মুরগির মাংস ৩৪০-৩৬০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

আফরোজা বেগম, মুন্নি খাতুন, মাহবুব হোসেন, মাসুদ রানাসহ একাধিক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, সবকিছুর দামই বেশি। সব দোকানে সব পণ্যের একই দাম। কোনো কমবেশি নেই। দেখে মনে হয় যেন সবাই সিন্ডেকেট হয়ে ব্যবসায় নেমেছেন। ক্রেতাদের কিছুই করার নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।