ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ধরাছোঁয়ার বাইরে লাইসেন্সধারী ৩৪ মিলার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
ধরাছোঁয়ার বাইরে লাইসেন্সধারী ৩৪ মিলার! বগুড়ার একটি রাইস মিল

বগুড়া: বগুড়ায় চলতি বোরো মৌসুমে সরকারকে চাল দেওয়া নিয়ে গড়িমসি অব্যাহত রেখেছেন লাইসেন্সধারী মিলাররা। চাল দেওয়ার ব্যাপারে গত শনিবারের (২০ মে) মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দিনক্ষণ থাকলেও তা বাড়িয়ে বুধবার (৩১ মে) পর্যন্ত করা হয়েছে। তবুও সাড়া মিলছে না মিল মালিকদের।

এ পর্যন্ত সরকারকে চাল দিতে জেলার ১ হাজার ৯শ’ ৩৫ জন মিলারের মধ্যে মাত্র ৩শ’ ৯৮জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে সেদ্ধ চালের মিলার ৩শ’ ৯১ জন ও ৭জন আতপ চালের মিলার।

চুক্তি অনুযায়ী এসব মিলারের ১১ হাজার ৫শ’ ৭৮ মেট্রিক টন চাল দেবার কথা। তার মধ্যে আতপ চালের পরিমাণ ১শ’ ৯৯ দশমিক ৪৬০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত মোট ৬২ দশমিক ৯৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা গেছে।

তবে বিভিন্ন সুবিধাভোগী বড় লাইসেন্সধারী অটোমেটিক রাইস মিল মালিকরা চাল দেবার ব্যাপারে সরকারকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। এ জেলায় বড় মাপের প্রায় ৩৫ জন মিলারের মধ্যে মাত্র ১জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ৩৪জন রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

লোকসানের ঠুনকো অভিযোগ তুলে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন না এসব মিলার। অথচ ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী সিংহভাগ চালের বরাদ্দ পেয়েছেন তারা।

বুধবার (২৪ মে) জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারিভাবে এ জেলায় মোট ৬৮ হাজার ৮শ’ ৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে সেদ্ধ চালের পরিমাণ ৬২ হাজার ৪শ’ ২৯ মেট্রিক টন ও আতপ চাল ৬ হাজার ৩শ’ ৭৯ মেট্রিক টন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর প্রতিকেজি সেদ্ধ চালের দাম ৩৪ টাকা ও আতপ চালের দাম ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের দাম বেশি হওয়ায় এই মূল্যে চাল দিলে লোকসান গুণতে হবে –এমন অজুহাত তুলে সিংহভাগ মিলার সরকারের সঙ্গে এখনো চুক্তিবদ্ধ হননি।

জেলা ও উপজেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা লাইসেন্সধারী মিলারদের সঙ্গে মিটিং করেও বেশির ভাগ মিলারকে চুক্তিবদ্ধ করাতে এখনো সম্মত করাতে পারেননি। বিশেষ করে এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন জেলার ৩৫জন মিলার। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী এসব মিলের অনুকূলে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, অটোমেটিক রাইস মিলের ক্ষেত্রে আগে ছাঁটাই ক্ষমতা ছিল ৮ ঘণ্টা। সে হিসেবে মিলগুলো বিভিন্ন সময় আসা সরকারি সুযোগ সুবিধ কম পাচ্ছিল। পরে আন্দোলন করে এসব মিল মালিকরা ছাঁটাই ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬ ঘণ্টা করেন।
লাইসেন্সধারী এসব মিলাররা সরকারি সুযোগ সুবিধা ষোল আনা ভোগ করে থাকেন। কিন্তু লোকসানের গন্ধ পেলেই যেন নাক সিটকাতে থাকেন তারা। এবারো তার ব্যক্রিতম ঘটেনি। সরকারকে চাল দিতে ধরা দিচ্ছেন না এসব মিলার। অথচ তারাই সিংহভাগ বরাদ্দ নিয়ে আছেন।

এর মধ্যে শেরপুর উপজেলায় অবস্থিত মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ১ হাজার ৬শ’ ৬৮ দশমিক ৩৬০ মেট্রিক টন, শিনু অ্যাগ্রোফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ৮শ’ ৩৪ মেট্রিক টন, আলাল অ্যাগ্রোফুড প্রোডাক্টস ৬শ’ ৩০ মেট্রিক টন চাল ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু সরকারকে চাল এসব মিল মালিক একদমই পাত্তা দিচ্ছেন না।
শেরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হারুন-উর-রশিদ বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, লাভের বেলায় এসব মিলের মালিকরা সবার আগে এগিয়ে থাকেন। কিন্তু লোকসানের গন্ধ পেলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, এখনো তো সময় রয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে লাইসেন্সধারী মিলারদের চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তির করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে সবাই চুক্তির কাজ সম্পন্ন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই নেতা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বড় মিলারদের মধ্যে সদর উপজেলার বাহার অটোমেটিক রাইস মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অন্য কোনো বড় মিলমালিক এখনো চুক্তিবদ্ধ হননি। বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করা হচ্ছে। দেখা যাক শেষ অবধি কি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭

এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।