ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

উন্নত পরীক্ষাগারের অভাবে সমস্যায় ওষুধ শিল্প

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
উন্নত পরীক্ষাগারের অভাবে সমস্যায় ওষুধ শিল্প ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বায়োইকুভ্যালেন্স পরীক্ষার কোনো সুযোগ না থাকায় দেশে উৎপাদিত জেনেরিক ড্রাগ সরাসরি বিদেশে রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে রফতানিকারক কোম্পানিগুলো অন্য দেশ থেকে বায়োইকুভ্যালেন্স পরীক্ষা করিয়ে এনে জেনেরিক ড্রাগ রফতানি করছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এমনকি গজারিয়ার নতুন ওষুধ শিল্প পার্কেও আধুনিক ওষুধ গবেষণাগার বা গবেষণা ও সেবার অবকাঠামো নেই। ফলে ওষুধের ক্লিনিক্যাল গবেষণা সুবিধাদিও সৃষ্টি হচ্ছে না।

পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদনের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।

তবে রাজধানীতে ‘ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ ডিভিশন’ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সীমিত পরিসরে নতুন ওষুধ উদ্ভাবন, কাঁচামালের সংশ্লেষণ, উৎপাদন প্রক্রিয়া, মান নিয়ন্ত্রণ, নতুন ও কার্যকরী গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে আসছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাহিদা অনুসারে গবেষণা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এসব কারণে ওষুধের কাঁচামাল সংশ্লেষণ, উদ্ভাবন ও মানোন্নয়নের কাজ সফল হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের সুনাম বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ওষুধের দেশীয় বাজার বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার,  যার ৯৮ শতাংশই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে।   ভ্যাকসিন, ক্যান্সার, ইনসুলিনসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত ওষুধও তৈরি হচ্ছে এদেশে।

বিসিএসআইআর’র চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে গাছপালাসহ ওষুধ তৈরির অন্যান্য কাঁচামাল রয়েছে। কিন্তু সেসব কাঁচামালের উপযোগিতা নির্ণয়ের গবেষণাগার ‘ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট’ নেই। ফলে অনেক কাঁচামালের ব্যবহার করা যায় না।   ৮০ শতাংশ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আমদানি করায় ওষুধ তৈরির ব্যয়ও অনেক বেশি’।

‘আবার তৈরি ওষুধের সঠিক মান পরীক্ষার তেমন কোনো গবেষণাগারও নির্মিত হয়নি। ফলে অনেক উন্নত দেশে আমরা ওষুধ রফতানি করতে পারি না’।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, প্রতি বছর ওষুধে রফতানি আয় বাড়ছে। গত ৬ বছরে ৪২০ কোটি টাকা রফতানি আয় বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ওষুধ রফতানি আয়ই ছিল ৮ কোটি ডলার বা প্রায় ৭০৪ কোটি টাকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, কানাডা, স্পেন, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, মরক্কোসহ বিশ্বের ১২৭টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড, নোভারটিস (বিডি) লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস্‌ লিমিটেড, ইনসেপ্টা ফার্মা লিমিটেড ও স্কয়ার ফার্মা লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম ওষুধ রফতানিকারক  প্রতিষ্ঠান।

তবে পরীক্ষাগারের অভাবে সম্ভাবনা থাকলেও আরও অনেক ওষুধ রফতানি করা যাচ্ছে না। ফলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ রফতানির মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে ওষুধ বাণিজ্যের ১০ শতাংশ দখল করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, তা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।