নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আদমজী ইপিজেডে (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) অবস্থিত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ইপিক গ্রুপের গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর জের ধরৈ শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
ইপিজেড সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে ইপিক কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানাগুলো বন্ধের একটি নোটিশ প্রতিষ্ঠানের মূল ফটটে ঝুলিয়ে দেয়।
সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে নোটিশ দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এসময় তারা ইপিজেডের বাইরে বিক্ষোভ মিছিল করলে তাদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে দুই দফা হামলা চালায় বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও মৃদু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের কারণে দুই দফা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। শ্রমিকরা এসময় কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। এসময় উভয় পক্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, আওয়ামীলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসী ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকের পক্ষ নিয়ে শ্রমিকদের ওপর এ হামলা চালায়।
এ ঘটনায় ইপিজেডে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইপিজেড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, আনসার ও আমর্ড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানান, ইপিজেডে অবস্থিত ভারতীয় মালিকানাধীন মেসার্স ইপিক গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স কোম্পানি লিমিটেডের ইপিক-১ ও ইপিক-৩ নামের দু’টি রপ্তানিমুখী শিল্প ইউনিট রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সম্প্রতি ইপিক-১ ইউনিটে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার থেকে ইপিক গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নোটিশে বলা হয়, পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুকূলে না থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কয়েক শ শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিল করে ইপিজেড মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেন। এসময় তারা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এসময় প্রায় ১০ মিনিট ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাস্তা অবরোধকারী শ্রমিকদের শান্তভাবে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামীলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসী যুবক লাঠিসোটা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়। এসময় কয়েকজন শ্রমিককে শাসিয়ে দেয় সন্ত্রাসী যুবকরা। একপর্যায়ে তারা শ্রমিকদের ধাওয়া দেয়। এতে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
ইপিজেডের মূল ফটক থেকে ধাওয়া খেয়ে শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে ১০টায় অবস্থান নেয় নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায়। সেখানেও অপর একটি গ্রুপের সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা নিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এসময় শ্রমিকদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ফের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে ৫-৬টি যানবাহন ভাংচুর করে। সংঘর্ষের কারণে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এপর্যায়ে প্রায় ১৫ মিনিট ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকাল ১১টায় শ্রমিকেরা রাস্তা থেকে সরে ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। পরে আবারো যান চলাচল শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত এক শ্রমিক জানান, ইপিজেডের মূল গেটে যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম ও সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় সদ্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল থেকে রেড ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারকৃত আওয়ামীলীগের নামধারী সন্ত্রাসী নূর হোসেনের লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। মালিকপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে এসব সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
এদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আলম মোল্ল¬া বাংলানিউজকে জানান, বুধবার সংঘর্ষের পর ইপিক গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন। নোটিশ দেখে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এসময় শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
প্রসঙ্গত বুধবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ইপিক গ্রুপের শ্রমিকদের সংঘর্ষে নারী সহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১১