ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শুল্ক কমাতে সরকারকে বাধ্য করতেই চালের বাজারে অস্থিরতা

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
শুল্ক কমাতে সরকারকে বাধ্য করতেই চালের বাজারে অস্থিরতা গ্রামীণ চালের মোকামে ক্রেতার অপেক্ষায় খুচরা বিক্রেতারা; ছবি- আরিফ জাহান

ঢাকা: চাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কমাতেই কৃত্রিম ভাবে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছে সরকার। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মূল হোতা ধরার মিশনে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়ে গঠিত যৌথ কমিটি।

এজন্য এরইমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করা আমদানিকারকদেরই প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুল্ক কমানোর আবেদন নাকচ করেছে ট্যারিফ কমিশন।

সরকারি নানা উদ্যোগে দ্রুতই চালের দাম কমে আসবে বলে মনে করছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর ও কক্সবাজারের একশ্রেণীর আমদানিকারক চালের বাজার অস্থিতিশীল করার মূল হোতা। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, খুলনা, শেরপুর এবং ময়মনসিংহের এক শ্রেণীর মিল মালিকরা। এই সংঘবদ্ধ চক্রটির কলকাঠি নাড়ানোতেই সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মিনিকেট, নাজিরশাইল এবং মোটা চালের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে পছন্দসই মিনিকেট বোরো মৌসুর চাল। নতুন বোরো মৌসুম শুরু হতে আর মাত্র মাস খানেক সময় আছে। তাই এ চালের দর একটু বাড়তেই পারে। কিন্তু গত তিন মাসে এ চালের বাজার কেজিতে ১২ টাকা পর্যন্ত বাড়ার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে আর একটি জনপ্রিয় চাল নাজিরশাইল আমন মৌসুমের। আমন মৌসুম শেষ হয়েছে মাত্র কিছুদিন হলো। দেশে আমনের উৎপাদনও এ বছর অন্য সময়ের মৌসুমের চেয়ে ভালো। যে কারণে এ চালেরও কোন সংকট নেই। ফলে হঠাৎ করে বাজার অস্থিতিশীল হওয়া কাম্য ছিলো না।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামিমা ইয়াসমিন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম। এরইমধ্যে চালের বাজার স্থিতিশীল করার জন্য ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে চাল আমদানির শুল্ক কমানোর আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ট্যারিফ কমিশন সে আবেদন নাকচ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এমনিতেই বিভিন্ন মহল থেকে চালের দাম বাড়ানোর দাবি উঠেছিলো কৃষককে ন্যায্য মূল্য দেওয়ার জন্য। যেন উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষক লাভের মুখ দেখতে পারে। কিন্তু এখন যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে কৃষকের কোন লাভ নেই। একদিকে মিল মালিকরা বেশি দামে চাল বিক্রি করে দ্রুত মুনাফা তুলে জনগণের পকেট কাটছে, অন্যদিকে আমদানিকারকরা বাজার স্থিতিশীলতার কথা বলে চাল আমদানির শুল্ক কমানোর গো ধরছে। কিন্তু দেশে চালের কোন সংকট নেই। বরং চাহিদার তুলনায় মজুত রয়েছে অনেক বেশি।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চালের দাম জনগণের নাগালে আনতে এরই মধ্যে সরকার কিছু কর্মসূচি বেগবান করেছে। এর মধ্যে ১০ টাকা কেজি চালের কর্মসূচি জোরালো হয়েছে এবং সারা দেশে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসূচিও চালু হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর বাদামতলি, বাবুবাজার চালের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের জুনের তুলনায় বর্তমানে মিনিকেট চালের পাইকারি দর বেড়েছে কেজিতে ১৪ টাকা। ২০১৬ সালের জুনে প্রতিকেজি মিনিকেট পাইকারি দরে ৩৬ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিকোচ্ছে ৫০ টাকায়। এ জন্য অবশ্য ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দায়ী করছেন। তাদের দাবি মোকামেই মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছে কেজিতে ১২ টাকা।

এ বিষয়ে, কুষ্টিয়ার তৃপ্তি চালকলের মালিক আবুল হোসেন জানান, মিনিকেট চালের মজুত বলতে গেলে কারো কাছেই নেই। এ কারণে দাম বেড়েছে। এক মাসের মধ্যে নতুন ধান উঠলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।

তবে নাম না প্রকাশের শর্তে বাদামতলির একাধিক চাল ব্যবসায়ী জানান, দাম কমাতে হলে চালের আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। গত বাজেটের আগে চাল আমদানি শুল্ক ছিলো ১০ শতাংশ। তখন মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর সাহস দেখাননি। কারণ, আগে ভারত থেকে বাসমতী, মিনিকেট, স্বর্ণাসহ বিভিন্ন ধরনের চাল আমদানি হতো। চলতি বাজেটে আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানোয় চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ব্যবসায়ীদের কৌশলের কাছে সরকার কৃষকের স্বার্থ তুলে দেবে না। কারণ শুল্ক কমালেই বানের জলের মতো ভারতীয় চাল ঢুকে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে। কারণ এক মাস পরেই বোরো মৌসুম শুরু হবে। তখন চালের বাজার মন্দা থাকার কৌশলকেই ধানের দাম কমানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে মিল মালিকরা।

উল্লেখ্য, দেশে চালের মজুত বেশি থাকায় সরকার (২০১৬-২০১৭) বাজেটে চাল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চাল আমদানিকে অনুৎসাহিত করে।   এর আগে এ শুল্ক ছিলো ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
আরএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।