ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যাংকিং খাতে দক্ষকর্মীর অভাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
ব্যাংকিং খাতে দক্ষকর্মীর অভাব ব্যাংকিং খাতে দক্ষকর্মীর অভাব

ঢাকা: ব্যাংকিং খাত যেভাবে বড় হচ্ছে সেভাবে দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না। শীর্ষ পর্যায়ে অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। নিয়োগের পর দেওয়া হচ্ছে না প্রশিক্ষণও।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিআইবিএম মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা বলেন প্যানেল আলোচকগণ।

 ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালার উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত যেভাবে বড় হচ্ছে সেভাবে দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না। ব্যাংকের লাভ-লোকসানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসলেও মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তন না আসলে ব্যাংক চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।

রাজি হাসান বলেন, ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকিং পেশার বাইরে থেকে এনে বিভাগীয় প্রধান করা হচ্ছে। যাদের ব্যাংকিং ইন্ড্রাস্ট্রি সর্ম্পকে কোনো ধারণা নেই। এতে নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগের কারণে ব্যাংকিং খাতে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে নতুন নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব কর্মকর্তাতাদের আগে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা করা দরকার।  

তিনি বলেন, ব্যাংক পরিবর্তনের সময় কর্মকর্তাদের নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ভালো ভাবে কাজ করলেও চাকরি ছাড়ার আগে অভিযোগ তোলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব বিষয় ত্যাগ করতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সার্বিক ব্যাংকিং খাত এখন দুই ধারায়। সরকারি ব্যাংক একধারায়, বেসরকারি ব্যাংক আরেক ধারায়। কোনো ব্যাংকের ভালো আর্থিক অবস্থা থাকার পরও মানবসম্পদ ভালো না হলে কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাংক শেষ হয়ে যেতে পারে। বেসিক তার অন্যতম প্রমাণ। বেসিক ব্যাংক এক সময় শ্রেষ্ঠ ব্যাংক ছিল। খেলাপি ঋণ ছিল ২ শতাংশ। সেই ব্যাংকটিকে কিছু লোক কয়েকদিনের মধ্যে শেষ করে দিয়েছে। কাজেই মানবসম্পদ খুবই গুরুত্বপ‍ূর্ণ। ব্যাংকের জিএম বা এজিএমের চেয়ে শীর্ষ কর্মকর্তার সততাই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ব্যাংকের লভ্যাংশ কর্মকর্তাদের দেওয়া উচিত। যদিও মালিকরা না দিতে অর্থমন্ত্রণালয়ে ধরনা দিয়েছে। জনগণের করের টাকায় সরকারি ব্যাংকে মূলধন যোগান দেওয়া হলেও তা লুটপাট হচ্ছে অথচ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।  
কর্মকর্তাদের চাকরি ছাড়াও অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সব ব্যাংকের একটি নীতিমালা থাকা উচিত বলে মনে করে ইব্রাহিম খালেদ।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকে অনেক লবিস্ট রয়েছে। এদের কারণে ব্যাংকে অনেক পদ সৃষ্টি করতে হয়। যা পুরোপুরি ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তারা লবিং করে নিয়োগ পেতে চায়।

অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অসৎ কর্মকর্তা নিয়োগ পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সবাইকে নৈতিকতা মেনে চলার আহ্বান জানান।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি এহসানুল হক বলেন, এতো তদবির আসে যে, অনেক সময় সঠিক নিয়োগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। কোনো ব্যাংকে সঠিক এইসআর পলিসি নেই। থাকলেও তার চর্চা নেই। গ্রাম পর্যায়ের শাখা ব্যবস্থাপকদের ব্যাপক সেচ্চাচারিতা লক্ষ্য করা যায়।

ওয়ান ব্যাংকের অতিরিক্ত উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন সরকার বলেন, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। জনবল নিয়োগে পারিবারিক ঐহিত্য দেখতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্য কমাতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এসই/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।