ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ব্যাংকিং

নিয়ন্ত্রণহীন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অবৈধ ব্যয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
নিয়ন্ত্রণহীন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অবৈধ ব্যয়

ঢাকা: বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কড়াকড়ি অবস্থান এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চলমান তদন্তের পরও নতুন করে অবৈধ ব্যয়ে জড়িয়ে পড়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে গ্রাহকদের কষ্টে উপার্জিত এবং শেয়ার হোল্ডারদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের অর্থ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যয় করে চলেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানটি।

বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি অনুসারে বিমা কোম্পানি প্রথম বর্ষে ব্যবসার জন্য ব্যস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে।

কিন্তু কোম্পানিটি ২০১৬ সালে এ আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে। যা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিমা বিধির লঙ্ঘন।

 
অথচ এ টাকার ৯০ শতাংশের পাওনাদার পলিসি হোল্ডার আর বাকি ১০ শতাংশের পাওনাদার শেয়ার হোল্ডাররা।
 
কোম্পানির তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আইনি সীমা অনুসারে ব্যয় করতে পারতো ৩৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্তু তার চেয়ে ৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে। এর আগের বছরও অর্থাৎ ২০১৫ সালে অবৈধ খরচ দেখিয়েছিলো ৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
 
এদিকে বিমা কোম্পানিটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের কারণেপলিসি হোল্ডার এবং শেয়ার হোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত বছরের মতোই এবারও গত মাসে কোম্পানিটির এমডিকে তলব করেছে আইডিআরএ। শুনানিতে ভবিষ্যতে ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কোম্পানিগুলোকে হুঁশিয়ার করা হয়।
 
গত বছরও একই কারণে হুঁশিয়ার করেছিলো আইডিআরএ। সেই সঙ্গে অতীতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে সমন্বয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আইডিআরএ’র কাছে তথ্য রয়েছে, কোম্পানি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনার নামে অতিরিক্ত ২০০ কোটি ৫১ লাখ টাকা করেছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালে ৪৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
 
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে করা অতিরিক্ত ব্যয়ের পিছনে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের জুনে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধানী টিম গঠন করা হয়। টিমের অপর সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন। এখনো দুদকের অনুসন্ধান চলমান।

দুদক ও আইডিআরএ’র এমন উদ্যোগের পরও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরেনি কোম্পানিটি। অতীতের অতিরিক্ত ব্যয় সমন্বয় করা তো দূরের কথা, ২০১৬সালে ব্যয়ের লাগাম নির্ধারিত সীমায়ও ধরে রাখতে পারেনি।
 
এছাড়াও কোম্পানিটির ২০১২, ২০২৩ এবং ২০১৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে অনিয়ম ধরতে বিশেষ নিরীক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে আইডিআরএ।
 
আইডিআরএ’র কাছে অভিয়োগ রয়েছে, বিমা কোম্পানির ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ আইনের তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভুয়া এজেন্টের নামেকমিশন গ্রহণ, ভুয়া বিনিয়োগ এবং অবৈধভাবে ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলে বিভিন্ন কৌশলে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এছাড়াও ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে কোটি টাকা ভ্রমণ এবং নিজস্ব ব্যক্তিদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।   আইডিআরএ’র বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অথচ সব কিছু ঠিক থাকার পরও গ্রাহকদের বিমা দাবির নিষ্পত্তি করেনি।
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে কোম্পানির এমডি হেমায়েত উল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।