ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘পশ’-একটি ফুটওয়্যার উদ্যোগের গল্প

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
‘পশ’-একটি ফুটওয়্যার উদ্যোগের গল্প ‘পশ’-একটি ফুটওয়্যার উদ্যোগের গল্প

ঢাকা: বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে মালেশিয়ার বেড়াতে গিয়েছিলেন আরিফ কামাল। ভালো লেগে যায়। থেকে যান সেখানেই। ‘লিংকলন ইউনিভার্সিটি’ থেকে ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতক শেষ করেন। পুরো ইউনিভার্সিটির সেরা ৭ জনের একজন এবং ‘মালয়েশিয়া ফ্যাশন উইক-এ তিনি সেরা তিনের একজন হয়েছিলেন।

তারপর দেশে ফিরে শুরু করেন ফুটওয়্যার ব্যবসা। একটি ব্যতিক্রমী ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে এখন মনোযোগী তিনি।

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর বাজারে তার ফুটওয়্যারের বড় চাহিদা তৈরি করতে চান তিনি।  

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার এক্সপোতে অংশ নিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান ‘পশ’। এটি বাংলাদেশের একটি নতুন ব্র্যান্ড। তবে মান আর গুণের দিক দিয়ে তারা নিজেদের আলাদা রাখতে চাচ্ছেন। সেটা এই এক্সপোর দেয়া স্টলের বাহ্যিক ডিজাইনে কিছুটা আঁচ করা গেলো। একটু ভিন্ন ভাবে পুরনো গাছের শিকড়ের ওপর জুতা সাজিয়ে রাখা ধরণ দেখা যাচ্ছে। আবার মিনি মিটিং টেবিলের ওপর কারুকাজময় কিছু একটা পাশে জুতার দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপন।  

...বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় সেখানেই বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে তার ব্যবসার শুরুর গল্প বললেন আরিফ কামাল। জানালেন, ‘পশ’ গড়ে তোলার শুরুর দিকের গল্প। ফ্যাশন ডিজাইনে পড়ালেখা করা আরিফ ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিকে কিভাবে জেনে-বুঝে এখন পুরোপুরি এ খাতের একজন ব্যবসায়ী হয়েছেন। ‘পশ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ কামাল।  

মাত্র আড়াই-তিন বছর আগে শুরু হয় জুতার দেশীয় কোম্পানি ‘পশ’। তবে যাত্রার গল্পটা আরও আগে থেকে। সেটা ২০০৯ সাল। মালেশিয়ায় ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতক শেষে দেশে ফিরেছেন। পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দা আরিফ কামালের বাবাও পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। কনস্ট্রাকশন, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ও টেক্সটাইলের ব্যবসা ছিলো তাদের। তখনই বাবার দিক থেকে তাগিদ পাচ্ছিলেন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে।

কিন্তু কি শিল্প কারখানা করবেন তিনি এটা নিয়েই অনুসন্ধান শুরু করেন। তখনই তার পড়ালেখার বিষয় ফ্যাশন ডিজাইন থেকে সরে গিয়ে নতুন একটি সম্ভাবনার খোঁজ পান আরিফ কামাল।

ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, কোন ব্যবসা শুরু করবো তার জন্য কিছু সার্ভে করছিলাম। অনেক কোম্পানির সিইও সঙ্গেও দেখা করলাম। পাশাপাশি শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দিলাম ওই সময়।

...খোঁজখোজি করতে গিয়ে দেখলাম- `ফোস’ নামে খ্যাতনামা একটি ফুটওয়্যার কোম্পানি যাদের ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অর্ডার বুকড হয়ে আছে। ফুটওয়্যারের যে ব্যাপক চাহিদা তখন বুঝতে পারি।

তখনই আমি ফুটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইলাম। শুরুতে আমরা ৩ জন বন্ধু মিলে ফুটওয়্যারের ব্যবসায় নামলাম। সেটা ছিলো খুব ছোট আকারে।

তিন বন্ধু মিলে অল্প টাকায় একটা ফ্যাক্টরি করে ফেললাম। ফ্যাক্টরির জিনিসপত্রের জন্য তখন চীনসহ কয়েকটি দেশে যাচ্ছিলাম। মেশিন টুলস কেমিক্যালসহ ফুটওয়্যার তৈরিতে যত ধরনের জিনিস লাগে তার একটা কোম্পানিও শুরু করলাম পুরান ঢাকাতেই।  

আরিফ বলেন, পুরান ঢাকায় প্রায় কুঁড়েঘরের মতো তিনশো ছোট ফ্যাক্টরি আছে। এসব ফ্যাক্টরির টেকনিক্যাল ও ক্যামিকেল সাপোর্ট আমরা দিতে থাকি। । এরপর অ্যাপেক্স, এফবি ফুটওয়্যার বে ফুটওয়্যার সহ কয়েকটি কোম্পানিকে কিছু মেশিনারিজ ও কেমিক্যাল সাপ্লাই দিতে শুরু করলাম। তখনও সেটা অত বড় আকারে ছিলো না।  
পশ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সালামন আমার ছোট বোনের স্বামী। তার বাবা আবার ৪০ বছর ধরে ফুটও্যয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওইখান থেকে ওরও মাথায় আসলো- ‘চলেন লেটস ডু সামথিং বিগ’। তারপরই শুরু হলো ‘পশ’। নামটা ওই পছন্দ করে রেখেছে। কারণ সে লন্ডনে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট পড়তে গিয়ে এই নামের বেশ প্রচলন দেখেছে।

তখন ঢাকার সাভারে শিল্প কারখানা জগতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা (রানা প্লাজা) ঘটলো। যা থেকে আমরাও সতর্ক হলাম। চিন্তা করলাম আমাদের ফ্যাক্টরি ভবনটা হবে অত্যাধুনিক। সব ধরনের নিয়ম এখানে মানা হবে। তখন আমাদের  বড় `কমপ্লাইনস’ বই পড়তে হলো। । ছোট ছোট ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করলাম। তারপর স্থপতিদের নিয়ে ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার প্লানে বসলাম। তাদের সঙ্গে আমাদের আইডিয়া শেয়ার করলাম। আমরা এখন শত ভাগ কমপ্লায়েন্স।  

ফ্যাক্টরির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘৫ বিঘা জমির ৪৫ ভাগ কারখানা স্থাপনার জন্য ব্যবহার করেছি। আলাদা রয়েছে ডে কেয়ার সেন্টার, ক্যান্টিন, মসজিদ ইত্যাদি।  
‘এখন কিছু বড় বিদেশী ক্রেতা এবং লোকাল বায়ারদের সঙ্গে সাব কন্ট্রাক্ট হিসেবে কাজ করছি। আমাদের দিনে ২ হাজার জোড়া জুতা তৈরি করতে পারি। ’- বলেন আরিফ কামাল।

আরও দুই-আড়াই মাস পরে ফ্যাক্টরির চারটি ফ্লোরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার জোড়া জুতা তৈরিতে সক্ষম হবো।  

জুতার ডিজাইনের ক্ষেত্রে আরিফ কামালের প্রতিষ্ঠান পশ-এর রয়েছে ইন হাউজ ডিজাইন। যেখানে ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর একটা সুযোগ পাচ্ছেন আরিফ কামাল নিজেও। তার পড়ালেখার বিষয়ের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় এ টিমে তিনিও সরাসরি যুক্ত।

ফ্যাক্টরিতে একটি টেস্টিং ল্যাব করা হবে। যেখানে বিশ্বমানের জুতা তৈরির কারখানায় পরিণত হবে তার পশ। টেস্টিং ল্যাব দিয়ে একটি জুতা কতবার স্টেপ ফেলা যাবে তা যাচাই করে দেখা যাবে।
আরিফ কামাল বলেন, ‘আমি এবং আমার এমডি আমরা দু’জন সব সময় ডিফারেন্ট চিন্তা করছি। এটাকে বলতে পারেন-‘আউটসাইড দ্যা বক্স। ‘

তিনি বলেন, ‘কাউকে কপি করছি না। আমাদের মেশিনারিজগুলো সিলেক্ট করছি ওয়ান টু ওয়ান। নিজে টেস্ট করে মেশিন নিয়ে এসেছি। সবগুলো মেশিনারিজ কোরিয়া ও থাইওয়ান এবং ইতালি থেকে আনা।

পশ-এর এ কর্মকর্তা পর্যায়ে ২৫জনসহ জনবল এখন ১০০ জনের মতো। দুই মাস পরে কারখানা নির্মাণ শেষ হলে জনবল ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে।

চারটা ফ্লোরের নিচতলা থেকে লেদার ঢুকবে, তারপর কাটিং করে তার ওপরে সুইং হয়ে নিচে ট্র্যাকে উঠে জুতা বের হয়ে যাবে।  
নিকট ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা উদ্যোগ নিয়ে এগুচ্ছেন আরিফ কামাল। ফুটওয়্যারের পাশাপাশি ক্রাফটও যোগ হচ্ছে। সেই সঙ্গে অনলাইনে ফুটওয়্যারের একটি বড় বাজার গড়ে তুলবেন তিনি। বর্তমানে অনলাইন মার্কেটের মতো না হয়ে একটি অনলাইন মার্কেটে নতুন ধারার প্রবর্তন করবে। যা এখনও প্রকাশ করছেন না তিনি।

আগামী নভেম্বরে ফুটওয়্যারে লেদার এক্সপো থেকে তার অনলাইন মার্কেটেরও যাত্রা শুরু হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
এসএ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।