মতিঝিল এলাকা থেকে : অর্থমন্ত্রী ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের একের পর এক আশ্বাসেও কাজ হয়নি। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর দরপতনের বিভীষিকা চলছেই।
মতিঝিল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে চলছে তাদের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙ্চুর। এককথায় পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। বিভিন্ন অলিতে গলিতে ও ভবনে বিনিয়োগকারীরা অবস্থান নিয়ে পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল ছুড়ছেন। পুলিশও টিয়ারশেল ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছে।
বিনিয়োগকারীরা দুপুর ২টার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)সংলগ্ন নিপুনা সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালালে পাউবো’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশ এগিয়ে আসলে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে।
পল্টন ও মতিঝিল থানা সূত্র জানায়, ভাঙ্চুরসহ বিক্ষোভের ঘটনায় ডিএসই ও মধুমিতা ভবনের কাছ থেকে ৩৮জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের দাবি সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের ৫ সদস্য আহত হয়েছে।
এদিকে দৈনিক বাংলা এলাকা থেকে আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিক্ষোভকারীরা অর্থমন্ত্রী, এসইসি, ডিএসই’র কর্তা ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবি জানান। পাশাপাশি খুব শিগগিরই শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনার দাবিও জানান তারা।
সোমবার লেনদেনের শুরুতেই ডিএসই সূচক ৪০০ পয়েন্টের বেশি নেমে গেলে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে।
মধুমিতা ভবনের প্রবেশমুখে লাগানো আগুন ভবনের তারের সঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। দৈনিক বাংলার মোড় থেকে আর এ কে মিশন পর্যন্ত ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙ্চুরের ঘটনা ঘটে।
সবমিলিয়ে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী মারমুখী। অনেক ব্রোকারেজ হাউজেও হামলা-ভাঙ্চুর চালিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। মধুমিতা ও ডিএসই ভবনের বাইরের কাচও ভাঙ্চুর করে তারা। ছবি তোলার সময় মোহনা টিভির ক্যামেরাম্যান কালামকে মারধর করে বিনিয়োগকারীরা। কয়েকজন বিক্ষোভকারীও আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশ গুপ্ত জানান, শেয়ারবাজারের ব্যাপক দরপতনের ঘটনায় চট্টগ্রামে পৌনে ১২টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে শত শত বিনিয়োগকারী। তারা নগরীর শেখ মুজিব রোডে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ভবনের সামনে এবং অদূরে আগ্রাবাদ মোড়ে বিক্ষোভ করে।
ঘটনাস্থলেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউস সাময়িকভাবে ট্রেড বন্ধ করে দেয় বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
সিলেটেও বিক্ষোভ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তাহজীব হাসান। তিনি জানান, দরপতনের ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা দুপুর ১টার দিকে শহরে ডিএসই’র অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে তারা জিন্নাহ বাজারের দিকে চলে যান। তারা অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগেরও দাবি জানান।
উল্লেখ্য, সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসই’র প্রধান সূচক ৪৭৪ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৫২ পয়েন্টে নেমে আসে, যা গত বছরের ২৫ মে’র চেয়ে নিচে। গত বছরের ২৫ মে ডিএসই’র প্রধান সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৯৮৮ পয়েন্ট। এক ঘণ্টার ব্যবধানে সবক’টি কোম্পানির দরপতন হয়। ডিএসই’র সাধারণ সূচক নেমে যায় ৩১৪ পয়েন্টে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। ডিএসই’র সামনের রাস্তা প্রায় তিনঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বিনিয়োগকারীরা।
গত সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে চারদিনই পুঁজিবাজারে দরপতন হয়। গড়ে সাধারণ সূচক কমে ৫৯৮ পয়েন্ট।
অর্থমন্ত্রী এ সপ্তাহেই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলে উল্লেখ করলেও তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১