ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ব্যাংকিং

রিজার্ভ চুরির বাকি অর্থ ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৭
রিজার্ভ চুরির বাকি অর্থ ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের কিছু উদ্ধার হলেও বাকিটা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। উদ্ধার হওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়া একবছর প‍ার হলেও অর্থের অবস্থান শনাক্ত ও মামলা ছাড়া কোন অগ্রগতিই হয়নি।

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ চুরির এক বছর শেষ হচ্ছে, কবে নাগাদ বাকি অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন করিয়েছি। এফবিআই-ফায়ারআইর মত প্রতিষ্ঠান বিষয়টি তদন্ত করেছে।


তিনি আরও বলেন, আমরা মামলা করেছি। তদন্ত চলমান আছে। টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যক্রম আছে। বাকি অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সুইফট এবং ফেডের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
 
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইর্য়কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে সাইবার অপরাধীরা। ফিলিপ‍াইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হয় এ অর্থ।
 
এর মধ্যে আদালতের নির্দেশে ফিলিপাইনের ইস্টার্ন হাওয়াই (বিনোদন কেন্দ্র) নামে এক ক্যাসিনোর প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল ম্যানেজার কিম অং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিল মামলায় ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছেন। তা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইর্য়কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে।
 
কিম অং  এর কাছে থাকা আরও  ৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে তার নাগরিকত্ব বাজেয়াপ্ত করার মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) কাছে জমা ছিল। তা ফেব্রুয়ারি মাসেই আরসিবিসি বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দিয়েছে।
 
ফিলিপাইনের সোলাইর রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে গেছে ২৮ মিলিয়ন ডলার। যদিও এরমধ্যে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার ক্যাসিনো কর্তৃপক্ষ ফেরত দিতে রাজি হয়েছে। বাকি অর্থ ক্যাসিনোর খেলোয়াড়রা নিয়ে গেছেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশটির আদালত এই ক্যাসিনোর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে।
 
স্থানীয় রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেমের কাছে থাকা বাকি ১৭ মিলিয়ন ডলার কাউকে না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখেছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিল ফিলারেমের মালিক ও কমপ্লায়েন্স অফিসারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের ও অর্থ উদ্ধারে নাগরিকত্ব বাজেয়াপ্ত করার মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এসব মিলিয়ে ৬৫ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার হলেও বাকি ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার কোথায় আছে তার সর্বশেষ অবস্থান সর্ম্পকে নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র বলছে, ১৫ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার হলেও বাকি অর্থ শনাক্ত এবং যেসব অ্যাকাউন্টে আছে তা ফ্রিজ করে মামলা করা ছাড়াও আর কোন অগ্রগতিই হয়নি। এখন মামলা যে গতিতে শেষ হবে, টাকাও তত দ্রুত ফেরত আসবে। কারণ কোন দেশের আদালতের উপর কারও হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। আদালত চাইলে দ্রুতই মামলা নিষ্পত্তি করে দ্রুতই আমাদের টাকা ফেরত দিতে পারে।
 
তবে হদিস না পাওয়া ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে অন্যান্য সকল উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির পর রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে স‍ূত্র জানায়। এছাড়াও প্রয়োজনে আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক “সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন” (সুইফট) এর বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 
শুভঙ্কর সাহা আরও বলেন, রিজার্ভ চুরির পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সুইফটের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের প্রটোকল পরিবর্তন করা হয়েছে। এখান থেকে নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে অর্থ ছাড় না করে সেজন্য তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইটি সিকিউরিটি স্পেশালিষ্ট নিয়োগ দিয়েছি।
 
এছাড়াও  বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তাকে আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সকল ব্যাংকের সাইবার সিকিউরিটি জোরদারকরণে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দুইদিনের কর্মশালা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবকাঠামো ডে
ভেলপ করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।