ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

জনতা ও রূপালী ব্যাংকের বৈঠক শুক্রবার

সোহেল রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১১

ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ও রূপালী ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আগামী শুক্রবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রীয় ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।


 
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি একই স্থানে সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে গভর্নর ও অর্থসচিবসহ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ চার ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পরিচালকদের সরাসরি হস্তেেপর অভিযোগ এনেছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পরিচালকরা ব্যাংকের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড যেমন: ঋণ অনুমোদন, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব প্রকট এবং পরিচালনা পর্ষদ যথাযথ ভূমিকা পালনে সম হচ্ছে না।

এ অবস্থায় চার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপ ও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আসন্ন বৈঠককে সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি চলছে রূপালী ও জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে। তবে এ অবস্থার মধ্যেও সক্রিয় রয়েছে ব্যাংকের তদবির চক্র।

বাংলানিউজ’র প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিনের কক্ষে পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নামের একটি তালিকায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষর নিতে আসেন দুই কর্মকর্তা। কিন্তু তালিকা দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।

তালিকায় ‘নামের সিরিয়ালে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং বলেন, ‘তোমরা আমাকে চিট করছ। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কৈফিয়ত দিতে হবে। ’

সেইসঙ্গে নতুন তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দেন তিনি।

ব্যাংকের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এই ব্যাংকে কোনও মূলধন ঘাটতি নেই। ’

বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে ব্যবস্থাপক কাজী নেয়ামত উল্লাহ ভালো বলতে পারবেন। ’
 
অন্যদিকে আসন্ন বৈঠককে সামনে রেখে জনতা ব্যাংকে চলছে জরুরি অডিট। কথা বলার ফুরসৎ নেই কারও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আসন্ন বৈঠককে কেন্দ্র করে সবাই ব্যস্ত।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে ব্যাংক চারটির সার্বিক পরিস্থিতিরও সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং মানদণ্ডের কোনও সূচকেই ব্যাংকগুলোর তেমন উন্নতি নেই।

তবে চারটি ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকের অবস্থা তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো। এরপরেই অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকের অবস্থান। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রূপালী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার কর্তৃক ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণ করা হলেও ব্যাসেল-২’র শর্ত পূরণে ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি রয়ে গেছে।

ব্যাসেল-২’র আওতায় এখন সোনালী ব্যাংকের ১৪৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, জনতার ৫৬৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, অগ্রণীর ৩৫৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা ও রূপালীর ২২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। অথচ এই ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলোর কোনও কার্যকর পদপে নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর সেবার মান ও উপার্জন মতা বাড়েনি। প্রতিটি ব্যাংকের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে। অনেক শাখা লোকসানি এবং প্রতিটি ব্যাংকের বাজার ঝুঁকি সংবেদনশীলতা নিম্ন পর্যায়ে।

ব্যাংক চারটির ঋণ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে আয়ও কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণ কয়েকটি নির্দিষ্ট খাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিধি না মেনে দ্রুতগতিতে ঋণ অনুমোদন দিয়ে তা ছাড় করানোর ঘটনাও ঘটছে।

এসব ঋণের হিসাব বর্তমানে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত দেখানো হলেও অদূর ভবিষ্যতে মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণীকৃত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।