ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজারের অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দুষছেন ব্যবসায়ীরা

করিমুল বাশার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১১
বাজারের অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দুষছেন ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: সরকারের ২৯ টাকা দরে চাল কেনার ঘোষণাই চালের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে বলে মন্তব্য করছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে চিনির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরকারকেই দূষছেন তারা ।



এছাড়া দুসপ্তাহ আগে পাইকারি ও খুচরা বাজারে একটি পণ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখা যেত ২-৪ টাকা। কিন্তু এখন সে পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪-৬ টাকা। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ৬ মে থেকে সরকার চালের অবাধ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। তবে ধান চাষ ভাল হলে বিভিন্ন সময়ে রপ্তানি অনুমতি দিয়েছে সরকার।

ইপিবি থেকে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিভিন্ন সময়ে চাল রপ্তানি হয়েছে ২০ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) ১০ মাসে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৯ হাজার টাকার।

ইপিবি থেকে আরও জানা যায়, চিনির রপ্তানি ২০০৯-১০ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ২৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার হলেও ২০১০-১১ অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) ১০ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬২ হাজার টাকার।

বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়া ও চালের রপ্তানি কম হওয়ার পরও বাজারে চালের দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের আড়তদার ইত্যাদি রাইচের মালিক জামাল (৪২) বাংলানিউজকে জানান, ‘সরকারের ২৯ টাকা দরে চাল কেনার ঘোষণার কারণেই চালের দাম কমছে না। ’

তিনি বলেন, ‘বাজারে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৭ টাকা দরে। এ দাম আরো কমে আসতো। কিন্তু সরকার মোটা চালই যদি ২৯ টাকা দরে কিনে, তবে মিনিকেট চালের দাম আর কমবে কেন। ’

এ ঘোষণার পর মিলাররা চাল আটকে রাখছে বলে জানালেন তিনি। সেই সঙ্গে চালের দাম জুন থেকে আরও বাড়বে বলেও মন্তব্য করলেন তিনি।

অন্যদিকে, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে মিনিকেটের (রশিদ) ৫০ কেজি চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০ টাকায়। অর্থ্যাৎ প্রতি কেজি ৪১ টাকা। কিন্তু কারওয়ান বাজারে একই চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা। অর্থ্যাৎ কেজি প্রতি ৪৬ টাকা।

ফলে দেখা যাচ্ছে, কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটে একই চালের মধ্যে দামের তারতম্য ৫ টাকা। যা আগে ছিল ২-৩ টাকা।

এর কারণ কি তা জানতে চাইলে কাওরান বাজারের জনতা রাইচের মালিক হানিফ (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে গাড়িভাড়া কম ছিল। যে কারণে চাল আনার খরচ কম হতো। এখন গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণেই দামের এ তারতম্য। ’

অন্যদিকে, চিনির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চিনির আড়তদার মুক্তার ট্রেডার্সের মালিক সর্পরাজ (৪৮) বাংলানিউকে জানান, ‘সরকারের চিনির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কারণেই চিনির দাম বাড়ছে। তাছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়াচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ’

প্রসঙ্গত, গত ৩১ মে পাইকারি পর্যায়ে চিনি দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার। আগে মিল থেকে প্রতি টন চিনি বিক্রি হতো ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু ৩১ মে থেকে তা বাড়িয়ে করা হয় ৫৩ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ প্রতি টনে বাড়িয়েছে ৮ হাজার টাকা।

চিনির দাম প্রসঙ্গে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ নেপালের বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৬৩ টাকা, ভারতে ৫৫ টাকা (ভ্যাট ব্যতীত), বাংলাদেশে ৬০ টাকা। ওই হিসেবে দাম ঠিকই আছে। ’

বিশ্ব বাজারের দামের সাথে সামঞ্জস্য না হলে দুর্নীতি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যেটুকু মজুদ করার কথা বলেছে আমরা তা মজুদ করেছি। ’

মজুদের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এটা যদি প্রকাশ করা হয় তবে অভ্যন্তরীণ সরবরাহকারীরা একটু ভীত হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।