ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

বৃষ্টিতে ব্যয় বাড়ছে গবাদিপশু পালনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
বৃষ্টিতে ব্যয় বাড়ছে গবাদিপশু পালনে বৃষ্টিতে ব্যয় বাড়ছে গবাদিপশু পালনে- ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি। আবার দিন-রাতভর থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিতে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া বেশ কষ্টের।

বর্ষাকালে গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরা।

গৃহপালিত পশুগুলোকে বাধ্য হয়েই খাওয়াতে হচ্ছে অতিরিক্ত খড় ও কুড়া-ভুষি।

দিনের পর দিন বাইরে থেকে চড়াম‍ূল্যের এসব খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করে ব্যয় বাড়ছে ওই সব গৃহপালিত পশুগুলোর পেছনে।

লাগাতার বৃষ্টিতে একদিকে যেমন গৃহপালিত পশুগুলোর খাদ্য সংকট দেখা দেয় অপরদিকে আবার চাহিদা না থাকার কারণে দাম কমে যায় গাভীর দুধের। এতে করে চরম হতাশায় পড়ে যান খামারিরা।

মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলার প্রতিটি উপজেলাতেই গবাদিপশু পালনের খামারি রয়েছেন। নিজেদের কৃষি জমির ঘাস ও বাড়ির খড় দিয়েই এসব গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা পূরণ করেন এসব খামারিরা।

তবে লাগাতার বৃষ্টি বা বর্ষার সময় গবাদিপশুর খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে বাইরে থেকে চড়ামূল্যে সংগ্রহ করতে হয় গবাদিপশুর খাবার। এতে করে বিপাকে পড়ে যান এসব কৃষি প্রধান পরিবারের খামারিরা।

জেলার দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের গইল্যা গ্রামের আব্দুর রহিম মিয়া বাংলানিউজকে জানান, কোরবানি ঈদের সময়ে বিক্রির জন্যে দু’টি ষাঁড় গরু পালন করছেন তিনি। এতে করে ওই ষাঁড় দু’টিকে সকালে ও বিকেলে কুড়া, ভ‍ুষি ও খৈল খাওয়াতে হয়।

দিনের অন্যান্য সময়ে ঘাস ও খড় খাওয়ান তিনি। কিন্তু বৃষ্টি হলে সারাদিনই খড় আর কুড়া-ভুষি খাওয়াতে হয়। এতে করে ষাঁড়গুলো পালনে বেশ খরচ বেড়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাটুরিয়া উপজেলার গওলা এলাকার চাল ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছরই কোরবানি ঈদের সময় বিক্রির জন্যে ৩/৪টি করে ষাঁড় পালন করেন তিনি। প্রতিটি ষাঁড়ের জন্য সকাল-বিকেলের দুই বারে মোট তিন কেজি ভুষি, তিন কেজি কুড়া ও ২৫০ গ্রাম খৈল খাওয়ান তিনি।

এতে করে প্রতিটি ষাঁড়ের পেছনে তার প্রতিদিন ব্যয় হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া  ঘাস ও বাড়ির খড় খরচেরও আলাদা একটি ব্যয় রয়েছে। তবে ঝড় বা বৃষ্টি হলে প্রতিদিন প্রতিটি ষাঁড়ের পেছনে তার দ্বিগুণ খরচ হয় বলেও যোগ করেন তিনি ।

একই উপজেলার মহিষালোহা এলাকার ফিরোজ মিয়া জানান, কৃষি কাজ করে টাকা জমানোর তেমন কোনো উপায় নেই। সারাদিন জমিতে কাজ করতে হয়। বাড়িতে দুই একটি গরু থাকলে ওই জমির ঘাস ও খড় আর অল্প কিছু বাড়তি খাবার হলেই হয়ে যায়।

বাড়িতে একটি গাভী থাকলে দুধ বিক্রি করে সংসার খরচের চাহিদা মিটানো যায় অনায়াসে।

অপরদিকে প্রতি বছর একটি করে ষাঁড় পালন শেষে বিক্রি করতে পারলে একসঙ্গে অনেকগুলো টাকা পাওয়া যায়।

যা কিনা সঞ্চয় বা মূলধন হিসেবে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। তবে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের কারণে গবাদিপশুর পেছনে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হতে থাকলে অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে তা বিক্রি করে দেন বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফরহাদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, জেলায় সাড়ে চার লক্ষাধিক গবাদিপশু রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় তিন লাখ গাভী ও বাকিগুলো ষাঁড়।

জেলার প্রায় প্রতিটি কৃষি প্রধান পরিবারেই দুই থেকে একটি করে গবাদিপশু রয়েছে। নিজেদের কৃষি জমিতে কাজের পাশাপাশি তারা ওই গবাদিপশুগুলো পালন করেন। তবে একসঙ্গে থেমে থেমে অনেকদিন বৃষ্টি বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে এসব গবাদিপশুর পেছনে খামারিদের খরচের পরিমাণটা একটু বেড়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭

এএটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।