ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ব্যাংকিং

বাংলাদেশ ব্যাংককে থোড়াই পরোয়া, সুদ কমেনি ক্রেডিট কার্ডে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৯ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৭
বাংলাদেশ ব্যাংককে থোড়াই পরোয়া, সুদ কমেনি ক্রেডিট কার্ডে প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ‘ইলেকট্রনিক মানি’ খ্যাত ক্রেডিট কার্ডের সুদহার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া নির্দেশ থোড়াই পরোয়া করছে ব্যাংকগুলো। গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা জারি করে ২০১৭ সালের ১১ মে দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর প্রায় একমাস পার হলেও ওই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়নি।

উল্টো ওই নীতিমালার কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তা সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে আবেদন করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
 
এ বিষয়ে এবিবির চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থ‍াপনা পরিচালক আনিস এ খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে জিজ্ঞেস না করেই একটি নীতিমালা জারি করেছে।

কয়েকটি বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে, সেগুলো সংশোধন করা হলেই বাস্তবায়ন করা হবে।
 
“ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যাংক ইস্যু করা এক ধরনের বিশেষ পরিশোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ক্রেডিট কার্ড। এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয় করে মূল্য পরিশোধ করে থাকেন কার্ডের বাহক। দেশে কার্যরত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই স্থানীয় এবং মাস্টার কার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক কার্ড গ্রাহককে সরবরাহ করে থাকে। ”
 
সাধারণ মানুষ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পণ্য কেনেন, আর ব্যাংকের কাছে ক্রেডিট কার্ডই একটি পণ্য। ব্যাংক এই পণ্যের বিপরীতে বিশাল অংকের বার্ষিক সেবা মাসুল (চার্জ) আদায় করে। এসব মাশুল আদায় করার বিষয়টি গ্রাহককে কার্ড দেওয়ার আগে কখনোই অবহিত করা হয় না।
 
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কার্ড দেওয়ার আগে চার্জ আদায়ের বিষয়টি গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা না করা এক ধরনের প্রতারণা। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাস্তবায়ন না করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। .
এ কার্ড ব্যবহার করলে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া পরিশোধ করতে হয়। পরিশোধে ব্যর্থ হলেই গুণতে হয় চড়া সুদ। অন্যান্য ঋণের সুদের হার বার্ষিক হারে আরোপিত হলেও ক্রেডিট কার্ডে সুদ দিতে হয় মাসিক ভিত্তিতে। ব্যাংক ভেদে ২ দশমিক ৫০ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সেই হিসাবে ক্রেডিট কার্ডে বার্ষিক সুদহার দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশে।
 
সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার বর্তমানে ১০ শতাংশের নিচে থাকলেও কমেনি ক্রেডিট কার্ডের সুদ। ক্রেডিট কার্ডের এই চড়া সুদের রাশ টানতে ২০১৭ সালের ১১ মে একটি নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোক্তা ঋণের সুদহারের চেয়ে ৫ শতাংশের বেশি আদায় করা যাবে না ক্রেডিট কার্ডের সুদ। সে হিসাবে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ।
 
জারির দিন থেকে কার্যকরের কথা থাকলেও বাস্তবায়ন না করে উল্টো একই বছরের ২৯ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালায় আপত্তি জানিয়ে গভর্নর বরাবর একটি আবেদন করেছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ।
 
আবেদনে এবিবি বলছে, ক্রেডিট কার্ড কোনোভাবেই ঋণ পণ্য না। কার্ডটি মূলত জীবনধারা বদলে দিতে পারে এমন সেবা। এ জন্য কার্ডধারীদের নানা ধরনের ছাড় দেওয়া হয়। এরমধ্যে বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, পাঁচতারকা হোটেলে খাওয়ায় ছাড়ের এই সুবিধা দেশের বাইরে বিদেশেও পাওয়া যায়। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, গ্রাহকদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। কার্ডের বিপরীতে কোনো ধরনের জামানতও রাখা হয় না।
 
দেশি-বিদেশি ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে আসবাবপত্র, রেফ্রিজেটর, এয়ারকন্ডিশনার, টেলিভিশন, প্লেনের টিকিট কেনার অফার দিলেও ঋণ পরিশোধের বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য উল্লেখ করে না। উপরন্তু লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছে বিলম্ব পরিশোধ ফিসহ চড়া সুদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, জুন: ৫, ২০১৭
এসই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।