ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধে সবজি মোকামে ধস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধে সবজি মোকামে ধস ক্রেতাশূন্য সবজির বাজার। ছবি: আরিফ জাহান

শিবগঞ্জের (বগুড়া) মহাস্থান ঘুরে:  বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া সাতশিমুলী গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান। বেশ কয়েক বিঘা জমিতে চাষ করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির সবজি। তার মধ্যে রয়েছে মুলা। ক্ষেতের সেই মুলা বিক্রি করতে এসেছিলেন ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান বাজারে।

মুলা ভর্তি ভ্যান নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতেই কৃষক ওবায়দুরের চোখের মণি যেন উল্টে ওঠে। সবজি ভান্ডারখ্যাত মহাস্থান মোকাম যেন ব্যাপারী শূন্য।

দু’একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই ব্যাপারী না থাকার কারণ জানতে পারেন এই কৃষক। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হওয়ায় কিছুই করার ছিল না তার। বাড়িতেও ফিরে নেওয়া সম্ভব ছিল না এতোগুলো মুলা।

শেষমেষ কি আর করা। কেউ ভ্যানের কাছে এলেই জিজ্ঞাসা করেন, ভাই মুলা নেবেন? তাও কি ক্রেতা মেলে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ব্যাপারী আতাহার আলীর কাছে তুলে দেন মুলাগুলো। মাত্র ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন সেই মুলা। যা গেল দু’দিন আগেও ৪-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতাশূন্য সবজির বাজার।  ছবি: আরিফ জাহান
সাত দফা বাস্তবায়নে উত্তরবঙ্গ ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অধিকার আদায় বাস্তবায়ন কমিটির ডাকা কর্মবিরতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে সবজি ভান্ডারখ্যাত বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান মোকামে।

পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় স্থানীয় ব্যাপারীরা সবজি কিনছেন না। আবার দূর-দূরান্তের ব্যাপারীও আসতে পারছেন না। সাধারণ ক্রেতার উপস্থিতিও একেবারে নগণ্য। অর্ধেক দামেও কেউ কোন সবজি কিনতে চাচ্ছেন না। সবাই যেন হাত-পা গুঁটিয়ে বসে রয়েছেন।
 
ভ্যান ভর্তি মূলা নিয়ে অনেক বিক্রেতা ব্যাপারীর অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। মিষ্টি কুমড়ার ত্তূপের ওপর বসে পড়েছেন অনেক বিক্রেতা। বরবটি নিয়ে বিক্রেতারা রয়েছেন একই সমস্যায়। করলা, ঝিঙা, তড়িসহ নানা ধরনের সবজি বাজারের নির্ধারিত স্থানে রেখে বিক্রেতাদের কেউ দাঁড়িয়ে, আবার কেউবা বসে রয়েছেন। কিন্তু পুরো মোকাম যেন ক্রেতা শূন্য!ক্রেতাশূন্য সবজির বাজার।  ছবি: আরিফ জাহান

শিবগঞ্জের আচলাই গ্রামের জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি ক্ষেত থেকে তরতাজা করলা নিয়ে এসেছেন বিক্রি করতে। কিন্তু মোকামে এসে দেখেন, করলা কেনার পরিচিত ব্যাপারীরা নেই। পরে স্বল্প দামে একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে করলাগুলো বিক্রি করেন।

বগুড়া সদর উপজেলার নামুজার বামনডাঙা গ্রামের সবজি চাষি আকতার আলী বাংলানিনউজকে জানান, ব্যাপারী না থাকায় ২০-২৫ টাকা পিচের মিষ্টি কুমড়া মাত্র ৮-১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। অন্যান্য সবজি অর্ধেক বা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায়।

বাংলানিউজকে তারা জানান, সবজি ভাণ্ডারখ্যাত মহাস্থান মোকামে সবজির বাজারে ধস নেমেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সবজির বাজার শেষ অবধি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল।

মহাস্থান হাটের ইজারাদার আজমল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বাজারে আগের মতোই বিভিন্ন জাতের সবজির পর্যাপ্ত আমদানি ঘটছে। কিন্তু পণ্যবাহী যান চলাচল না করায় ব্যাপারী আসছে না। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছি।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।