ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা মানছে না ব্যবসায়ীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
পাট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা মানছে না ব্যবসায়ীরা পাট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা মানছে না ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: দেশের ১৭টি পণ্য সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু বিভিন্ন অসুবিধার দোহাই দিয়ে সরকারের এ আদেশ মানছেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

এর আগে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা- ২০১৩ সংশোধন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
 
সেখানে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনে, আলু, আটা, ময়দা এবং তুষ-খুদ-কুঁড়া এই ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।



কিন্তু মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রাজধানীর হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান, কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্দেশিত পণ্যগুলোর মধ্যে, চাল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দা, হলুদ, রসুন আদাসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিকের বস্তাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা মানছে না ব্যবসায়ীরা
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে সব পাটের বস্তা বা ব্যাগ রয়েছে সেগুলো নিম্ন মানের। আবার এসব ব্যাগ সব জায়গায় পাওয়াও যায় না। এছাড়া বড় বড় কোম্পানি তাদের পণ্য এখনো প্লাস্টিকের মোড়কেই বাজারজাত করছে। এজন্য প্রান্তিক ব্যবসায়ীদেরও ওই মোড়কেই বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসিআই কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য এবং সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য এখনো প্লাস্টিকের ব্যাগেই মোড়কীকরণ করা হচ্ছে। বাজারে তীর আটা, ময়দা, চিনিসব কিছুই বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়কে। একই ভাবে এসিআই চাল, আটা, ময়দাও বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়কে।

এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ‘মায়ের দোয়া’ স্টোরের মালিক রাজু বলেন, কোম্পানিগুলো এভাবে প্লাস্টিকের বস্তায় ডাল, আটা, ময়দা, চিনি পাঠায়। আমরা কি করবো?

একই এলাকার জব্বার স্টোরের মালিক জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, পাটের ব্যাগে ক্ষতি বেশি হয়। পাটের বস্তায় ১০০ বস্তা চালে ৫০ কেজি চাল নষ্ট হয়। এখনকার বস্তাগুলো একটু চাপ পড়লেই ফেটে যায়।
পাট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা মানছে না ব্যবসায়ীরা
তবে পাটের ব্যাগের মান উন্নত করে এটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা সম্ভব বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ১৯৮৭/৮৮ সালে ৮৫ কেজি চিনির বস্তা ছিলো পাটের। ওই বস্তাগুলো অনেক মজবুত ছিলো। তখন যদি ৮৫ কেজি চিনি পাটের বস্তায় রাখা যায় তাহলে এখন ৫০ কেজি কেন রাখা যাবে না- প্রশ্ন করেন ওই ব্যবসায়ী।
 
এদিকে চলতি বছর পাট ব্যাগ ব্যবহারের পক্ষে এবং প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১৫ মে থেকে সপ্তাহব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর পরেও বড় বড় কোম্পানিগুলো এভাবে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করায় কর্তৃপক্ষের তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
 
বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান আদনান বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে তো পলিথিন ছাড়া কোনো পণ্যই নাই। একটা সময় পলিথিন বিরোধী অভিযান শুরু হলে বিকল্প অনেক ব্যাগ বাজারে এসেছিলো। কিন্তু এখন সেগুলোও হারিয়ে গেছে। মানুষতো ভুলেই গেছে যে পলিথিন বিরোধী কোনো আইন বাংলাদেশে আছে!
পাট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা মানছে না ব্যবসায়ীরা
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচায্য এবং যুগ্মসচিব (পাট-৩) গৌতম কুমার ভট্টাচার্য সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই এব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
তবে মন্ত্রণায়ের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আদালতের আদেশে কিছু আইনি জটিলতার কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষথেকে দ্রুতই আইনি বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানায় ওই সূত্র।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
এসআইজে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।