ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

আশির্বাদের শসায় কপাল পুড়ছে কৃষকের!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
আশির্বাদের শসায় কপাল পুড়ছে কৃষকের! আশির্বাদের শসায় কপাল পুড়ছে কৃষকের!- ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: আবু তাহের পেশায় একজন কৃষক। অন্য পেশা জানা নেই তার। ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাকে। কৃষিকাজের ওপর ভর করে চলে তার সংসার। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আইল পুনিয়া গ্রামে বসবাস করেন তিনি।

শসা চাষ করে গেল বছর বেশ আয় করেছিলেন। সেই আশায় বুক বেঁধে এবারও তিন বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছিলেন কৃষক আবু তাহের।

হাইব্রিড জাতের শসার ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু দামে প্রচণ্ড মার খাচ্ছেন তার মত শসাচাষিরা। গত বছরের আশির্বাদের শসায় এবার কপাল পুড়ছে তাদের।

শসা চাষি আবু তাহের বাংলানিউজকে জানান, গত মাসে প্রতিমণ শসা ২শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে একই পরিমান শসা বাজারে ৩শ’ ৫০ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা দরে বেচাবিক্রি চলছে। অথচ একই শসা গেল বছরের এ সময়ে কম করেও ৮শ’ টাকা মণ দরে হিসেবে বিক্রি হয়েছে।

তিনি জানান, বিগত বছরের লাভ দেখে এবার বেশি জমিতে শসা লাগিয়েছি। ফলনও ভাল হয়েছে। লোকসানও গুণতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ।

এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এই চাষি। তারই মতো অধিক মুনাফা লাভের আশায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের আইল পুনিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা ব্যাপকহারে শসার চাষ করেছেন। এখন এ শসা তাদের জন্য অনেকটা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম পাচ্ছেন না। এতে করে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনই উঠছে না।
আশির্বাদের শসায় কপাল পুড়ছে কৃষকের!- ছবি: বাংলানিউজ

শসা চাষি হারুনুর রশিদ ও ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বিগত বছরগুলোয় এই শসা কৃষকদের জন্য আশির্বাদ ছিল। শসা বিক্রি করতে কৃষকদের কোন টেনশন করতে হয়নি। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা এসে জমি থেকে শসা কিনে নিয়ে গেছেন। শসা চাষ করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। অথচ এবারের চিত্রটা একেবারে ভিন্ন।

এসব চাষিরা জানান, বাজারে শসা নিয়ে গেলে কেউ যেন দামই করতে চায় না। নেড়েচেড়ে দেখে অন্যদিকে চলে যান পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা। আধা মণ বা এক মণ শসা বিক্রি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজারে অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে শসাচাষিরা লোকসানের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তা মুহা. মুশিদুল হক বাংলানিউজকে জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নানা ধরনের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ উপজেলার কৃষকেরাও শসা চাষে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছেন। ফলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাম্পার ফলন হয়েছে শসার।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, শসার ফলন ভাল হয়েছে। বাজার প্রচুর আমদানি হচ্ছে। এ কারণে শসার দাম পড়ে গেছে। শসায় চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

তবে শসা চাষে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করলে কৃষকের কীটনাশক খরচ কমবে। পাশাপাশি মৌসুমের আগে হিসেব কষে কৃষকদের শসাসহ প্রত্যেক ফসল উৎপাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আগামজাতের ফসল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই কৃষক সহজেই লাভবান হতে পারবেন বলে জানান মুহা. মুশিদুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।