ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দানবাক্সে কয়েন না দিতে ইমামের অনুরোধ

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
দানবাক্সে কয়েন না দিতে ইমামের অনুরোধ মসজিদের দানবক্সে কয়েন নয় (ছবি: সংগৃহীত)

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরও বাণিজ্যিকব্যাংকগুলো ধাতব মুদ্রা নিচ্ছে না, এমন একটি অভিযোগ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলো এসব মুদ্রা না নেওয়ায় সাধারণে এ নিয়ে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। 

প্রচলিত ও সম্পূর্ণ বৈধ এসব মুদ্রার প্রতি অনীহা দেখাচ্ছেন অনেকেই। ব্যবসায়ীরা দোকান-পাটে এই কয়েন নিতে চান না।

ফলে যাদের হাতেই ধাতব কয়েন রয়েছে তারা বিপাকে পড়ছেন।  
  
এবার এমন ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে মসজিদে ধাতব মুদ্রা (কয়েন) দান না করতে অনুরোধ করেছেন রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বর কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) জুম্মার নামাজের খুতবা পাঠের আগে মসজিদের খতিব মুফতী রিয়াজতুল্লাহ কাসেমী মুসল্লীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার একটা আরজ আছে। আপনারা সকলেই সব সময় মসজিদের কল্যানে দান করে থাকেন। দানের ক্ষেত্রে আমরা মসজিদের কয়েন (ধাতব মুদ্রা) না দেই। ’

তিনি বলেন, ‘সবার দানে মসজিদে অনেক কয়েন জমা হয়। কয়েন নিয়ে খাদেমদের হয়রান হতে হয়। কয়েন বাজারের দোকানে নিতে চায় না, কেউ নিতে চায় না। ’

মসজিদ সূত্রে জানা যায় খুচরা দান বাবদ প্রতি শুক্রবার মসজিদে ১০/১১ হাজার টাকা আসে। যার বড় একটা অংশ ধাতব মুদ্রা।  

মিরপুর ১৩ নম্বরের এই মসজিদের মুসল্লী গোলাম সাকালাইন  বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। আমরা দোকানদারকে কয়েকটা কয়েন দিতে চাইলে নিতে চায় না। সেখানে মসজিদের দান বাক্সে কত কয়েন জমা হয় সেগুলো তারা কিভাবে চালাবেন। ’

ব্যাংকগুলোও কয়েন নিতে চায়না বলে জানান তিনি। একই অভিযোগ ব্যবসায়ীদেরও। তারা বলছেন, সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে তারা কয়েন নিতে চান না, কারণ সে কয়েন তারা ব্যাংকে দিতে পারেন না।

জনসাধারণের স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু লেনদেন অব্যাহত রাখতে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোন ব্যাংক ধাতব মুদ্রা না নিলে জরিমানা করার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সর্বশেষ গত নভেম্বরের শুরুতে এই সার্কুলার জারির পরও অবস্থার উন্নতি দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, ৩/৪ দিন আগে ব্র্যাক ব্যাংকে কয়েন দিতে চাইলাম নিলো না। বলে তাদের ভল্টে নাকি জায়গা নাই। কোন ব্যাংক ধাতব মুদ্রা নিতে চায় না। আমি বললাম ভল্টে যে জায়গা নেই কিভাবে বুঝবো। আপনারা সবাই বলেন জায়গা নেই কয়েন নেয়া যাবে না।

তিনি জানালেন, এহেন পরিস্থিতিতে কয়েন প্রতি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষতি মেনে কমিশনে কয়েন বিক্রি করেন অনেকেই। ১ লাখ টাকার কয়েন ৯০ হাজার টাকা, ৮৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন এমন ঘটনা তার ক্ষেত্রেই রয়েছে বলে জানান আব্দুল জব্বার।  

তিনি বলেন, ব্যবসার কারণে আমাদের কয়েন নিতে হয়। কিন্তু এই কয়েনগুলো আটকা পড়ে থাকে। ধাতব মুদ্রায় লেনদেনের ভোগান্তির কারণে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের মূলধনের একটা অংশ অলস পড়ে থাকে। কোন কাজে লাগাতে পারছি না।

বাজারে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১, ২ ও ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা রয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের ছোট শাখাগুলোকে ১, ২ ও ৫ টাকার নূন্যতম ১০ হাজার পিস করে এবং বড় শাখাগুলোকে নূন্যতম ৩০ হাজার পিস করে ধাতব মুদ্রা রাখার নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে। এর বেশি ধাতব মুদ্রা বা কয়েন জমা পড়লে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে পারবে।

এর আগেও ব্যাংকগুলোকে ধাতব মুদ্রাসহ ছোট নোট নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পরেও বাজারে কয়েন নিয়ে জটিলতা থেকেই যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
এমইউএম/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।