ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শ্রীলঙ্কার কর বাধায় পিছিয়ে বাংলাদেশের রফতানি

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
শ্রীলঙ্কার কর বাধায় পিছিয়ে বাংলাদেশের রফতানি

ঢাকা: বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা বাণিজ্যে গত চার বছরই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার রফতানিও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। আর বাংলাদেশের রফতানি কমছে বছরে ১৫ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত।

শ্রীলঙ্কা সরকারের কর বাধায় দুই দেশের বাণিজ্যে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।

গত ৯ বছরের বাণিজ্যের পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ৫ বছর রফতানি বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও গত টানা চার বছর শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের ঘাটতির সমান।



২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় রফতানি করেছে ২৩ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে সেদেশ থেকে আমদানি করে ৩৯ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলারের। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার ও ৬৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয় ২৩ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলার ও ৪৪ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৫ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার ও ৪৫ মিলিয়ন ডলার। এ বছর দেশটিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিলো ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে চাল, কৃষিপণ্য, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, কাগজ, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক, আসবাবপত্র, ফার্মাসিউটিক্যালের। পণ্যের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় রফতানি বাণিজ্য বরাবরই বাংলাদেশের পক্ষে ছিলো। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানিতে এখন ভাটা পড়েছে।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, শ্রীলঙ্কা সরকার সেদেশে পণ্য রফতানিতে শুল্ক বাধা তৈরি করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ বারবার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিলেও শ্রীলঙ্কা বিষয়টিকে তার দেশের বাণিজ্যিক নিরাপত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এ বাধা দূর করতে গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত সচিব পর্যায়ে সমঝোতা ছাড়া অগ্রগতি বলতে সামান্যই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুন্সী সফিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এফটিএ’র বিকল্প নেই। কিন্তু দেশটি তাদের কলম্বো ও হামবানটোটা বন্দর ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকারার  বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে মজবুত বাণিজ্যিক সম্পর্ক চাই। শ্রীলঙ্কা সরকার আমাদের দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় অন্যান্য দেশের মতোই কিছু নীতি গ্রহণ করেছে। এতে হয়তো সাময়িকভাবে বাংলাদেশের রফতানিতে তা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়ে গেলে তা আর থাকবে না। বরং এতে দুই দেশের বাণিজ্যই লাভবান হবে’।

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের কলম্বো এবং হামবানটোটা বন্দর ব্যবহার করতে পারেন। আমরা বন্দর দু’টি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করেছি। এতে দুই দেশেরই বাণিজ্য অনেকাংশে বাড়বে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সিঙ্গাপুর, হংকং বা থাইল্যান্ডের বন্দর ব্যবহারের তুলনায় আমদানি-রফতানি খরচের সঙ্গে সময় কমবে কমপক্ষে তিনদিন’।

হাইকমিশনার বলেন, শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ীরা এদেশে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করেছেন। অনেকে বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল, জাহাজ নির্মাণ, তৈরি পোশাক ও আইটি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন’।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি পণ্যের মান অনেক উন্নত। এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে দুই দেশেরই রফতানি কয়েকগুণ বাড়বে’।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা এফটিএ করতে চলেছি।   এটি হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা এক দেশ অন্য দেশকে সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি’।

মন্ত্রী বলেন ‘আমরা শ্রীলঙ্কায় ওষুধ, কাগজ, সিমেন্টসহ অনেক কিছু রফতানি করতে পারি। কিন্তু ডিউটির উচ্চতার কারণে সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ব্যাপারে আরও নমনীয় হতে আমরা একমত হয়েছি’।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
আরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।